দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশে দেশে চলছে করোনা মহামারি। চলছে লকডাউন। এ অবস্থায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী তথা নিম্নবিত্তের মানুষ। মাসের পর মাস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে এখন পেটের ক্ষুধা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের কোটি কোটি শ্রমিক। এই লকডাউনে অনেক শ্রমিক ন্যূনতম বেতনও পাচ্ছেন না।

এমনই পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আর্থিক সংকটে পড়ে পরিবারসহ ৯ শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের গোরেকুন্টা গ্রামের একটি কুয়ো থেকে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই ৪ শ্রমিকসহ ওই ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনাকে গণআত্মহত্যা বলে দাবি করছে সেখানকার পুলিশ। নিহতদের মধ্যে ৬ জন পশ্চিমবঙ্গের এবং একই পরিবারের, দুজন বিহারের এবং অপরজন ত্রিপুরার।

শনিবার (২৩ মে) ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে লকডাউনের কারণে কর্মস্থল থেকে গ্রামে ফিরতে পারছিলেন না ওই শ্রমিকরা। গত ২ মাস ধরে জুট মিল ও অন্য কারখানা থেকে বেতনও পাচ্ছিল না। কারও শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। পরিবারের কাছে ফিরতে না পারা, আশ্রয়হীন হয়ে পড়া ও চরম আর্থিক সংকট মাথায় নিয়ে ওই শ্রমিকরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। যা তাদেরকে আত্মহত্যার পথে টেনে নেয়।

মৃত ৯ শ্রমিকের একজন মকসুস আলম। বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে। গত ২০ বছর ধরে তিনি গোরেকন্টার এক জুট মিলে কাজ করতেন। কারখানার পাশেই দুটি ঘরে পরিবার নিয়ে থাকতেন। লকডাউনে বেতন-উপার্জন সব থেমে গেলে গ্রামে ফেরার তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তেলেঙ্গানার স্থানীয় এক দোকানির গুদামে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন অসহায় মকসুস। গুদামের পাশেই ওই কুয়োটি। যে কুয়ো থেকে মকসুস, তার স্ত্রী নিশা, দুই ছেলে সোহেল ও শাবাদ, মেয়ে বুশরা খাতুন ও তিন বছরের নাতি শাকিলের লাশ উদ্ধার করা হয়।

কুয়া থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া অপর একজনের নাম শাকিবল আহমেদ। তিনি ত্রিপুরার বাসিন্দা। তিনি জুট মিলের গাড়ি চালাতেন। এছাড়া অপর দুজন বিহারের শ্রীরাম ও শ্যাম অন্য একটি কারখানায় কাজ করতেন। গত বৃহস্পতিবার ওই কুয়ো থেকে ৪ জনের লাশ ও পরের দিন শুক্রবার উদ্ধার করা হয় আরও ৫ জনের লাশ।

একই পরিবারের ৬ জনসহ এই ৯ জন কুয়োর ভেতরে কীভাবে মারা গেলেন- একটি কি সত্যিই গণআত্মহত্যা নাকি এর পেছনে অন্য কোনও রহস্য লুকিয়ে আছে, তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে সি রাও জানিয়েছেন, কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের ঘরে ফেরার জন্য ট্রেন ও বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হেঁটে যেন কেউ বাড়ি না ফেরেন।