দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বকেয়া আদায়কে কেন্দ্র করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। এর জেরে নতুন প্যাকেজ অনুমোদনসহ গ্রামীণফোনকে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দেওয়া বন্ধ রাখে বিটিআরসি। ফলে মোবাইল সেবা দিতে বিভিন্ন বাধার মুখে পড়ে মোবাইল অপারেটরটি। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বিরোধের পরও চলতি প্রথম প্রান্তিকে ভালো ব্যবসা করেছে গ্রামীণফোন। এ সময় নিট মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের ব্যবসায়িক পরিবেশ বিষয়ে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান বলেন, ‘২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে আমরা ধারাবাহিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। মার্চ পর্যন্ত এনওসি অনুমোদনের ওপর নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধিনিষেধ থাকায় আমরা পরিকল্পিত বিনিয়োগ করতে পারিনি।

অন্যদিকে প্রথম প্রান্তিকের শুরু থেকে আমাদের নাম্বার সংকট দেখা দিয়েছিল যেটি মোট গ্রাহকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে চমৎকারভাবে বাজার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং নেটওয়ার্কে আমাদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখার মাধ্যমে আমরা ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় প্রথম প্রান্তিকের শেষে ফোরজি গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ।’

আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, আয়ে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি না হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে আনায় গ্রামীণফোনের নিট মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে গ্রামীণফোনের আয় হয়েছে ৩ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।

এ সময় ব্যবস্থাপনা, বিপণন ও বাজারজাত করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় না বাড়ায় চলতি প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। সুদ ব্যয় ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়জনিত মুনাফার পর প্রথম প্রান্তিকে গ্রামীণফোনের করপূর্ববর্তী মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।

চলতি প্রথম প্রান্তিকে আয়কর বাবদ গ্রামীণফোন ব্যয় করেছে ৬৫৪ কোটি টাকা। এতে কর পরিশোধের পর কোম্পানিটির নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি।

গ্রামীণফোনের সিএফও ইয়েন্স বেকার বলেন, প্রথম প্রান্তিকে গ্রামীণফোনের প্রবৃদ্ধি কমেছে। আমাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও আমরা ইন্টারনেটে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশীদার হিসেবে আমরা আমাদের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখব। আমাদের শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকদের জন্য আরও বেশি মানসম্মত সুযোগ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক নির্মাণ ও বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে আমাদের বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, প্রথম প্রান্তিকে নেটওয়ার্ক উন্নয়নে ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে গ্রামীণফোন। প্রথম প্রান্তিকে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নের পাশাপাশি ১৯৭টি নতুন ফোরজি সাইট করা হয়েছে। ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত গ্রামীণফোনের মোট নেটওয়ার্ক সাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫৪২। ভ্যাট, ফোরজি লাইসেন্স ফি, স্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি, ডিউটি ও ফি বাবদ প্রথম প্রান্তিকে সরকারি কোষাগারে ২৪৬০ কোটি টাকা দিয়েছে, যা মোট আয়ের ৬৮ শতাংশ।

প্রথম প্রান্তিক শেষে (জানুয়ারি-মার্চ) প্রতিষ্ঠানটির মোট গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৫৩ লাখ, যা ৫৩ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ এ সময় ৪ কোটি ৪ লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। প্রথম প্রান্তিকে ইন্টারনেট থেকে আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে।

প্রসঙ্গত, বকেয়া অর্থ পরিশোধ না করায় গত বছর গ্রামীণফোন ও রবিকে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি। এতে করে অপারেটর দুটির নতুন প্যাকেজ অনুমোদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপরও বকেয়া আদায়ে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় অপারেটর দুটিতে অপারেটরে প্রশাসক নিয়োগের উদ্যোগ নেয় বিটিআরসি।

পরে বিষয়টি নিয়ে মামলা হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আপাতত ২ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয় গ্রামীণফোনকে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী টাকা দেওয়ার পর এনওসি দেওয়া শুরু করে বিটিআরসি।

ইয়াসির আজমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা এনওসির অনুমোদন পাওয়া শুরু করেছি। আমরা আশা করি সামনের দিনগুলোয় আমাদের গ্রাহকসেবার মান আরও উন্নত করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।