দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: খায়রুল হোসেন নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ উল্লেখ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান বলেছেন, বর্তমান কমিশন খুবই শক্তিশালী। তবে ৯ বছরের জঞ্জাল মাত্র ৯ দিনে সাফ হবে না। এর জন্য অন্তত ৯ মাস সময় দিতে হবে। শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রকিবুর রহমান বলেন, গত পরশুদিন ৪৮ কোটি টাকার (প্রকৃত ৪৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা) লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেন কমার একটা কারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভয় থাকতে পারে ভবিষ্যতে আবার কি লকডাউন হবে? পুঁজিবাজার কি বন্ধ হয়ে যাবে? দ্বিতীয় কারণটি হলো ফ্লোর প্রাইস।

ফ্লোর প্রাইসের কারণে কম লেনদেন হলেও বর্তমান সময়ের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এই পরিচালক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সব সময় এই ফ্লোর প্রাইস থাকবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয়া যেতে পারে।

পুঁজিবাজারে অরাজকতা চলছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বাজারে কি কোনো স্বচ্ছতা ছিল? কোন জবাবদিহিতা ছিল? পুঁজিবাজারে আইনের কোনো শাসক ছিল? বছরের পর বছর বিএসইসি আইনের অনেক পরিবর্তন করেছেন। অনেক রুলস রেজুলেশন পরিবর্তন করেছেন। কিন্তু সেগুলো পুঁজিবাজারে কোনো প্রভাব ফেলতে পেরেছে? একটিও পারিনি।

আরও পড়ুন…….

পুঁজিবাজারে দুই হাজার কোটি টাকা হাওয়া! 

বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশনকে অত্যন্ত শক্তিশালী উল্লেখ করে রকিবুর রহমান বলেন, দায়িত্ব নিয়ে বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান বলেছেন- আমার প্রথম দায়িত্ব বাজারের স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনা। উনি গত পরশুদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে একটি মিটিং করেছেন। মিটিংয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান গভর্নরকে কনভেন্স করতে পেরেছেন। গভর্নর আশ্বাস দিয়েছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ ছেড়ে দিবেন।

তিনি বলেন, বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেছেন- বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করবেন। উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে সম্মিলিতভাবে কোম্পানির ৩০ শতাংশের কম শেয়ার থাকা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। উদ্যোক্তা পরিচালকরা ম্যানুপুলেট করলে যে যতই শক্তিশালী হোক ছাড় দেবেন না।

‘৯ বছরের যে জঞ্জাল। ৯ বছরের যে আইনের কোনো প্রয়োগ নেই, সফলতা নেই। সেটা কি ৯ দিনেই সাফহয়ে যাবে? ৯ দিনেই কি আস্থা এসে যাবে? ৯টা মাসতো সময় দিতে হবে। আপনারা ধৈর্য সহকারে ৯ মাস সময় দিন। অনেক ভালো ভালো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আসবে। সরকারি ভালো কোম্পানি চলে আসবে।’

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগের কমিশন অবশ্যই ব্যর্থ। তারা অনেক আইন-কানুন পরিবর্তন করেছে। অনেক এক্সপেরিয়েন্স করেছে। তার কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। প্রতিটি আইন ব্যক্তি গোষ্ঠীর স্বার্থে করা হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিনিয়োগকারী, পুঁজিবাজার।

আরও পড়ুন…….

ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম করোনায় আক্রান্ত 

ডিএসই’র এই পরিচালক বলেন, কোম্পানির পরিচালকরা ম্যানেজমেন্টের সহায়তা নিয়ে পুঁজিবাজারে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। ওনারা দেখাতেন ইপিএস স্ট্রং, গ্রোথ ভালো, রিজার্ভ ভালো, এনএভি (নেট অ্যাসেট ভ্যালু) ভালো। ৪০ টাকার শেয়ার ৭০ টাকা হয়েছে। আস্তে করে বিক্রি করে দিয়ে চলে গেছেন। শেয়ার বিক্রির পর দেখা গেল এনএভি নাই, গ্রোথ নেই, রিজার্ভও নেই।

তিনি বলেন, গত পরশুদিন সর্বনিম্ন লেনদেন হয় সবাই এটাকে ফোকাস করেছেন। লেনদেন যাই হোক ব্যাংক খোলা থাকলে পুঁজিবাজার খোলা রাখতে হবে। বাজার যদি আবার বন্ধ করে দেয়া হয় বড় ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত হবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা দেখেছি গত ৩ দিনে বিনিয়োগকারীরা যে লেনদেন করেছেন তার ৮৭ শতাংশই অনলাইনে হয়েছে। পুঁজিবাজারে লেনদেন করার জন্য বিনিয়োগকারীদের ব্রোকারেজ হাউসে আসতে হয়।

অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অপ্রদর্শিত আয় ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে বিনিয়োগ করলে এনবিআর, দুদক কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না, পাঁচ বছরের জন্য। তবে এই অপ্রদর্শিত আয় কে কোথায় বিনিয়োগ করবে সে বিষয়ে নুক্তা লাগিয়ে দেওয়া যাবে না। হাজার হাজার কোটি টাকা অপ্রদর্শিত আয় যদি মেন স্ট্রিমে (মূলধারায়) চলে আসে, তাহলে পুঁজিবাজারে আসতে দিন।