দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও বিশ্বের প্রায় সব দেশের পুঁজিবাজার চালু রয়েছে। তবে মহামারী এ ভাইরাসের প্রভাবে লকডাউন থাকায় শ্রীলঙ্কা, জর্ডান ও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার গত মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর শ্রীলঙ্কা ও জর্ডান চালু করলেও বন্ধ রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। তবে দেড় মাসেরও বেশি সময় স্টক এক্সচেঞ্জ বন্ধ থাকায় ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে দেশ। এতে করে দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে বিদেশিদেরও আগ্রহ কমছে। শঙ্কা তৈরি হয়েছে গ্লোবাল ইনডেক্স এমএসসিআই থেকে বাদ পড়ার।

এমএসসিআই ইনডেক্স তৈরি করে মরগ্যান স্ট্যানলি ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল। এমএসসিআই তাদের তৈরি সূচকগুলোর জন্য বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। তারা সূচকে অন্তর্গত স্টকগুলোর পারফরম্যান্স ট্র্যাক করে। বিদেশি ফান্ড ম্যানেজারসহ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলো এমএসসিআই সূচকগুলো অনুসরণ করে। এমএসসিআই সূচকগুলো বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সম্প্রতি (গত ৬ মে) এক বিবৃতিতে এমএসসিআই কর্তৃপক্ষ জানায়, স্টক এক্সচেঞ্জ দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ হওয়ার কারণে চলতি বছরের মে মাসে এমএসসিআইর দেশ অথবা কম্পোজিট ইনডেক্সের অর্ধবার্ষিক সূচক পর্যালোচনার ফলাফলে বাংলাদেশকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি বাস্তবায়ন করবে না। তবে আগস্টে এমএসসিআই সূচকের যে অর্ধবার্ষিক রিভিউ করা হবে, তাতে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার তথ্য হালনাগাদ করা হবে না। বাজারসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এর মাধ্যমে এমএসসিআই বাংলাদেশ ইনডেক্সটি বাদ পড়তে যাচ্ছে।

এমএসসিআই বাংলাদেশ ইনডেক্স মূলত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বড় ও মাঝারি মূলধনের কোম্পানি নিয়ে গঠিত, যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধনের ৮৫ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। ২০১৯ সালে এ ইনডেক্সটি ১৭ শতাংশ পয়েন্ট হারিয়েছে। যদিও এমএসসিআই ফ্রন্টিয়ার মার্কেট ইনডেক্স এ সময়ে প্রায় ১৮ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। এমএসসিআই বাংলাদেশ ইনডেক্সটি বছরের ফেব্রুয়ারি, মে, আগস্ট ও নভেম্বরে রিভিউ করা হয়।

করোনাভাইরাসের কারণে বছরের শুরু থেকে বিশ্বের পুঁজিবাজারগুলোতে পতন হলেও এপ্রিলে তা ঘুরে দাঁড়ায়। তবে এ সময় দেশের পুঁজিবাজার বন্ধ থাকায় উত্থানের সুযোগ নিতে পারেনি বিনিয়োগকারীরা।

দেশের পুঁজিবাজারে সর্বশেষ লেনদেন হয় গত ২৫ মার্চ। এরপরই করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারি সাধারণ ছুটি শুরু হয়, যা এখনো চলছে। আর স্টক এক্সচেঞ্জও সরকারি সাধারণ ছুটির সঙ্গে মিল রেখে লেনদেন বন্ধ করে দেয়। দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশের পুঁজিবাজার বন্ধ রয়েছে, যা ১৯৭৬ সালের পর সর্বোচ্চ সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি কয়েকটি ফান্ড অবসায়নে গেলেও বাজার বন্ধ থাকায় শেয়ার বিক্রি করতে পারেনি। একইভাবে আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে নগদ টাকার প্রয়োজন থাকলেও স্থানীয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করতে পারেননি।

গত ৮ মে ব্লুমবার্গ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার পুঁজিবাজার বন্ধ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। যেখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক তহবিল ব্যবস্থাপকরা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে তাদের আগ্রহ কমছে। ইতিমধ্যেই পুঁজিবাজার কবে খুলবে, বিদেশি তহবিল ব্যবস্থাপকরা তাদের মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে জানতে চেয়েছে।

মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাব বিশ্বের সব পুঁজিবাজারেই পড়েছে। কিন্তু এ সময়ে উদীয়মান ও ফ্রন্টিয়ার মার্কেটের বাংলাদেশের মতো ছোট পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি আরও ভঙ্গুর হতে পারে বলে মনে করছে স্টকহোমভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টুন্ড্রা ফন্ডার এবির প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ম্যাটিয়াস মার্টিনসন। যদিও ফান্ডটি বাংলাদেশে ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে করা বিনিয়োগ ধরে রাখবে বলে ব্লুমবার্গকে জানিয়েছে।

তবে বাংলাদেশে পুঁজিবাজার বন্ধের সময়সীমা যদি আরও বাড়ে তাহলে দীর্ঘস্থায়ী পরিণতি ডেকে আনতে পারে, যার ফলাফল হিসেবে এমএসসিআইয়ের মতো গ্লোবাল ইনডেক্স থেকে বাংলাদেশকে বের করে দেওয়া হতে পারে বলে জানান হংকংভিত্তিক এশিয়া ফ্রন্টিয়ার ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টমাস হাগার, যাদের বিনিয়োগ রয়েছে বাংলাদেশে।

চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৯ শতাংশের বেশি পয়েন্ট হারায়। এরপর ১৯ মার্চ তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের মাধ্যমে কোনো লেনদেন ছাড়াই সূচকটি ১০ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়। পরবর্তী সময়ে কয়েক দিন পুঁজিবাজার চালু থাকলেও কৃত্রিমভাবে সিকিউরিটিজের দর বৃদ্ধির কারণে লেনদেন তলানিতে নামে।

এমন পরিস্থিতিতে করোনার প্রভাবে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা হলে স্টক এক্সচঞ্জ কর্তৃপক্ষও ২৬ মার্চ থেকে লেনদেন বন্ধ রাখে। এর মধ্যে বিনিয়োগকারীদের চাপে পড়ে গত ৩০ এপ্রিল সাধারণ ছুটির মধ্যে নানা শর্তসাপেক্ষে জরুরি সেবার আওতায় ১০ মে থেকে লেনদেন চালুর সম্মতি চেয়ে এসইসিকে চিঠি দেয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। তবে কমিশনে কোরাম সংকট থাকা ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জরুরি সেবার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় পুঁজিবাজার চালু হয়নি। সাধারণ ছুটি বাড়ার সম্ভাবনা ও ঈদের কারণে পুঁজিবাজার আরও দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকতে পারে।