দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারানো ২৮ লাখ বিনিয়োগকারীর এবারের ঈদ হবে নিরানন্দ। দীর্ঘ দিন ধরে পুঁজিবাজারে মন্দা বিরাজ করছে। তারল্য ও আস্থা সংকটের মধ্য নতুন করে যুক্ত হয় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্ক। করোনার মধ্যে শেয়ার এর সার্কিট ব্রেকার নির্ধারণ করে দেওয়ায় কিছুটা ক্ষতির হাত থেকে বিনিয়োগকারীরা রক্ষা পেলেও বাজার দীর্ঘদিন বন্ধের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে মানবতার জীবন যাপন করছেন তারা। এ মুহূর্তে সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনা দাবি করেছেন বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি দু মুঠো দু বেলা খাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ছে বিনিয়োগকারীদের। কারন মান সম্মানের কারনে না পারছেন কারো কাছে হাত পাততো না পারছেন কারো কাছে কষ্টের কথা বলতে। তাই এবারের ঈদ-উল ফিতরেও খুশির আমেজ নেই তাদের মনে।

মা-বাবা, ছেলে-সন্তান, স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনদের কিছু না দেওয়ার বেদনায় ঈদের আনন্দ ভেস্তে যেতে বসেছে তাদের। এ দুর্ভাগ্য পুঁজিবাজারের লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর। রোববার একাধিক বিনিয়োগকারী দেশ প্রতিক্ষণেল সঙ্গে আলাপকালে তাদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন।

বিনিয়োগকারীদের দাবি পুঁজিবাজার খোলা থাকলে ক্ষতিতে হলেও শেয়ার বিক্রি করে চলতে পারতেন। বাজার বন্ধ থাকায় মূলধন আটকে গেছে। এ অবস্থায় মানবতার জীবন যাপন করছেন তারা। তাই এ মুহূর্তে সরকারের কাছে সব বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্টে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ারও দাবি জানান তারা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা খুবই মানবতার জীবন যাপন করছেন। গত ১০ বছর যাবত আমরা বাজারে লস দিয়ে এসেছি। বাজার খোলা থাকলে লস দিয়ে হলেও শেয়ার বিক্রি করে আমরা চলতে পারতাম। কিন্তু বাজার দীর্ঘদিন বন্ধ হওয়ার কারণে সেটিও পারছি না। আমাদের খাবার নেই। পরিবার নিয়ে আমরা অসহায় জীবন যাপন করছি। তাই এ মুহূর্তে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি প্রতিটি বিও অ্যাকাউন্টে আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে ঈদের আগে বিনিয়োগকারীদের বাঁচান।

তিনি বলেন, গার্মেন্টসকর্মীদের যেভাবে বিকাশ অ্যাকাউন্টে মাধ্যমে বেতন দেওয়া হয়েছে ঠিক সেভাবে আমাদেরও সরকার সরাসরি বিনিয়োগকারীদের এ দুর্যোগে আর্থিক প্রণোদনা দিতে পারে। এতে করে সব বিনিয়োগকারীরা তাদের পরিবার নিয়ে দুবেলা খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবেন বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, এর আগেও সরকার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য ৯০০ কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছিল সেটি আমরা চোখেও দেখিনি। আইসিবি তাদের সুবিধামতো ব্যবহার করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

রমজান চলছে ঈদ পরিবার নিয়ে কীভাবে বাঁচবো কিছুই বুঝে পাচ্ছি না বলে জানান ইবিএল সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী মো. বোরহান উদ্দিন। তিনি বলেন, মানবতার জীবন যাপন করছি। আমাদের দেখার কেউ নেই। তিনি আরও বলেন, শেয়ারের ব্যবসা করে আমার সংসার চলে। সরকার শেয়ারের সার্কিট বেকার ঘোষণা করায় শেয়ার বিক্রি করিনি, বাজার ভালো হবে এ আশায়। পুরো মূলধনটা আটকে রয়েছে। এ মুহূর্তে কেউ টাকা ধার দিচ্ছেন না, বউ-বাচ্চা নিয়ে কীভাবে বাঁচবো সেটি বুঝতে পারছি না। তাই সরকারের উচিত আমাদেরও কিছুটা আর্থিক সুবিধা দেওয়া।

বিনিয়োগকারীদের অনেকেই আছেন যাদের আয়ের পুরোটাই পুঁজিবাজারের ওপর নির্ভর। তাই বাজার বন্ধ থাকায় লাখ লাখ বিনিয়োগকারীদের আয় বন্ধ রয়েছে। মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। তাই অনতিবিলম্বে সব বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনার দাবি জানান বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আতাউল্লাহ নাইম।

তিনি বলেন, এ মহামারিতে সব সেক্টরে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো প্রণোদনা নেই। বিনিয়োগকারীদের আর্থিক সংকটে দিন কাটছে। আমরা সামনের দিনগুলো অন্ধকার দেখছি। বর্তমান অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা কারো কাছে ছোট হতে পারছেন না, তাদের দুর্বলতা প্রকাশ করার মতোও অবস্থা নেই। তাই সরকারের উচিত গার্মেন্টস সেক্টরের মতো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা।

তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের যেমন বিকাশের মাধ্যমে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ঠিক তেমনি ভাবে আমাদেরও বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। করোনার কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এর পর নতুন করে আবার ১৬ মে পর্যন্ত পুঁজিবাজার বন্ধের গুঞ্জন চলছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেছেন, অর্থনীতির অন্যতম খাত পুঁজিবাজারও করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বড় সংকটে পড়েছে। এতে বিপুল ক্ষতির শিকার হচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্ট সবাই। দীর্ঘ সময় পুঁজিবাজার বন্ধ রাখার ফলে বিনিয়োগকারীর পরিবারগুলো খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেক পরিবার না খেয়ে থাকলেও লজ্জায় কারো সামনে মুখ খুলে বলতে পারছে না। এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ সময় পুঁজিবাজার বন্ধ রাখার কারনে।

তাই দীর্ঘ সময় পুঁজিবাজার বন্ধ রাখা ঠিক হয়নি। সীমিত হলেও বাজার চালু করা উচিত ছিল। বন্ধ থাকার ফলে ক্ষতি আরও বেশি হচ্ছে। তবে এই ক্ষতি পোষাতে পুঁজিবাজারকেও প্রণোদনার মধ্যে আনা উচিত। পুঁজিবাজার সরাসরি প্রণোদনা দেওয়ার দরকার নেই। প্রক্রিয়াগত প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে মার্জিন ঋণের সুদ মওকুফ, কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো, কনজামশন ট্যাক্স কমানো উচিত বলে তিনি মনে করেন।