দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দিন যত সামনে এগুচ্ছে বরিশাল সিটি করপোরেশেনের (বিসিক) ত্রাণ সহায়তার ব্যাপ্তি ততই বাড়ছে। নগরের ছোট-বড় বস্তি বা কলোনিগুলোতে বসবাসকারী কর্মহীন অসহায় ও ‍দুস্থদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শেষ। এবার নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভেতরে বসবাসকারী কর্মহীন অসহায় ও ‍দুস্থ মানুষদের তালিকা করে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চের শেষদিকে নগরের ৪০ হাজার অসহায় ‍ও দুস্থ মানুষের মধ্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেন বিসিক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তার এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রথমদিকেই নগরের প্রায় ১৬টি ছোট-বড় বস্তিতে এ খাদ্য সহায়তা দেওয়া শুরু হয়। বস্তিতে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার পর এখন ওয়ার্ড পর্যায়ে কর্মহীন অসহায় মানুষদের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর তালিকাও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে মাঠ পর্যায়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলরা।

তারা জানান, মেয়রের নির্দেশনা মোতাবেক প্রকৃত অসহায়দের তালিকা করা হয়। জনসমাগম এড়াতে ওই তালিকা অনুযায়ী পরবর্তীতে সিটি করপোরেশেন কর্মীরা এসে খাদ্য সহায়তার প্যাকেট ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন। এসময় সার্বিক কাজ দেখভালের জন্য কাউন্সিলরদের সঙ্গে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত থাকেন।

এভাবে রোববার (১২ এপ্রিল) পর্যন্ত বরিশাল নগরের প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের কাছে এ খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেটগুলো গত ২৯ মার্চ থেকে নগরের কালিবাড়ি রোডস্থ সেরিনিয়াবাত ভবন অর্থাৎ মেয়রের বাসভবনের পেছনের মাঠে বসে প্রস্তুত করা হচ্ছে। যার মধ্যে ১০ কেজি করে চাল, পাঁচ কেজি আলু ও দুই কেজি মসুর ডাল থাকছে।

খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেটগুলো মেয়রের বাসভবনের পেছনের মাঠে বসে প্রস্তুত করা হচ্ছে।এদিকে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকার ছুটি ঘোষণা করার পর বিসিক কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাদের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি হটলাইন চালু করেন। নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বাজারকেন্দ্রিক চালু করা হয়েছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা।

সেই সঙ্গে নগর নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি শুরু থেকেই নগরের অলিতে-গলিতে জীবাণুনাশক স্প্রে করার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। এরপর মশক নিধনে মশার ওষুধ (স্প্রে) ও নগরজুড়ে ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ যেসব নির্ধারিত জনবলের মাধ্যমে সম্পাদন করা হচ্ছে, সেসব কর্মীদের নিরাপত্তায় বুট জুতো, গ্লাভস ও মাস্ক দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি চিকিৎসক রবিউল ইসলাম।

আর এসব কাজ সমন্বয় করার পাশাপাশি ওয়ার্ডভিত্তিক কাজগুলো আরও বেগবান করার লক্ষ্যে সম্প্রতি ভিডিও কনফারেন্সে কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আলোচনা কার্যক্রম শুরু করেন মেয়র। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, গত ১৪ দিন ধরে যে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে তাতে কোনো অভিযোগ, অনিয়ম, ত্রুটি কিংবা সমস্যার কথা কেউ বলতে পারবে না। কারণ মেয়র এ কাজের তদারকি নিজেই সবসময় করছেন।

আমরা যারা মেয়রের সহযোগী হিসেবে কাজ করছি নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্সটা তাদের জন্য অনেক বাস্তবমুখি পদক্ষেপ। কোন কাজটি কীভাবে করা উচিত এবং কোন সমস্যা হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে সে বিষয়ে সরাসরি মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। ফলে সভা সমাবেশের মতো জনসমাগম এড়িয়ে মেয়রের পরামর্শ ও দিক নির্দেশনাও সরাসরি পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ জানান, বরিশাল নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের কর্মহীন ৪০ হাজার মানুষের তালিকা করে সবার ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৫ হাজার পরিবারে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব ওয়ার্ডে অন্যদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষ ছাড়াও যাদের সাহায্য দরকার কিন্তু চাইতে পারেন না, তালিকা করে তাদের ঘরেও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাশাপাশি তিনি সবাইকে নিজ নিজ ঘরে থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।