দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) বাংলাদেশ লিমিটেডের চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বিক্রি কমে গেছে। তবে এ সময় উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনা ও সুদ আয় বাড়ার কারণে কোম্পানিটির নিট মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কোম্পানিটির প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।

লোকসানি ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনিট বন্ধের পর থেকে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের মুনাফায় ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি ৯৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা নিট মুনাফা করে। ১৯৭৬ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্তির পর এটিই কোম্পানির সর্বোচ্চ নিট মুনাফা। দীর্ঘদিন ধরে লোকসানের কারণে ২০১৮ সালে কোম্পানিটি ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনিটটি বন্ধ করে দেয়।

চলতি প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময়ে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের পণ্য বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ১১৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ শতাংশ কম। চলতি বছর কোম্পানির উৎপাদন ব্যয় কমে আসায় বিক্রি কম হলেও মোট আয় প্রায় একই রয়েছে। ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির উৎপাদন ব্যয় মোট বিক্রির ৫৩ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল, যা চলতি প্রথম প্রান্তিকে ৫০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। তবে এ সময় পরিচালন ব্যয় কিছুটা বেড়েছে।

চলতি প্রথম প্রান্তিকে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। চলতি প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকে রাখা আমানতের বিপরীতে কোম্পানিটির সুদ আয় দ্বিগুণ বেড়েছে। এ সময় সুদ আয় হয়েছে ৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আর কর পরিশোধ ও অন্যান্য লোকসান সমন্বয়ের পর চলতি প্রথম প্রান্তিকে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের নিট মুনাফা হয়েছে ১৮ কোটি ৩ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি।

বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দেশব্যাপী যে লকডাউন চলছে. তাতে সব ব্যবসা-বাণিজ্যই ক্ষতির মুখে পড়েছে। এতে করে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের ব্যবসায়ও প্রভাব পড়বে বলে জানা গেছে। তবে অন্যদের তুলনায় কিছুটা কম ক্ষতির মুখে পড়বে কোম্পানিটি। কারণ লকডাউনের মধ্যেও কোম্পানিটির পণ্য বিক্রি অব্যাহত রয়েছে।

মুনাফা প্রসঙ্গে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাসুদ খান বলেন, ২০১৯ সালে আমাদের যে মুনাফা হয়েছে, তা কোম্পানির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে প্রথম প্রান্তিকে বিক্রি কিছুটা কমলেও উৎপাদন ব্যয় কমে আসায় নিট মুনাফায় প্রবৃদ্ধি রয়েছে। মূলত লোকসানি ফার্মা ইউনিট বন্ধ করে দেওয়ায় মুনাফা বেড়েছে।

পণ্য বিক্রিতে করোনার প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় বিভিন্ন বাধা থাকলেও আমরা চেষ্টা করছি আমাদের পণ্য বিক্রি বহাল রাখতে।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ মার্চ জিএসকে বাংলাদেশ লিমিটেডের সব উদ্যোক্তা শেয়ার অধিগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে ইউনিলিভার। এর মাধ্যমে জিএসকে বাংলাদেশের ৮১ দশমিক ৯৮ শতাংশ উদ্যোক্তা শেয়ারের মালিক প্রতিষ্ঠান সেটফার্স্ট লিমিটেডের সব শেয়ার কেনার ঘোষণা দেয় ইউনিলিভার ওভারসিস হোল্ডিংস বিভি। এর মাধ্যমে জিএসকে বাংলাদেশের মালিকানায় আসছে ইউনিলিভার।

২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছিল দুই কোম্পানির মধ্যে। চুক্তি অনুযায়ী সেটফার্স্ট লিমিটেডের হাতে থাকা জিএসকে বাংলাদেশের ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৪৪টি শেয়ার ১ হাজার ৬৪০ কোটি টাকায় কিনবে ইউনিলিভার ওভারসিস।