দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: অনেক শর্ত সাপেক্ষে পুঁজিবাজারে লেনদেন চালু করার সম্মতি চেয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চিঠি দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। তবে কোন শর্ত শেষ পর্যন্ত লেনদেন চালু করা যাচ্ছে না। অবশেষে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলার অংশ হিসেবে দেশের অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ন্যায় পুঁজিবাজারও বন্ধ থাকবে ৩০ মে পর্যন্ত।

শনিবার (১৬ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে অটোমেটেড পদ্ধতিতে লেনদেন চালুর পর ২২ বছর পেরিয়ে গেলেও ব্যক্তিনির্ভরতা কাটাতে না পারায় বর্তমান পরিস্থিতিতে বন্ধ রাখতে হচ্ছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। এতে বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরাও। নভেল করেনাভাইরাসের প্রভাবে পুঁজিবাজারে ধস নামলেও অধিকাংশ দেশেই লেনদেন চালু রয়েছে।

এশিয়া, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার এরই মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের ধাক্কা কিছুটা সামলে নিয়েছে। জাপানে জরুরি অবস্থা জারির পরও পুঁজিবাজার চালু রাখা হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের ভয়াবহ আক্রমণে পর্যুদস্ত ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রেও চালু রয়েছে পুঁজিবাজার। ফিলিপাইন দুদিনের জন্য পুঁজিবাজার বন্ধ রাখলেও পরবর্তী সময়ে আবারো চালু করেছে।

তবে এ সংকটকালীন পরিস্থিতিতেও প্রায় সব দেশেই পুঁজিবাজার চালু রয়েছে। এদিকে শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ। করোনাভাইরাসে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক না হলে আগামি ৩১ মে থেকে পুঁজিবাজারের লেনদেন কার্যক্রম শুরু করা পারে বলে বিএসইসি সুত্রে জানা গেছে।

অন্যদিকে করোনাভাইরাসের কারণে চলমান লকডাউন পরিস্থিতি ও সাধারণ ছুটি উঠিয়ে নেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। ঈদ পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। করোনার কারণে দেশে টানা প্রায় ২ মাস ‘লকডাউন’র কারণে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটি দফায় দফায় বাড়ালেও ‘লকডাউন’ কিছুটা শিথিল করেছে সরকার।

আরও পড়ুন…….

পুঁজিবাজারে কি আর অস্তমিত সূর্য উদিত হবে

ব্যাংকের প্রকৃত মালিক শেয়ারহোল্ডারা এদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে

সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন মন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেছেন, করোনায় সংক্রমণও বাড়ছে, আবার সব কিছু বন্ধের কারণে মানুষের জীবনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর জুন থেকে ছুটি ও লকডাউন তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। সরকার ৬ষ্ঠ দফায় ১৪ দিন সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত করেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের সাথে সংগতি রেখে ডিএসই’র ট্রেডিং, সেটেলমেন্ট কার্যক্রমসহ সকল দাপ্তরিক কাজ বন্ধ থাকবে৷

ডিএসই ৩০ মে পর্যন্ত ছুটির ঘোষণা দিলেও লেনদেন চালুর জন্য বিভিন্ন বিষয় থেকে অব্যাহতি চেয়ে বিএসইসির সম্মতি চেয়ে গত ৩ মে চিঠি দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিএসইসির সম্মতি পেলে এবং তাদের নির্দেশনার আলোকে লেনদেন চালু করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসই। তবে কমিশনের কোরাম সংকটের কারনে ডিএসইকে বিভিন্ন বিষয়ে অব্যাহতি দেওয়া সম্ভব না। যাতে করোনাভাইরাসে সরকারি ছুটির মধ্যে লেনদেন চালু হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।

এর আগে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপরে প্রথম দফায় ৭দিন সাধারন ছুটি বাড়িয়ে ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয় এবং দ্বিতীয় দফায় ৩দিন সাধারন ছুটি বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করে। এরপরে ১১ দিন বাড়িয়ে সাধারন ছুটি ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত, আরও ১০দিন বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত এই ছুটি বর্ধিত করা হয়। যা ৫ম দফায় ১১দিন বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়েছিল। আর সর্বশেষ ১৪ দিন সাধারন ছুটি বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে ধাপে ধাপে শেয়ারবাজারও বন্ধ ঘোষণা করেছে ডিএসই।