দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: করোনা পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যেও ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখতে দায়িত্ব পালন করছেন ব্যাংকাররা। নিজের জীবন এবং পরিবারকে ঝুঁকিতে রেখে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশেষ স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা এবং বিশেষ অনুদান প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটা বীমা কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের জন্য সুসংবাদ বলছেন বিশ্লেষকরা।

সার্কুলারে বলা হয়, সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যেও যেসব ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন তাদের মধ্যে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে পদমর্যাদার ভিত্তিতে তাদেরকে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্য বীমা নিশ্চিত করতে হবে। আক্রান্ত হওয়ার সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মধ্যে সেই অর্থ পরিশোধ করবে ব্যাংক। পাশাপাশি তার সার্বিক চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে। এই নির্দেশনা সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির তারিখ থেকে কার্যকর হবে এবং সাধারণ ছুটির শেষ হওয়ার পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত কভিড ১৯ দ্বারা আক্রান্তদের বিশেষ স্বাস্থ্য বীমা কার্যকর থাকবে।

এছাড়া সম্প্রতি সরকারি চাকরিজীবীদের স্বাস্থ্য সুবিধা দিতে স্বাস্থ্য বীমার  উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।সরকারি সাড়ে ১৩ লাখ কর্মচারীর জন্য ‘গোষ্ঠী মেয়াদি বীমা’ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ বীমার মেয়াদ হবে ১৫ বছর। ২০১৯ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অজিত কুমার পালের সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এ বীমার প্রিমিয়াম নেয়া হবে চিকিৎসা ভাতা থেকে। এ কারণে মূল বেতনে কোনো চাপ পড়বে না। হাসপাতালের যাবতীয় খরচ এর আওতাভুক্ত থাকবে। এ ছাড়া গর্ভবতীদের জন্য থাকবে বিশেষ সুবিধা। সরকারি চাকরিজীবীদের পরিবারের সদস্যরাও পৃথক প্রিমিয়াম জমার মাধ্যমে এ সুবিধা নিতে পারবে। বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, ১৩ লাখ ৬২ হাজার সরকারি চাকরিজীবীর এই স্বাস্থ্য বীমার পুরো বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হবে জীবন বীমা কর্পোরেশনের মাধ্যমে।

স্বাস্থ্য বীমার আওতায় সরকারি চাকরিজীবীরা মেয়াদ শেষে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পাবেন। তবে এ ক্ষেত্রে গ্রেডের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধাপের ওপর ভিত্তি করে টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। তবে হাসপাতালের বেড ভাড়া, কনসালট্যান্সি ফি, অপারেশন থেকে শুরু করে ওষুধ কেনা, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসসহ অন্যান্য খরচের ক্ষেত্রে গ্রেডের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে না।

তবে এ বীমার জন্য সরকার কোনো ভর্তুকি দেবে না। চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য প্রিমিয়াম থেকে টাকা কাটা হবে। বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীরা চিকিৎসা খরচ বাবদ এক হাজার ৫০০ টাকা করে ভাতা পান। এই বীমার আওতায় পুরো টাকার অর্ধেক যাবে ফিক্সড ডিপোজিটের একটি তহবিলে। বাকি অর্ধেক টাকা যাবে প্রিমিয়াম খরচ হিসেবে। প্রিমিয়ামের টাকা থেকে হাসপাতালের ব্যয় বহন করা হবে। আর তহবিলের টাকা পাওয়া যাবে বীমার মেয়াদ শেষে।

এদিকে বীমা কোম্পানিতেও বেড়েছে নগদ লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতা ব্যাংক কোম্পানির মতো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও নগদ লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা কোম্পানিগুলোর ২০১৯ সালের ঘোষণা করা লভ্যাংশের চিত্র পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

তালিকাভুক্ত বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২০১৯ সালের সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ৬টি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ৫টিই ২০১৮ সালের থেকে বেশি নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর একটির নগদ লভ্যাংশ ২০১৮ সালের সমান রয়েছে। তবে তার আগের বছরগুলোর তুলনায় বেড়েছে।

এদিকে ২০১৯ সালের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করা বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৪টি ২০১৮ সালে লভ্যাংশ হিসেবে শুধু বোনাস শেয়ার অথবা নগদের সঙ্গে বোনাস শেয়ারও দিয়েছিল। তবে ২০১৯ সালে একটি প্রতিষ্ঠানও শুধু বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। তবে দুটি প্রতিষ্ঠান নগদের সঙ্গে বোনাস শেয়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৯ সালের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করা বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স। এ প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারহোল্ডারদের ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এটি কোম্পানিটির সর্বোচ্চ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা।

এর আগে ২০১৮ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছিল প্রতিষ্ঠান। তার আগে ২০১৭ ও ২০১৬ সালেও ১৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয় রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স। আর ২০১৫ সালে ১৫ শতাংশ নগদ ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।

সর্বোচ্চ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার দিক থেকে যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ও নিটল ইন্স্যুরেন্স। গ্রীন ডেল্টা ২০১৯ সালের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ নগদের পাশাপাশি ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডার ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে দিয়েছিল। তার আগে ২০১৭ সালে ২০ শতাংশ নগদ, ২০১৬ সালে ২০ শতাংশ নগদ এবং ২০১৫ সালে ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ হিসেবে দেয় কোম্পানিটি।

আর নিটল ইন্স্যুরেন্স এবার ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগের বছর ২০১৮ সালেও কোম্পানিটি ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তবে তার আগের তিনটি বছর শুধু বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয় এই সাধারণ বীমা কোম্পানিটি। এর মধ্যে ২০১৭ সলে ১৪ শতাংশ, ২০১৬ সালে ১৩ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ১২ শতাংশ বোনাস শেয়ার পায় শেয়ারহোল্ডাররা।

নিয়মিত নগদ লভ্যাংশ দেয়া বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স (বিজিআইসি) এবার ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০১৮ সালে এই কোম্পানিটি ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তার আগে ২০১৭ সালে ১০ শতাংশ এবং ২০১৬ ও ২০১৫ সালে ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় এই সাধারণ বীমা কোম্পানিটি।

১০ শতাংশের ওপরে নগদ লভ্যাংশ দেয়া আর এক প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স। ২০১৯ সালের ব্যবসার ওপর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০১৮ সালে কোম্পানিটি ৭.০৫ শতাংশ নগদ ও ৫.৯৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়। তার আগে ২০১৭ ও ২০১৬ সালে ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ এবং ২০১৫ সালে ৬ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি।

লভ্যাংশ ঘোষণা করা আর এক বীমা প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স ২ শতাংশ নগদের সঙ্গে ২ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০১৮ সালে এই কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের শুধু ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছিল। তার আগে ২০১৭ সালে ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার, ২০১৬ সালে ২ শতাংশ নগদ ও ৮ শতাংশ বোনাস শেয়ার এবং ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয় প্রতিষ্ঠানটি।