দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের নতুন বাজেটে কালোটাকা সাদা করার বড় ধরনের সুযোগ দেওয়া হতে পারে। করোনা পরিস্থিতিতে রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। করোনাভাইরাসে সৃষ্ট মহামারিতে পুঁজিবাজারেও তারল্য সংকট তৈরী হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে কালো টাকা ৫ বছরের জন্য বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার দাবি তোলা হয়। অবশেষে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। যা বাস্তবায়নে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন…….

আশা জাগাচ্ছে নবগঠিত বিএসইসি, পুঁজিবাজারে ভাল হওয়ার কারন সমুহ 

বাজেটে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য থাকছে চমক: বিএসইসি চেয়ারম্যান 

পুঁজিবাজারকে যে কোনো মুল্যে শক্তিশালী বাজার গড়ে তোলা হবে: শিবলী রুবাইয়াত 

এছাড়া আগামী বাজেটে এবারে নতুন করে কর হার কমানো বা বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন এনবিআরের একজন কর্মকর্তা। তবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কিছু বিনিয়োগে আয় কর অব্যাহতি ছিল এবারে তা সংশোধন করে উৎস্যে ৪৪ শতাংশ করারোপ করা হতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আপাতত কালোটাকা সাদা করার দুটি উপায় চিন্তা করা হচ্ছে। প্রথমত, ঢালাওভাবে বিনা প্রশ্নে সাদা করার সুযোগ। সে ক্ষেত্রে ৫-১০ শতাংশ কর দিয়ে অবৈধ উপায়ে উপার্জিত টাকা ঘোষণায় আনলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এমন সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

আরেকটি উপায় হলো, বিদ্যমান কালোটাকা সাদা করার সুবিধা সম্প্রসারণ করা। বর্তমানে এলাকাভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে কালোটাকায় ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ আছে। রাজধানী, চট্টগ্রাম, জেলা শহর, পৌর এলাকাভেদে কালোটাকায় ফ্ল্যাট কিনে বর্গমিটারপ্রতি ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কর দিলে কোনো প্রশ্ন করছে না এনবিআর। আগামী অর্থবছরে করের পরিমাণ কমিয়ে জমি কেনায়ও কালোটাকা ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হতে পারে।

এদিকে এরবাইরে কালো টাকা সাদা করার বিদ্যমান আইনে সংশোধন এনে শুধুমাত্র ২০ শতাংশ করারোপে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হতে পারে। এ ছাড়াও শেয়ারবাজারে ও কৃষি শিল্পে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হতে পারে। বর্তমানে হাইটেক শিল্প পার্ক ও বিশেষ ইকনোমিক জোনে কালো টাকা বিনিয়োগ করা যায়। আবার নির্ধারিত করের উপর ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে ও ফ্লাট ক্রয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন…….

পুঁজিবাজারে লেনদেন চালুতে বিএসইসির অনাপত্তি 

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির অন্যান্য খাতের ন্যায় পুঁজিবাজারেও মন্দাবস্থা। যা কাটিয়ে তুলতে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা এরইমধ্যে অর্থমন্ত্রীর কাছে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার দাবি করেছেন। যা অনেকটা বাস্তবায়নের পথে।

এদিকে পুঁজিবাজারের বিদ্যমান মন্দাবস্থা কাটিয়ে তুলতে গত ২৮ এপ্রিল ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) পক্ষ থেকে কালোটাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগের প্রস্তাব দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া ওই প্রস্তাবে বলা হয়, শেয়ারবাজারে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। যে অর্থ ১:১ ভিত্তিতে বন্ড মার্কেট ও সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করার শর্তে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া বন্ডে বিনিয়োগকৃত অর্থ ৩ বছরের জন্য ব্লক থাকবে। যে বন্ড এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে লেনদেনযোগ্য হতে হবে।

এছাড়া বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুজিঁবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকেও কালোটাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। আগামী ৫ বছরের জন্য শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ চায় সংগঠনটি। প্রস্তাবনায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করার নিঃশর্ত সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এনবিআর সূত্র জানায় এ পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে। তত্বাবধায়ক সরকারের সময় হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি সিপিডি কালো টাকা সাদা করার বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে তারা বলেছে, এতে সমাজে দুর্নিতিকে প্রশ্রয় দেয়া হয়। সৎ করদাতারা কর দিতে নিরুৎসাহিত হয়।

এ বিষয়ে সাবেক এনবিআর সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, শুধুমাত্র সামরিকবাহিনী সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমরা কিছু টাকা সাদা করতে পরেছিলাম। এর বাইরে আরো ১০ বার এ সুযোগ দেয়া হয়েছে। যাদের টাকা আছে তারা কেউ সাদা করে না। কারণ বিনা প্রশ্নে এনবিআর কারো টাকা মেনে নিলেও দুদকসহ অন্য প্রতিষ্ঠান এসব মানেনা। যারা ট্রুথ কমিশনে টাকা দিয়েছিলেন তাদের তো আবার তদন্ত করা হয়েছে। যাদের বেশি কালো টাকা আছে তারা জানেও কিভাবে টাকা রাখতে হয়।