দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনাভাইরাসে যেভাবে আক্রান্ত এবং মারা যাচ্ছে সেই তুলনায় আমরা করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (১৪ মে) সকালে করোনাভাইরাসে কর্মহীন হয়ে পড়াদের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে সরাসরি নগদ অর্থ প্রেরণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে একটি অদৃশ্য শক্তির হঠাৎ আক্রমণ ও এর ফলে কিন্তু সবাই বিপর্যস্ত। আমাদের ভূখণ্ড ছোট কিন্তু জনসংখ্যা বেশি । তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অর্থনীতি সচল রাখা উচিত। এ জন্য আমাদের রয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। অন্যান্য দেশে যেভাবে মৃত্যু কিংবা আতঙ্কের ঘটনা ঘটেছে এবং মারা গেছেন এর তুলনায় আমরা কিন্তু অনেক নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেরেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের জীবনে প্রয়োজনটা অনেক বেশি। মানুষদের ক্ষুধার জ্বালাটা কিন্তু আমরা বুঝি। এ জন্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এমন একটি অদৃশ্য শক্তি মোকাবিলা কিন্তু কোনো দেশই পারছে না। কত শক্তিশালী দেশকে আমরা দেখেছি, এই করোনাভাইরাস শক্তির কাছে সারেন্ডার করতে হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীবলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় এরই মধ্যে দুই হাজার ডাক্তার ও ছয় হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাতে করোনা আক্রান্ত মানুষ যথাযথ চিকিৎসা ও নার্সিং সেবাটা পায়। করোনা পরিস্থিতিতে আরো ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় আহত মুক্তিযোদ্ধা, নির্যাতিত মা-বোনদের সহযোগিতা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশই এ অবস্থায় এত সহজে কেউ ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশে অগ্রগতি থেমে গিয়েছিল। এরপর আমরা ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর আবার বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি শুরু হয়।

তিনি আরও বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দায়িত্বভার যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিয়েছিলেন তখন কোনো সঞ্চয় ছিল না, ব্যাংকে কোনো জামানতও ছিল না। বঙ্গবন্ধু মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছিলেন। এমন কিছু ছিল না, যা রিলিফে দেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশে তখন মঙ্গা থাকে না, দরিদ্র থাকে না, এটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।

এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোবাইল ব্যাংকিং পরিসেবার মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের হিসাবে সরাসরি নগদ অর্থ প্রেরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এছাড়া একই সময় তিনি স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের ২০১৯ সালের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণের কার্যক্রমও উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে করোনা সংকটে কাজ হারানো নিম্ন আয়ের অসহায় মানুষের কাছে নগদ অর্থ পৌছে যাবে।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জেলাগুলোর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সকালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন ঈদের আগে কর্মহীন মানুষের কাছে নগদ অর্থ পৌঁছে দেওয়া হবে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার পাচ্ছেন ৫০ লাখ পরিবার। প্রতি পরিবারে ৪ জন করে সদস্য ধরে এই নগদ সহায়তায় উপকারভোগী হবে প্রায় ২ কোটি মানুষ। এ জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।

এই সহায়তা কর্মসূচির আওতায় আসছে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের নানা পেশার মানুষ। যারা লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। প্রতি পরিবারকে ২৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে।

ইতিমধ্যে সহায়তা প্রাপ্য নিম্ন আয়ের মানুষের তালিকা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, গ্রামের মেম্বার, শিক্ষক, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এই তালিকা তৈরি করেছেন। তালিকাভুক্তদের মধ্যে নগদ, বিকাশ, রকেট, এবং শিউরক্যাশ এর মাধ্যমে সরাসরি এই টাকা চলে যাবে। ফলে বাড়তি কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না। টাকা পাঠানোর খরচ সরকার বহন করবে।