দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ আজ উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় প্রবেশ করবে। এমনকি আজ ১৯ মে রাত থেকে ২০ মে বুধবার বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে এটি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহওয়াবিদ বজলুর রশিদ বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, মূলত বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তের সুন্দরবন অংশে ঘূর্ণিঝড়টির মূল অংশ আঘাত হানতে পারে।

তিনি আরো জানান, ঝড়ের মূল অংশ সুন্দরবন অংশে এলেও এর প্রভাব পড়বে চারদিকেই। তবে এখনো এটি এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে। তাই নানা পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। তার মতে, ঝড়টি ভারতের দীঘা থেকে বাংলাদেশের সন্দ্বীপ এলাকার মধ্য দিয়ে যাবে এবং এর মূল অংশ ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের সুন্দরবন অংশে আসবে।

এদিকে আজ মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়ার ২৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ আভাস দিয়েছে আবহাওয়াবিদরা। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্পানের বর্তমান বাতাসের গতি ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার, যেটি ধীরে ধীরে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, পশ্চিম মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুপার সাইক্লোন ’আম্পান’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় (১৬.০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৬.৭ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।

এই সুপার সাইক্লোন আজ সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৯০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

এটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে মঙ্গলবার শেষরাত হতে বুধবার (২০ মে) বিকেল অথবা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

এদিকে সুপার ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ (সাত) নম্বর পুনঃ ০৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৭ নম্বর বিপদ সংকেত (পুনঃ) ০৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ০৬ (ছয়) নম্বর পুনঃ ০৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৬ (ছয়) নম্বর পুনঃ ০৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।