দেশ প্রতিক্ষণ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার হার উপজেলা থেকে মহানগর এলাকায় বেশি। ১৯ মে পর্যন্ত চট্টগ্রামে আক্রান্ত হন ৯৭২ জন। এর মধ্যে মহানগরে ৬৯৬ জন অর্থাৎ ৭২ শতাংশ এবং ১৪ উপজেলায় ২৭৬ জন অর্থাৎ ২৮ শতাংশ। নগরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন হালিশহরে, উপজেলায় বেশি আক্রান্ত পটিয়ায় ৪৬ জন এবং এরপর হাটহাজারীতে ৩৪ জন। চিকিৎসকরা মনে করছেন, শহরে ঘনবসতি, লকডাউন না মানা, মানুষের অবাধ যাতায়াতসহ নানা কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। ১৯ মে এক দিনেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, বিআইটিআইডি, সিভাসু ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে ৭২৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৫৭ জন শনাক্ত হন; যার মধ্যে মহানগর এলাকায় ২২৫ আর উপজেলায় ৩২ জন।

আরও পড়ুন…….

করোনাভাইরাসে রেকর্ড ২৪ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়াল ৩০ হাজার 

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগরের তুলনায় উপজেলায় করোনা আক্রান্তের হার বেশি। শহরে আক্রান্তের হার ৭২ শতাংশ আর উপজেলায় ২৮ শতাংশ। গ্রামের তুলনায় শহরে ঘনবসতি বেশি। গ্রামের মানুষের দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করার সুযোগ আছে। এসব কারণে শহরে আক্রান্তের হার বেশি বলে মনে হয়। তবে সবাইকে অবশ্যই সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি।’

পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা জাহান উপমা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পটিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬ জন এবং মারা গেছেন চারজন। একজন আক্রান্ত হওয়ার পর পরিবারের অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। সামাজিক সংক্রমণের ফলে এমনটি হচ্ছে। আমরা অভিযান করে অনেকবার বলেছি বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হতে। কিন্তু কে শোনে কার কথা।’

জানা যায়, চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ক্রমে খারাপের দিকে যাচ্ছে। করোনার প্রকোপ শুরুর পর চট্টগ্রামকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। লকডাউনের মধ্যে মানুষের আনাগোনা কমছে না। রোগী বেড়ে যাওয়ায় এখন হাসপাতালে জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। গত বুধবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে আক্রান্ত হন ১ হাজার ২৩৪ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১২৭ জন অর্থাৎ ১৩ শতাংশ। মারা গেছেন ৪৪ জন। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৩৭৪ জন এবং আইসোলেশনে ১৫৬ জন।

চমেক হাসপাতালে ১০০ শয্যার ইউনিট চালু : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১০০ শয্যা নিয়ে চালু হলো করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় পৃথক ইউনিট। গতকাল দুপুরে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। প্রথম দিনে করোনা ইউনিটে তিনজন রোগী ভর্তি হন। করোনা ইউনিটে রোগীদের ডায়ালাইসিস ব্যবস্থাসহ ১০টি আইসিইউ শয্যাও আছে। জানা যায়, হাসপাতালের নিচতলায় জরুরি বিভাগের পার্শ্ববর্তী তিনটি ওয়ার্ড-ক্যাজুয়াল্টি, ফিজিক্যাল মেডিসিন এবং চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এখন থেকে হাসপাতালের মূল প্রবেশ পথ নিচতলার ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে জরুরি বিভাগ পর্যন্ত পুরো ব্লকটি করোনা ব্লক হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। নতুন নিয়োগ পাওয়া ৩০ জন চিকিৎসক ও ১৬৬ জন নার্স করোনা ইউনিটের রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করবেন।

চমেক হাসপাতালের উপপরিচালক আফতাবুল ইসলাম বলেন, ‘আগে থেকে চালু থাকা অবজারভেশন সেলে থাকা তিন রোগী দিয়ে করোনা ইউনিট চালু হয়েছে। নতুন করে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক-নার্সরা রোস্টার ডিউটি অনুযায়ী রোগীদের সেবা প্রদান করবেন।’

জানা যায়, চট্টগ্রামে করোনা রোগী চাপ বাড়লে নতুন করে শয্যা প্রস্তুতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এর প্রেক্ষিতে সরকার গত ১৬ মে চমেকে সব ধরনের সাধারণ রোগীর চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রেখে করোনা রোগীর চিকিৎসায় অনুমোদন দেয়। এখন থেকে করোনা পজিটিভ রোগীরা চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন।