দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: কারোনাভাইরাসের কারণে টানা ৬৬ দিন পরে লেনদেন চালুর তৃতীয় কার্যদিবসেও দর পতন দেখতে হলো বিনিয়োগকারীদের। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মঙ্গলবার সবকটি সূচকের পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

এর মাধ্যমে টানা দুই কার্যদিবস পতনের মধ্যে থাকল পুঁজিবাজার। মূলত করোনা পরিস্থিতিতে আবারও লকডাউনের সময় বাড়তে পারে এমন গুজবেই পুঁজিবাজারে বড় পতন হয়েছে। এছাড়া বিদেশীদের শেয়ার বিক্রির চাপে দরপতনের অন্যতম কারন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আগের কার্যদিবসের মতো এদিনও দুই বাজারেই লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম অপরিবর্তিত থাকে। তবে যে কয়কটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে বেশি। ফলে সূচকের পতন হয়েছে।

এদিন লেনদেনের শুরুতেই শেয়ারবাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। প্রথম ১০ মিনিটেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ১৩ পয়েন্ট কমে যায়। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পতনের মাত্রা।

আরও পড়ুন…….

এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ২৯ পয়েন্ট কমে ৩ হাজার ৯৬৯ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ ৯ পয়েন্ট কমে ৯২০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিকে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া মাত্র ১২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৩টির। আর ২২৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৫৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে বাজারটিতে লেনদেন হয় ১৯৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৪২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। টাকার অঙ্কে বাজারটিতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা গ্রামীণফোনের ১০ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ছয় কোটি ১০ লাখ টাকার লেনদেনের মাধ্যমে এর পরের স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা।

এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বেক্সিমকো, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, মুন্নু সিরামিক, এক্সিম ব্যাংক, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ওরিয়ন ফার্মা এবং আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ৮০ পয়েন্ট। লেনদেন হয়েছে ৫৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ১২৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১০টির, কমেছে ৩০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৮৮টির।

আরও পড়ুন…….

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যত দ্রুত অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে তত দ্রুততার সঙ্গে শেয়ারবাজারে বিদেশীরা ফিরে আসবেন। এখন যেহেতু বাজারে মূল্য অনেক কম, এ সময় বিদেশীদের কাছে বাজার আকর্ষণীয়। আর্থিক বিশ্লেষণ দৃষ্টিকোণ থেকে এ সময়ে বিদেশীদের আসা উচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হলো কভিড। শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিদেশী বিনিয়োগ থাকলেও তারা বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশে এসে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠান যখন এখানে বিনিয়োগ করে, তারা এখানে এসে আর্থিক বিশ্লেষনগুলো করে। ব্যাংকে যায়, সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে যায়। এভাবে পরিস্থিতি যাচাই করে তারা প্রতিবেদন তৈরি করে। এখন বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিশ্লেষণ করবে কীভাবে? আর বিশ্লেষণ না করে তারা বিনিয়োগ তো করবে না।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হওয়ার কারণেই পতন হয়েছে। তারা ভীত হয়ে কম দরে শেয়ার বিক্রি করতে চেয়েছেন। যে কারণে শেয়ারদরর কমেছে। তারা বলেন কোনো কারণে যদি সরকারি ছুটি বাড়ে কিংবা লকডাউন দেওয়া হয় তাতে কিন্তু শেয়ারদর কমে যাচ্ছে না। পোর্টফলিও থেকে শেয়ার উধাও হয়েও যাচ্ছে না। তাহলে কেন তারা ভয় পাবেন।

এই প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য কম। তারা যে কোনো গুজবে বেশি কান দেন। আর এ কারণে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। যে কোনো অবস্থায়ই তাদের ভেবে-চিন্তে কাজ করা উচিত। হুটহাট সিদ্ধান্তের কারণে তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।