দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: করোনা ভাইরাস আতঙ্কে দেশের শেয়ার বাজারে মার্চজুড়ে একের পর এক বড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। ধসের কবলে পড়ে প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের দরপতনে বড় অঙ্কের অর্থ হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে এ ধসের বাজারেও কিছু কিছু কোম্পানি চমক দেখিয়েছে। একের পর এক প্রতিষ্ঠানের দরপতন হলেও এ কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এমনি একটি প্রতিষ্ঠান সিমেন্ট খাতের প্রিমিয়ার সিমেন্ট।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, শেয়ার বাজারে সিমেন্ট খাতের সাতটি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে দুটি। এ দুই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানসহ সিমেন্ট খাতের ছয়টি কোম্পানিই করোনার প্রকোপের মধ্যে দর হারিয়েছে। তবে স্রোতের বিপরীতে গিয়ে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে একমাত্র প্রিমিয়ার সিমেন্ট।

দেশে করোনা রোগী শনাক্তের পর মার্চজুড়ে চলা পতনের কবলে পড়ে সিমেন্ট খাতের ছয়টি কোম্পানির শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে কমেছে ৫৬২ কোটি ৪৯ লাখ পাঁচ হাজার ১৭২ টাকা। বিপরীতে প্রিমিয়ার সিমেন্টের শেয়ার দাম বেড়েছে প্রায় সাড়ে ২৫ কোটি টাকা। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার শেষ ১১ মাসের মধ্যে মার্চে সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝিতে প্রিমিয়ার সিমেন্টের শেয়ার দাম ছিল ৩৯ টাকা ৫০ পয়সা। যা শেয়ার বাজার বন্ধ হওয়ার আগে ২৫ মার্চ লেনদেন শেষে দাঁড়ায় ৬৩ টাকা ৫০ পয়সায়। অবশ্য ২ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৭৬ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত উঠে। যা গত বছরের ৪ এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ।

এরপর কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ৫৩ টাকায় নেমে আসে। ৮ মার্চ যে দিন দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়, সে দিন প্রিমিয়ার সিমেন্টের শেয়ার দাম ছিল ৬১ টাকা ১০ পয়সা। এরপর তা কমে ১৮ মার্চ ৫৩ টাকা ১০ পয়সায় নেমে যায়। এরপর আবার দাম বাড়তে থাকে। যা ২৫ মার্চ লেনদন শেষে ৬৩ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়ায়। অর্থাৎ করোনার মধ্যে লেনদেন হওয়া ১২ কার্যদিবসে প্রতিটি শেয়ারের দাম বাড়ে দুই টাকা ৪০ পয়সা। এতে শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে বেড়েছে ২৫ কোটি ৩০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

করোনা আতঙ্কের মধ্যে শেয়ারের এমন দাম বাড়লেও সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। ২০১৮ সালেও কোম্পানিটি থেকে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পান বিনিয়োগকারীরা। তবে ২০১৩ সালে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটি ২০১৪ সালে ৩০ শতাংশ, ২০১৫ সালে ২০ শতাংশ, ২০১৬ সালে ১৫ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।

কোম্পানিটির শেয়ার ধারণের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে শেয়ার আছে ৪৮ দশমকি ২৫ শতাংশ। বাকি শেয়ারে মধ্যে ৩৬ দশমিক ৪০ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে দশমিক শূন্য এক শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

এদিকে মার্চে পতনে কবলে পড়ে সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিনিয়োগকারীদের সব থেকে বেশি লোকসান হয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জহোলসিম থেকে। মার্চজুড়ে কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ৩ টাকা ১০ পয়সা। এতে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারদের সম্মিলিতভাবে লোকসান হয়েছে ৩৬০ কোটি দুই লাখ ৫৭ হাজার টাকা।

এর পরেই রয়েছে আর এক বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম কমার কারণে শেয়ারহোল্ডাররা হারিয়েছেন ৯৪ কোটি ৩৬ লাখ ৯ হাজার টাকা। মার্চে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ১৬ টাকা ৭০ পয়সা।

সম্মিলিতভাবে শেয়ারহোল্ডারদের ৫৫ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা লোকসানের মাধ্যমে তৃতীয় স্থান দখল করেছে কনফিডেন্স সিমেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ৭ টাকা ৪০ পয়সা।

এছাড়া এমআই সিমেন্টে ২৯ কোটি ৭০ লাখ, মেঘনা সিমেন্টে ২০ কোটি ৫৫ লাখ ৬৪ হাজার এবং আরামিট সিমেন্টে ২ কোটি ৭১ লাখ ৪ হাজার টাকা হারিয়েছেন শেয়ারহোল্ডাররা।