দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২০১৯ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ৮টি ব্যাংক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ডিভিডেন্ড ঘোষণায় সীমা নির্ধারণ করায় কমপক্ষে ৪টি ব্যাংকের ডিভিডেন্ডে সংশোধনী আনতে হবে বলে জানা গেছে। এর আগে সোমবার ডিভিডেন্ডের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের আগের ক্যাশ ডিভিডেন্ড বন্টন না করতে নির্দেশণা দেয় সংস্থাটি।

সার্কুলারে বলা হয়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটায় দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে সৃষ্ট চাপ হতে উত্তরণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক হতে বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে, যা বাস্তবায়নে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বৃহৎ এবং সিএমএসএই খাতে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা বাস্তবায়নে সহজলভ্য অর্থের সংস্থানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে দুটি বৃহৎ পুনঃঅর্থায়ন স্কীম প্রণয়ন করেছে।

সামগ্রিক ভাবে ব্যাংকিং খাতে সৃষ্ট চাপ মোকাবেলা করে ব্যাংকগুলো যাতে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিতে যথার্থ অবদান রাখতে পারে সে লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর মুনাফা অবন্টিত রেখে মূলধন শক্তিশালী করার মাধ্যমে পর্যাপ্ত তারল্য বজায় রাখা একান্ত অপরিহার্য। এই উদ্দেশ্যে ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা এবং ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের রিটার্নের বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করে ২০১৯ সালের সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ব্যাংকের শেয়ারের বিপরীতে ডিভিডেন্ড প্রদানের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নীতিমালা অনুসরণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

ক) (১) প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ইতোপূর্বে গৃহীত Deferral সুবিধার অধীনে নয় এরূপ বা ২০১৯ সালের জন্য কোন ধরণের Deferral সুবিধা গ্রহণ ব্যতিরেকে যে সকল ব্যাংক ২.৫% ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১২.৫% বা তার বেশি মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে, সে সকল ব্যাংক তাদের সামর্থ্য অনুসারে সর্বোচ্চ ১৫% নগদসহ মোট ৩০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে।

(২) প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ইতোপূর্বে গৃহীত Deferral সুবিধার অধিীনে নয় এরূপ বা ২০১৯ সালের কোন ধরণের Deferral সুবিধা গ্রহণ ব্যতিরকে যে সকল ব্যাংক ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১১.২৫% হতে অনুর্ধ্ব ১২.৫% মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে সে সকল ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ক্রমে তাদের সামর্থ্য অনুসারে সর্বোচ্চ ৭.৫% নগদসহ মোট ১৫% ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে।

এরূপ যে সকল ব্যাংকের ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ নূনতম মূলধন ১১.২৫% এর কম হবে তাদের ক্ষেত্রে ডিভিডেন্ড ঘোষণার ক্ষেত্রে এ সার্কুলারের অনুচ্ছেদ নং (গ) এ বর্ণিত নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। তবে, উপরোক্ত উভয় ক্ষেত্রে ঘোষিত নগদ ডিভিডেন্ড ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ এর পূর্বে বিতরণ করা যাবে না।

ইতোপূর্বে গ্রহীত Deferral সুবিধা সম্পূর্ণরূপে সমন্বয় করা হলে যে সকল ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ১১.২৫% বা তার বেশি থাকে সে সকল ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ক্রমে সর্বোচ্চ ৫% নগদসহ মোট ১০% ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারে।

গ০ প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ২০১৯ সালের গৃহীত বা ইতোপূর্বে গৃহীত Deferral সুবিধা সম্পূর্ণরূপে সমন্বয় করা হলে সে সকল ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ১১.২৫% এর কম কিন্তু ন্যূনতম সংরক্ষিত মূলধণ ১০% হবে সে সকল ব্যাংক ২০১৯ সালের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদক্রমে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে।

এছাড়া যে সকল ব্যাংক ২০১৯ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর ভিত্তিতে ইতোমধ্যে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে সে সকল ব্যাংকের ঘোষিত ডিভিডেন্ড পরিমাণ এই সার্কুলার বর্ণিত নির্দেশণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হতে স্থগিতপূর্বক যথাশীঘ্র সংশোধনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই শর্ত পরিপালনে ইস্টার্ন ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ডিভিডেন্ডে সংশোধনী আনতে হবে। এই ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংকের পর্ষদ ২৫ শতাংশ নগদ, উত্তরা ব্যাংক ৩৫ শতাংশ (১০ শতাংশ নগদ ও ২৫ শতাংশ বোনাস), এনসিসি ব্যাংক ১৭ শতাংশ নগদ এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৩০ শতাংশ নগদ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারের শর্ত অনুযায়ী এই ৪ ব্যাংককে তাদের ঘোষিত ডিভিডেন্ডে সংশোধনী আনতে হবে।