দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ রোববার লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহামারীতে কি ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে। ব্যাংকগুেলো যদি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ না করে কেমন হবে পুঁজিবাজার। তবে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দিতে বিনিয়োগে আগ্রহী সরকারি ব্যাংকগুলো।

রোববার থেকে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শুরু করছে। দিনশেষে সূচকের উত্থানের ফলে স্বস্তি বিরাজ করছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। বিশেষ করে নতুন কমিশনের শুরুতে সূচকের উত্থান ইতিবাচক দিক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাছাড়া বিএসইসি নতুন কমিশনের আন্তরিকতার ফলে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার পরিবেশ তৈরি হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুন…….

নতুন কমিশনের প্রথম পুঁজিবাজার, করোনাকালে মূল্যসূচকের উত্থান 

এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের চেয়ে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এ মুহূর্তে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানিয়েছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাদের প্রত্যাশা, ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে ফিরলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে। এদিকে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোমবার (১ জুন) বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করবেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। দুই পক্ষের ওই বৈঠকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে বিএসইসি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, বিভিন্ন কারণে ধরাবাহিকভাবে দীর্ঘদিন পুঁজিবাজারে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য সম্মিলিতভাবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের জন্য দেশের ৫৯টি তফসিলি ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে প্রতিটি তফসিলি ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ পেয়েছে ব্যাংকগুলো।

আরও পড়ুন…….

তথ্য মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা জারির পর সর্বশেষ গত ২৪ মার্চ পর্যন্ত ১৬টি ব্যাংক পুঁজিবাজারে ১৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।ব্যাংকগুলো হলো: সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বিডিবিএল, পূবালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও সাউথ ইস্ট ব্যাংক।

এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব এইচ মজুমদার বলেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করলে বাজারের অবস্থা ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আসবে। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি যেভাবে অর্থ ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে সার্কুলার জারি করেছে তাতে পুঁজিবাজার ভাল না হওয়ার কোন কারন দেখছি না। এছাড়া নতুন কমিশনের প্রতি সাধারন বিনিয়োগকারীদের আস্থা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসই’র পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শুরু করলে চিত্র পরিবর্তন হবে।তাছাড়া সরকারী ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে বাজার ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতায় ফিরবে। তেমনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য কোনো শর্ত ছাড়াই ৫ বছরের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করে বাজারকে সহায়তা করবে এটিই আমার প্রত্যাশা।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘পুঁজিবাজার খোলার পর পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে অবশ্যই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পুঁজিবাজারে আমাদের আগে থেকেই বিনিয়োগ রয়েছে। আর বর্তমানে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংকের চাপ অনেক বেশি। তারপরেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।’

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ সামস-উল ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই আমরা বিনিয়োগ করব। সরকারি ব্যাংক হিসেবে এটা আমাদের দায়িত্ব। এর আগেও আমরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছি। আমরা লাভ-লোকসান বুঝি না। আমরা চাই অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে। ক্ষেত্রে আমরা বিনিয়োগ করলে পুঁজিবাজারসহ সার্বিক অর্থনীতি ভালো থাকবে।’

রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারে রূপালী ব্যাংক প্রচুর বিনিয়োগ রয়েছে। দীর্ঘদিন বিভিন্ন কারণে পুঁজিবাজার পতনমুখী ছিল। সে সময়ে আমরা প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও প্রচুর বিনিয়োগ করেছি। করোনার কারণে পুঁজিবাজার বেশ কিছুদিন বন্ধ থেকে আজ থেকে লেনদেন হলো। এ মুহূর্তে আমরা সপ্তাহখানেক পর্যবেক্ষণ করব তারপর বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেব।’

ইস্টার্ন ব্যাংকের (ইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর কেবল ১দিন পুঁজিবাজারে লেনদেন হলো। সামনে কী অবস্থা হয় দেখব। তারপর ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। করোনার প্রভাব মোকাবিলায় আমরা আগে প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা ঠিকমতো বিতরণ করি তারপরেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা প্রণোদনা প্যাকেজগুলো বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রণোদনার ইস্যুগুলো সমাধান হোক তারপর পুঁজিবাজারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। বাণিজ্যিকগুলো এখন তার বেসিক দায়িত্ব পালন করছে।’