দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় নিসর্গের তাণ্ডব শুরু হয়ে গেছে মুম্বাইসহ গোটা মহারাষ্ট্রে। আজ ১টার আগেই ব্যাপক বাতাসের দাপটে উপড়ে গেছে বহু গাছ। ১ টার পরেই মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলায় ঝড়ের মুখ প্রবেশ করেছে। মুম্বাইতে চলছে ব্যাপক বাতাস। সঙ্গে বৃষ্টিও। আলিবাগের দক্ষিণ দিক দিয়ে এটি যাবে বলে জানাচ্ছেন দেশটির আবহাওয়াবিদরা। গতি হবে সর্বোচ্চ ১৪০ কিলোমিটার। এটি লেভেল ২-এর ঘূর্ণিঝড় বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া অফিস।

বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টা নাগাদ স্থলভূমিতে প্রবেশ করেছে নিসর্গ। তবে পূর্বাভাসের তুলনায় বাতাসের বেগ অনেক বেশি। ঘণ্টায় ১২০-১৪০ কিলোমিটার বেগে বইছে ঝড়। সমুদ্রে থাকার সময়ে ঘূর্ণিঝড়টির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০০ কিলোমিটার ছিল। ঝড়ের বেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০-১২০ কিলোমিটার।

আবহাওয়া দফতরের বুলটিনে বলা হয়েছে, মূলত রায়গড় জেলা-সহ মহারাষ্ট্র উপকূলের উপর দিয়ে যাচ্ছে নিসর্গের ডানদিকের দেওয়ালের মেঘের অংশটি। পরবর্তী তিন ঘণ্টায় তা পর্যায়ক্রমে মুম্বাই এবং থানে জেলায় প্রবেশ করবে। এক ঘণ্টার মধ্যে স্থলভূমিতে প্রবেশ করার প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং পরবর্তী তিন ঘণ্টায় সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে।

বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানায়, গোয়া এবং মুম্বইয়ে ডপলার ওয়েদার রেডার (ডিআরডব্লিউ)-এ নিরন্তর মনিটরিং করা হচ্ছে এই ঝড়। আবহাওয়া অফিস বলেছে, রেডারের মাধ্যমে বোঝা গিয়েছে যে নিসর্গের চোখ প্রায় ৬৫ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। প্রতি ঘণ্টায় তার ব্যাস কমেছে। যার অর্থ আরও শক্তিশালী হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ।

আবহাওয়া দফতর আগেই জানিয়েছিল, উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় বাতাসের গতিবেগ হতে পারে ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এ ছাড়া সাড়ে ছ’ফুট পর্যন্ত উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় নিসর্গের আক্রমণে মুম্বাইসহ গুজরাট, দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন দিউ-এব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথে এই দুই রাজ্য ও দুই কেন্দ্রশাসিত অর রাজ্যই পড়বে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের কর্মকর্তারা। তাই সেখানে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি গোয়ায় জারি হয়েছে ভারী বৃষ্টির সতর্কবার্তা।

আরও পড়ুন…….

কাপড়ের মাস্ক করোনা প্রতিরোধে বৈজ্ঞানিক সমাধান 

মুম্বাই পুলিশ মঙ্গলবার রাতে মুম্বাই উপকূলে যাতায়াতের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। শুধু মহারাষ্ট্র থেকেই ১৯ হাজার মানুষকে উপকূল এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মঙ্গলবারই রাজ্যবাসীকে ঘর থেকে বাইরে না বেরনোর জন্য বেদনর্জি জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। বিমান চলাচলে সতর্কবার্তা জারি করেছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ)।

উপকূল বরাবর মহারাষ্ট্র ও গুজরাট দুই রাজ্য মিলিয়ে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মোট ৩০টি দল নামানো হয়েছে। এক একটি দলে রয়েছেন ৪৫ জন। উপকূল এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর কেউ যাতে সমুদ্রের ধারে কাছে না আসতে পারে জন্য টহল দিচ্ছেন এই বাহিনীর সদস্যরা। মৎস্যজীবী ও বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের উপর সতর্কবার্তা দিয়েছে উপকূলরক্ষী বাহিনী।

প্রসঙ্গত, বিগত প্রায় ১৪০ বছরের ইতিহাসে মুম্বাইয়ে এটিই প্রথম ঘূর্ণিঝড়। আরব সাগরের উপকূলে গড়ে ওঠা মুম্বাই শেষ ঘূর্ণিঝড় দেখেছিল ১৮৮২ সালে। এখনকার মতো সেই সময় ঘূর্ণিঝড়ের আলাদা করে নামকরণ করা হত না। মূলত যেখানে উপকূলে আছড়ে পড়ত, সেই জায়গার নামানুসারেই নাম হত। তাই সেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল ‘বম্বে সাইক্লোন’। বম্বে সাইক্লোনে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় এক লাখ মানুষ। ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের রেকর্ড বুকে তার আগে মুম্বাইয়ে আর কোনও সাইক্লোনের নজির নেই।

এছাড়া ২০০৫, ২০১৭ ও ২০১৯ সালে মুম্বাই ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হলেও কোনওটির কারণ সাইক্লোন ছিল না। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আদম সোবেল জানান, ১৮৯১ সালের পর গুরুতর কোনও ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতা নেই মুম্বইয়ের। মুম্বাইয়ে হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সম্ভবনায় একাধিক ভৌগোলিক কারণকে দায়ী করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।