দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঈদ যতোই ঘনিয়ে আসছে ততই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে রাজধানী ঢাকা। লকডাউন শিথিল করার কারণে রাস্তায় যেমন বেড়েছে যানবাহন ও মানুষের চাপ । তেমনি কিছু কিছু শপিং মল ও ফুটপাতের দোকান খোলা রাখায় অপ্রত্যাশিতভাবে জনসমাগম বেড়েছে। কাজের সন্ধানেও মাঠে বেরিয়ে যায় নিম্ন আয়ের মানুষ। প্রায় সব স্থানেই মানুষের ভিড় দেখা যাচ্ছে। কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। যে যার মতো চলাচল করছেন।

এছাড়া গলির দোকানগুলো অনেকটা আগের মতোই দিনরাত খোলা রাখায় সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই গাদাগাদি করে কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। সবমিলিয়ে ঢাকা আগের চিরচেনা রূপে ফিরে এসেছিল অনেকটাই। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস।

আরও পড়ুন…….

ঝূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ পায়রা সমুদ্রবন্দরের কাছাকাছি, রূপ নিল সুপার সাইক্লোনে 

বরিশাল বিভাগে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান প্রস্তুত ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক 

মানুষের সাথে পাল্লা দিয়েই সেও নেমে পড়ে তার বীৎস চেহারা দেখানোর প্রতিযোগিতায়। ফলশ্রুতিুতে আক্রান্তের সংখা যেমন বাড়াছে তেমনি বাড়ছে মৃত্যুর মিছিলও। এমন পরিস্থিতিতে সরকার লকডাউনে শিথিলতা উঠিয়ে কঠোর হতে বাধ্য হয়েছে। রাজধানীতে আসা-যাওয়াও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এরইমধ্যে। রোগতত্ত, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যানুযায়ী, রাজধানীর করোনার পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে।

ঢাকার সর্বত্রই এখন ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী এই করোনা ভাইরাস।  সোমবার পর্যন্ত রাজধানীর ১৮৬টি স্থানে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে পাঁচটি এলাকায় দুই শতাধিক রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিনশ’। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬০২ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৮৭০ জনে। যার মধ্যে ৫৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ রোগীই রাজধানীর।

তথ্যমতে, রাজধানীর পাঁচটি এলাকায় দুই শতাধিক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে কাকরাইলে সর্বোচ্চ ২৯৮ জন রোগী রয়েছেন। এর পাশাপাশি যাত্রাবাড়ীতে ২৪২ জন, মহাখালীতে ২৩৫ জন, মোহাম্মদপুরে ২১৩ জন ও রাজারবাগে ২০৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আরো আটটি এলাকায় শতাধিক রোগী পাওয়া গেছে। যার মধ্যে মুগদায় ১৯৮ জন, তেজগাঁওয়ে ১৫০ জন, মগবাজারে ১২৫ জন, লালবাগে ১২২ জন, বাবুবাজারে ১১৭ জন, মালিবাগে ১১৪ জন, উত্তরায় ১১১ জন ও ধানমণ্ডিতে ১০৬ জন করে রোগী রয়েছেন।

অর্ধশতাধিক করে রোগী রয়েছে ১৮টি এলাকায়। যার মধ্যে আগারগাঁওয়ে ৭৮ জন, বাড্ডায় ৯৭ জন, বনানীতে ৫৮ জন, বংশালে ৮৪ জন, বাসাবোয় ৬৫ জন, চকবাজারে ৭০ জন, গেন্ডারিয়ায় ৭৭জন, গুলশানে ৬৮ জন, হাজারীবাগে ৬৫ জন, খিলগাঁওয়ে ৮৬ জন, মিরপুরে ৮৩ জন, মিরপুর-১ এ ৫৮ জন, রামপুরায় ৬০ জন, রমনায় ৫০ জন, শাহবাগে ৭৩ জন, শ্যামলীতে ৭০ জন, স্বামীবাগে ৫০ জন ও ওয়ারীতে ৭১ জন।

রাজধানীতে করোনার প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, করোনা ভাইরাস দেশের বাইরে থেকে আসা মানুষের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তাই ঢাকাতে এ ভাইরাসের প্রকোপ বেশি থাকাটা স্বাভাবিক। বিদেশ থেকে আসা অনেকেই রাজধানীতে বসবাস করেন।

ঢাকার বাইরেও যেসব প্রবাসী থাকেন, তাদের অনেকেই বিমানবন্দরে নেমে প্রথমে কিছুদিন ঢাকাতে ছিলেন। তাদের সংস্পশের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটেছে বলে আমাদের ধারণা। আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর মনে করেন, ঘনবসতির কারণে রাজধানীতে করোনা রোগী বেশি। তিনি বলেন, ঢাকার মতো জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় খুব সহজেই মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সুবিধা দেশের অন্য জায়গার তুলনায় ঢাকায় বেশি, সেটিও একটি কারণ।

এছাড়াও ঢাকার হাসপাতালগুলোর মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়াতে পারে। এদিকে লকডাউন কঠোর করায় ঢাকার প্রবেশ মুখগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাইরের কাউকে ঢাকায় প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না এবং ঢাকার কাউকে বাইরে বের হতেও দিচ্ছেন না। যে কারণে গতকাল ঢাকা জুড়ে নেমে পড়া দীর্ঘ গাড়ির বহর আটকে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজটের। এর ফলে ১০ মিনিটে পথ পেরোতে লেগেছে এক ঘণ্টারও বেশি সময়। পুলিশ বলছে, নগরী থেকে বের হওয়ার পথে বাধা পাচ্ছে যানবাহনগুলো। আর তাতেই দেখা দিয়েছে এই যানজট।