ওরিয়ন গ্রুপের ৩ কোম্পানির মুনাফায় ধস
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওরিয়ন গ্রুপের তৃতীয় প্রান্তিকের মুনাফায় ধস নেমেছে। কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে থাকলেও মুনাফায় ধন নামায় কিছুটা দুশ্চিন্তায় বিনিয়োগকারীরা। আজ ওরিয়ন গ্রুপের ৩ কোম্পানির ইপিএস ঘোষণা করছে। গত বছরের তুলনায় ৩টি কোম্পানির মুনাফায় কমেছে। এর মধ্যে কোহিনুর কেমিক্যালের মুনাফায় বেশি ধস নেমেছে।
ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ’২০) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কোম্পানি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় হয়েছে ০.৬১ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ০.৯৫ টাকা। এদিকে নয় মাসে (জুলাই’১৯-মার্চ’২০) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় হয়েছে ২.৭৫ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৩.০১ টাকা।
এছাড়া কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ৭৬.৬৮ টাকা (including Revalution) এবং শেয়ার প্রতি সমন্বিত নেট অপারেটিং ক্ল্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ২.৭৩ টাকা।
ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড চলতি ২০১৯-২০ হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি’২০-মার্চ’২০) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আজ বুধবার (২০ মে) অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালন পর্ষদের সভায় ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর তা প্রকাশ করা হয়
কোম্পানি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ২৪ পয়সা। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৩১ পয়সা ইপিএস হয়েছিল।
হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’১৯-মার্চ’২০) ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৩৮ পয়সা। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে ১ টাকা ৪২ পয়সা ইপিএস হয়েছিল।
আলোচিত তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ২ টাকা ৭৭ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ৪ টাকা পয়সা ২২ ছিল। গত ৩১, মার্চ ২০২০ তারিখে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১২ টাকা ৬০ পয়সা।
কোহিনূর কেমিক্যাল: মহামারি করোনাভাইরাস প্রকোপের মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোহিনূর কেমিক্যাল কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের মুনাফায় বড় ধরনের ধস নেমেছে। যার ফলে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কমে প্রায় চার ভাগে এক ভাগে নেমে এসেছে।
শুধু আগের বছরের তুলনায় নয়, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কোম্পানিটি যে মুনাফা করেছে এর আগে কখনো এক প্রান্তিকে এতো কম মুনাফা করেনি ওষুধ ও রসায়ন খাতের এ কোম্পানিটি।
এমনকি চলতি হিসাব বছরের আগের দুই প্রান্তিকের মুনাফার ধারে কাছেও নেই জানুয়ারি-মার্চের মুনাফা। প্রথম প্রান্তিকের (২০১৯ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর) ছয় ভগের এক ভাগ এবং দ্বিতয় প্রান্তিকের (২০১৯ অক্টোবার-ডিসেম্বর) পাঁচ ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা।
বুধবার অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা শেষে প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এমন তথ্য জানা গেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৫৯ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল এক টাকা ৯৯ পয়সা। সে হিসাবে আগের বছরের তুলনায় শেয়ার প্রতি মুনাফা কমেছে এক টাকা ৪০ পয়সা।
করোনা প্রকোপের মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে মুনাফায় বড় ধস নামলেও হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাসে (২০১৯ সালের জুলাই-ডিসেম্বর) কোম্পানিটি ভালো মুনাফা করে। এতে ছয় মাসের ব্যবসায় শেয়ার প্রতি মুনাফা হয় পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে তিন টাকা ৬ পয়সা এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে দুই টাকা ৬৩ পয়সা শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়।
প্রথম দুই প্রান্তিকে ভালো ব্যবসা করার পরও তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফায় ধস নামায় হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসের ব্যবসায়ও কেম্পানিটির মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কমে গেছে।
২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে পাঁচ টাকা ৭৭ পয়সা, যা আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ছয় টাকা ৩ পয়সা। অর্থাৎ ৯ মাসের ব্যবসায় শেয়ার প্রতি মুনাফা কমেছে ২৬ পয়সা।
মুনাফা কমলেও কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৬ টাকা ৮৫ পয়সা, যা ২০১৯ সাল মার্চ শেষে ছিল ৪১ টাকা ৭ পয়সা।
এদিকে অপারেটিং ক্যাশ ফ্লোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের মার্চ সময়ে শেয়ার প্রতি অপারিটিং ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ২১ পয়সা, যা ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের মার্চ সময়ে ছিল ১২ টাকা ৮ পয়সা।
ভালো মুনাফার সঙ্গে নিয়মিত ভালো লভ্যাংশ দেয়ায় কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের বেশ আকর্ষণ রয়েছে। যে কারণে করোনার ধসের পর কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৪৭২ টাকা ৮০ পয়সায় অবস্থান করছে।
২০ কোটি ১৮ লাখ পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা দুই কোটি এক লাখ ৮২ হাজার ৫০০টি। এর মধ্যে ৪৮ দশমিক ৭২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৩৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং ১৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।