দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: উপকূলের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়টি এখন উপকূলের চারশো কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করছে। এটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার বিকাল/সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের নিকট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আম্পানের প্রভাবে ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানেও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে।

আম্পানের প্রভাবে বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে খুলনাঞ্চলজুড়ে। মধ্যরাতের পর থেকে খুলনায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দমকা হাওয়া। ক্ষণে ক্ষণে ভারী বৃষ্টিও হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।

সময় যতো যাচ্ছে ততোই বাতাসের তীব্রতা বাড়ছে। নদীতে বাড়ছে জোয়ারের পানি এবং উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে। মংলা বন্দরসহ আশপাশের নদীর নৌ-যানগুলো নদীর পাড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিপাত এবং দমকা হাওয়া লক্ষ্য করা গেছে।

সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনা জেলার কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলাসহ আশপাশের অঞ্চলে বয়ে চলেছে দমকা হাওয়া, হচ্ছে বৃষ্টিপাত। স্থানীয় নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ফুট উচ্চতায় বয়ে চলেছে। দাকোপ ও কয়রা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার জনসাধারণ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ৫২ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মংলা সমুদ্র বন্দর এলাকায় ১০০৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তবে বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্রের ভেতর-বাইরে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।

আম্পানের প্রভাবে চট্টগ্রামে ক্রমেই উত্তাল হচ্ছে সাগর। তীরে আছড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ। সেই সঙ্গে অব্যাহত রয়েছে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিপাত। বন্দরের ক্ষতি এড়াতে বহির্নোঙর থেকে ১শ’ জাহাজকে গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বেড়ি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। আম্পানের প্রভাব পড়েছে বরিশালেও। সেখানে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যেতে শুরু করেছে লোকজন।

ভোলায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে নদীর পানি ক্রমেই বাড়ছে। সেইসঙ্গে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। অর্ধশতাধিক চরাঞ্চল থেকে এরইমধ্যে দুই লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সময় যত গড়াচ্ছে বৃষ্টির সঙ্গে বাড়ছে বাতাসের গতিবেগ। বেড়িবাঁধ থেকে মানুষকে সরিয়ে নিতে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান বিকাল বা সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।

বুধবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় আম্পান উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় (২০.২ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৭.৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।

এটি আজ সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫১৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৪৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৭০ কিঃ মিঃ দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ২০ মে ২০২০ বিকাল/সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের নিকট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিঃ মিঃ এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ২০০ কিঃ মিঃ যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিঃ মিঃ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১০ (দশ) নম্বর পুনঃ ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত (পুনঃ) ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

এছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ০৬ (ছয়) নম্বর পুনঃ ০৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ০৯ (নয়) নম্বর পুনঃ ০৯ (নয়) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৯ (নয়) নম্বর পুনঃ ০৯ (নয়) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

ঘূর্ণিঝড় এবং দ্বিতীয় পক্ষের চাঁদের সময়ের শেষ দিনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০-১৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় আম্পান অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ১৪০-১৬০ কিঃ মিঃ বেগে দম্কা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।