দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সম্মতির সাত মাস পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল বাজারে পুনঃতালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড। সম্প্রতি ডিএসইর পর্ষদ সভায় এমন অনুমোদন দিয়ে কোম্পানিটির লেনদেনের তারিখ ধার্য করতে ব্যবস্থাপনা কর্র্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে তালিকাচ্যুত হওয়ার ১০ বছরেরও বেশি সময় পর মূল বাজারের লেনদেন ব্যবস্থায় ফিরতে যাচ্ছে ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটের (ওটিসি) কোম্পানি সোনালি পেপার।

এর আগে ওয়াটা কেমিক্যাল ও আলিফ টেক্সটাইল ওটিসি থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বাজারে পুনঃতালিকাভুক্ত হয়। পুঁজিবাজারে ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে গত বছর ওটিসির যেসব কোম্পানি ধারাবাহিক মুনাফা ও লভ্যাংশ দিচ্ছে, তাদের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বাজারে পুনঃতালিকাভুক্তির শর্ত শিথিল করে এসইসি।

কমিশন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব কোম্পানি যে কারণে তালিকাচ্যুত হয়েছিল, এখন সেসব সমাধান করেই মূল বাজারে ফিরতে পারবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির জন্য পাবলিক ইস্যু বিধিমালা ও স্টক এক্সচেঞ্জের বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসকে দুটি সিকিউরিটিজ আইন ও স্টক এক্সচেঞ্জেস লিস্টিং রেগুলেশনের পাঁচটি ধারা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বাজারে পুনঃতালিকাভুক্তির অনুমোদন দেয় এসইসি।

আরও পড়ুন…….

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ ইস্যুতে হার্ডলাইনে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি 

ব্যাংকের ডিভিডেন্ড ৩ সেপ্টেম্বরের আগেই বিতরণ করা যাবে 

কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ, ধারাবাহিক লোকসান, নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান ও এজিএম (বার্ষিক সাধারণ সভা) না করা, থাকা, কাগুজে শেয়ার ইলেকট্রনিকে রূপান্তর না করাসহ বিভিন্ন কারণে ২০০৯ ও ১০ সালে স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বাজার থেকে ৭২টি কোম্পানি তালিকাচ্যুত করে ওটিসিতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি মূল বাজারে ফেরত এসেছে। বর্তমানে ওটিসিতে ৬৫টি কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯ সালে তালিকাচ্যুত সোনালি পেপার মূল বাজারে ফেরত আসছে।

ওটিসির বাজারে স্বল্প মূলধনী কোম্পানি সোনালি পেপারের শেয়ার ইতিমধ্যেই অতি মূল্যায়িত হয়ে আছে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের এ কোম্পানির শেয়ার ওটিসিতে সর্বশেষ ২৭৩ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। তবে এসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তালিকাচ্যুতির সময়ে কোম্পানির যে শেয়ারদর ছিল, এখন মূল মার্কেটে লেনদেনের প্রথম দিন সেই দর থেকেই লেনদেন শুরু হবে।

সোনালি পেপার মিলসের পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। এর মধ্যে উদ্যোক্তাদের শেয়ার রয়েছে ৬৯ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৪ টাকা ১৯ পয়সা। আর ২০১৯-২০ হিসাব বছরের অর্ধবার্ষিকে ইপিএস হচ্ছে ১ টাকা ৮ পয়সা। এ কোম্পানির সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য হচ্ছে ৩৩৬ টাকা ৯০ পয়সা। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটি ধারাবাহিকভাবে লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।

মূল বাজারে ফিরতে সোনালি পেপার মিলসকে পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা থাকার বাধ্যবাধকতা, সর্বশেষ তিন হিসাব বছরে পরিচালন কার্যক্রমে নিট তারল্য প্রবাহে ধনাত্মক থাকা ও পরিচালকদের ডিউ ডিলিজেন্স সার্টিফিকেট, উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের পৃথক নিঃশর্ত অঙ্গীকারনামা প্রদান থেকে অব্যাহতি দিয়েছে এসইসি।

শিডিউলে অধীন এনেক্সার ১০ ও এনেক্সার ১২-তে ফরম্যাট অব ডিক্লারেশনে পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিভিন্ন শর্ত থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানির ইনফরমেশন ডকুমেন্ট প্রকাশে ইস্যু ম্যানেজার নিয়োগের বাধ্যবাধকতা থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শেয়ার নিষ্পত্তি বিষয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের লিস্টিং রেগুলেশনের ১২ ও ১৩ ধারায় থাকা বিভিন্ন শর্ত থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সোনালি পেপার ১৯৭৭ সালে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে এবং ১৯৮৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ইউনুস গ্রুপ ২০০৬ সালে কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করে। সোনালি পেপার প্রিন্টিং পেপারসহ বিভিন্ন ধরনের কাগজ উৎপাদন করে। বছরে ৩৫ হাজার টন উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে কোম্পানিটির। কাগজের বাজারে বসুন্ধরা পেপার মিলস, হাক্কানি পেপার অ্যান্ড পাল্প, মাগুরা পেপার মিলস ও কর্ণফুলী পেপার মিলস কোম্পানিটির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।