দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: করোনাভাইরাস প্রকোপ ঠেকাতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ করে দেয় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। লেনদেন বন্ধের এই সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে। ফলে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের কারণে যেসব বিদেশি বিনিয়োগকারী বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছিলেন তারা নিরুৎসাহিত হবেন। এতে শুধু শেয়ারবাজার নয়; সার্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই দেশের অর্থনীতির স্বার্থে অনতিবিলম্বে শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু করা উচিত।

শনিবার (১৬ মে) একটি বেসরকারি টেলিভিশনে আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড পাবলিক পলিসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতির অভূতপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। গত এক দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ সবার ওপরে রয়েছে। এটি একটি অসাধারণ অর্জন।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি দেখে বিদেশিরা বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন। আমি মনে করি, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ও সামগ্রিক অর্থনীতির স্বার্থে অনতিবিলম্বে শেয়ারবাজার খুলে দেয়া উচিত। অর্থনীতির অগ্রগতির জন্য পুঁজিবাজার অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত।’

আরও পড়ুন…….

ঈদ পর্যন্ত পুঁজিবাজার বন্ধ, ৩১ মে লেনদেন চালুর সম্ভাবনা

গ্লোবাল ইনডেক্স থেকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বাদ পড়ার আশঙ্কা!

এদিকে সাধারণ ছুটির মধ্যে গত ১০ মে থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের কাছে সম্মতি চেয়ে চিঠি দেন।

ওই চিঠিতে লেনদেন চালুর জন্য কিছু নীতিমালা শিথিল করার দাবি জানানো হয়। তবে বিএসইসির চার কমিশনের মধ্যে তিনটি পদ খালি থাকায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি কমিশন সভা করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। যে কারণে বিএসইসি তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় মতামত নেয়ার জন্য পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও ১০ মে থেকে লেনদেন চালু করতে পারেনি ডিএসই।

এ বিষয়ে অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিএসইসির কমিশন সভা করতে না পারার কারণে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখার যুক্তিকে আমি সঠিক মনে করি না। এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশনা দিয়েই শেয়ারবাজার চালু করে দিতে পারে।’

সরকারের সাধারণ ছুটির মধ্যে শেয়ারবাজারে লেনদেন চালুর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. রকিবুর রহমান। শেয়ারবাজার নিয়ে শনিবারের আলোচনায় তিনিও অংশ নেন এবং শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু করার দাবি জানান।

রকিবুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজার না খুললে একটি ভুল বার্তা যাবে। বিনিয়োগকারীরা হতাশ হবেন। প্রশ্ন হলো-ঈদের আগে শেয়ারবাজার চালু হলে হয়তো লেনদেন কম হবে। কিন্তু লেনদেন কম হওয়ার কারণে তো বিনিয়োগকারীদের অধিকার ক্ষুণ্ন করা যায় না।’

আরও পড়ুন…….

পুঁজিবাজারে কি আর অস্তমিত সূর্য উদিত হবে

ব্যাংকের প্রকৃত মালিক শেয়ারহোল্ডারা এদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে

তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজারে লেনদেন হবে ইলেকট্রনিক্স মাধ্যমে। কাউকে ব্রোকারেজ হাউসে আসতে হবে না। আমার ছয়টা ব্রাঞ্চ আছে। লেনদেনের এই ছয়টি ব্রাঞ্চে লোকবল লাগবে মাত্র ১৩ জন। মোবাইলের মাধ্যমে, ই-মেইলের মাধ্যমে, অ্যাপসের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বলা হচ্ছে, বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার এসে শেয়ারবাজারে লেনদেনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমার প্রশ্ন হলো- নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদ খালি থাকার কারণে জরুরি সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না-এটা ঠিক নয়। অর্থমন্ত্রী একটা নির্দেশ দিয়েই শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু করে দিতে পারেন।’ বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারের পদ খালি থাকার সমালোচনা করেন অর্থনীতিবিদ জামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বিএসইসি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর চেয়ারম্যান, কমিশনারের পদ খালি থাকবে কেন।

বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকেও ঈদের আগেই শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু করার দাবি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে গত ১৪ মে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যান বরাবর লেখা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, অর্থনীতির দ্বিতীয় চালিকাশক্তি হওয়ার পরও পুঁজিবাজারের লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী আর্থিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক ও পারিবারিকভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। অনলাইন ও মোবাইলে শেয়ার কেনাবেচার সুযোগ রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের হাউসে যেতে হয় না। ব্যাংকখাতও সীমিত আকারে খোলা রয়েছে। তাছাড়া বন্ধ থাকলে বিশ্ব পুঁজিবাজার থেকে আমাদের পুঁজিবাজার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাউসগুলোতে অনেক বিনিয়োগকারীর শেয়ার বিক্রির টাকা আটকা পড়ে আছে। তাই ঈদের আগেই শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু করা জরুরি।

বিভিন্ন পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন চালুর দাবি জানানো হলেও শনিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৩০ মে পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ট্রেডিং, সেটেলমেন্ট কার্যক্রমসহ সব দাফতরিক কাজ বন্ধ থাকবে। তবে বিএসইসি অনুমোদন দিলে সাধারণ ছুটির মধ্যে শেয়ারবাজারে লেনদেন হবে। সেক্ষেত্রে বিএসইসি যেদিন বলবে, সেদিন থেকে লেনদেন হবে।