দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা:  পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে পুঁজিবাজারে আবার সুদিন ফিরবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন বিনিয়োগকারীরা।

অপরদিকে বাজারে ভালো কোম্পানির প্রথামিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আনার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারবেন বলে আশা করছেন বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানও। এ জন্য দেশে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করা কোম্পানি আইপিওর আবেদন করলে দ্রুত অনুমোদন দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

২০১০ সালে মহাধসের পর তদন্ত কমিটির সুপারিশে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি পুনর্গঠন করে সরকার। এতে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান খায়রুল হোসেন। তার সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি চালানোর দায়িত্ব পান অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী, আরিফ খান ও মো. আমজাদ হোসেন। এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির নামও পাল্টে যায়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) থেকে সংস্থাটির নাম বদলে হয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

আরও পড়ুন…….

ব্যাংক থেকে ৭১ শতাংশ বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার

বিএসইসির চেয়্যারম্যানকে সিএসইর পক্ষ থেকে অভিনন্দন

একের পর এক দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদ দিয়ে পুনর্গঠিত বিএসইসি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়লে এক পর্যায়ে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিএসইসির কমিশনারের পদ ছেড়ে দেন আরিফ খান। তবে কিছুদিনের মধ্যে তিনি আইডিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে যোগ দেন। আর মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০১৮ সালে কমিশনার পদ থেকে বিদায় নেন আমজাদ হোসেন।

এর মধ্যেই বিএসইসির কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা, যিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেন।

অন্যদিকে আইন লঙ্ঘন করে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যানের অধ্যাপক ও ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। আইনে সুযোগ না থাকার পরও কিছুদিনের মধ্যে হেলাল উদ্দিন নিজামীর মেয়াদও বাড়ানো হয়।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ সালের ৫ এর ৬ উপধারায় বলা আছে, বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা শুধুমাত্র একটি মাত্র মেয়াদের জন্য পুননিয়োগের যোগ্য হইবেন। কিন্তু খায়রুল হোসেন ও নিজামীর মেয়াদ দুই দফা বাড়ানো হয়।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ দুই পদে এমন নিয়োগের মধ্যে দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন, প্লেসমেন্ট অনিয়মসহ বিভিন্ন কারণে বিএসইসির ব্যাপক সমালোচনা হতে থাকে। চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন ও কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামীসহ পুরো কমিশনার পদত্যাগ দাবি করে মতিঝিলের রাস্তায় দিনের পর দিন বিক্ষোভ করেন বিনিয়োগকারীরা।

তবে সব সমালোচনা পেছনে ফেলে টানা ৯ বছর বিএসইসির দায়িত্ব পালন করে যান খায়রুল হোসেন ও হেলাল উদ্দিন নিজামী। দীর্ঘ ৯ বছর দায়িত্ব পালনের পর ৩ মে বিএসইসির কমিশনার পদ থেকে বিদায় নেন নিজামী। আর ১৪ মে চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিদায় নেন খায়রুল হোসেন। এর মাধ্যমে ২০১০ সালের ধসের পর পুনর্গঠিত কমিশনের সকলে বিএসইসি থেকে বিদায় নেন।

খায়রুল হোসেনের বিদায়ের পর গত ১৭ মে বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বিএসইসিতে নতুন চেয়ারম্যান আসায় সন্তোষ প্রকাশ করেন বিনিয়োগকারীরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, আগের কমিশন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন বিনিয়োগকারীদের জন্য কাজ না করে, ইস্যুয়ারদের জন্য কাজ করেছে। একের পর এক দুর্বল কোম্পানির আইপিও এনেছে।

যে কারণে ২০১০ সালের ধসের পর বাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। পতনের কবলে পড়ে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী আজ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরা আশা করি নতুন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন কমিশন বাজারে ভালো আইপিও আনবেন এবং বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে কাজ করবেন।

নতুন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে বল আশাবাদ ব্যক্ত করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. রকিবুর রহমানও। তিনি বলেন, নতুন চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি অত্যান্ত পজেটিভ। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি নতুন চেয়ারম্যান একটি বিনিয়োগ বান্ধন পুঁজিবাজার গড়ে তুলবেন।

এদিকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, বিনিয়োগ বান্ধন পুঁজিবাজার গড়ে তোলায় হবে তার প্রধান লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে সুনামের সঙ্গে যে সব কেম্পানি ব্যবসা করছে, সেই কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠান আইপিওর আবেদন করলে দ্রুততার সঙ্গে তা অনুমোদন দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হবে।

বিভিন্ন পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে আগের কমিশন একের পর এক দুর্বল কোম্পানির আইপিও দেয়ার কারণে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট দেখা দিয়েছে। এ আস্থা সংকট কাটাতে আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন? এমন প্রশ্নে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, এখন সুদের হার কম। তাছাড়া গত ১০ বছরে আইনি ও কাঠামোগত অনেক সংস্কার হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সকলেই পুঁজিবাজার ভালো করতে আন্তরিক। আমি বিশ্বাস করি সবাই মিলে কাজ করলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে।