দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বলেছেন, ‘বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হবে। একই সঙ্গে বিএসইসির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে।’  রোববার বিএসইসিতে যোগদান শেষে দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, সব স্টেক হোল্ডারের অংশগ্রহণে পুঁজিবাজারকে এমনভাবে তৈরি করা হবে, যেন দেশের অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যাতে প্রতারিত না হন এবং বাজার যাতে মৌলভিত্তির ওপর থাকে, সে ব্যাপারে বিএসইসি সচেষ্ট থাকবে।’ এছাড়া সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিনিয়োগবান্ধব পুঁজিবাজার গঠন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন…….

 বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত 

শিবলী রুবাইয়াত বলেন,‘আমরা বেশি কিছু আশা করি না। আমাদের অর্থনীতি যতটা গতিশীল, পুঁজিবাজারকে ততটা গতিশীল হিসেবে দেখতে চাই। এ বাজারে বিশ্বাস-অবিশ্বাস আছে যে কয়েকটি কারণে এগুলো দূর করতে হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করে বাজারের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা হবে।’ তেমনি আমরা ইনভেস্টর ফ্রেন্ডলি একটি সুন্দর ক্যাপিটাল মার্কেট ক্যারেক্টারিস্টিক পরিবেশ তৈরি করবো। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা প্রকৃতপক্ষে উপকৃত হবেন। এছাড়া সবাই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভালো কিছু করবো, যাতে পুঁজিবাজারে গতি ফিরিয়ে আনতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারকে আন্তর্জাতিক সমমানের করে গড়ে তোলা হবে, যাতে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পারি। আমাদের সেই প্রচেষ্টা থাকবে।’ ‘বন্ড মার্কেট নিয়ে আমরা অনেক কাজ করবো। করোনার এ সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যাংকখাতের ওপর চাপ কমিয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বন্ড দিয়ে আমরা বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিজ ও সেক্টরের উন্নয়নে কাজ করবো।’

বিএসইসি’র নতুন চেয়ারম্যান বলেন, ‘ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বা যারা সঞ্চয়কারীদের এফডিআরের রেট কমে যাওয়ার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে দিতে বিশেষ সুবিধা দেওয়া যায় কি-না সে চেষ্টা করা হবে। এতে সবার জন্যই উইন-উইন পরিবেশ তৈরি হবে। যারা বন্ড ইস্যুর জন্য আবেদন করবে, তাদেরকে আগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা দ্রুত অনুমোদন দেওয়া হবে।

আমরা যাচাই বাছাই করেই বন্ডের অনুমোদন দেবো। সেখান থেকে ফিক্সড রিটার্ন ও সিকিউরিটি থাকবে। সুতরাং সঞ্চয়কারীরা এফডিআরের বিকল্প হিসাবে বন্ড ব্যবহার করতে পারবেন। সেজন্য ওভার দ্য কাউন্টার ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রোববার বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিএসইসি ও বিআইসিএম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসচিব ড. নাহিদ হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে চার বছরের জন্য বিএসইসি’র চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর বিকেল ৪টার দিকে তিনি বিএসইসিতে যোগদান করেন।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজের ডিন। তিনি বর্তমানে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ফাইন্যান্স, ব্যাংকিং ও বীমা শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

শিক্ষাজীবনের সকল স্তরেই তিনি প্রথম শ্রেনীতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি ইউ.কে, অস্ট্রেলিয়া ও কোরিয়াতে ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ের উপর রিসার্স ডিগ্রি, ডিপ্লোমা এবং প্রশিক্ষন পেয়েছেন। ঢাকার ধামরাইয়ে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন অধ্যাপক শিবলী। তার সহধর্মিনী শেনিন রুবাইয়াত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ইংরেজী শিক্ষিকা ও বিটিভির ইংরেজী সংবাদ পাঠিকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-্উল-ইসলাম বর্তমানে সাধারণ বীমা করপোরেশনের (এসবিসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত। বিএসইসির নতুন দায়িত্বে যোগ দেওয়ার আগে তাকে এই দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হবে।

উল্লেখ, গত ১৪ মে বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের সর্বশেষ মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তিনি ২০১১ সালের ১৫ মে প্রথম তিন বছরের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।