দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন যে, অবশ্যই স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়াতে হবে। কারণ আমাদের জনসংখ্যা বেড়েছে, বাড়তি জনসংখ্যাকে চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার জন্য হাসপাতাল সুবিধা বাড়াতে হবে, বেড বাড়াতে হবে, চিকিৎসা খাতে খরচ বাড়াতে হবে। এটা খুবই স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্য খাতে বাজেট যে বাড়াতে হবে এই নিয়ে কোন বিতর্কই নেই।

কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে এখন যে বরাদ্দ হচ্ছে, সেই বরাদ্দ কতটা জনগণের পেছনে ব্যয় হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। একটি গনমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় আজ এসব কথা বলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এই চিকিৎসক বলেছেন যে, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি ওপেন সিক্রেট এবং এখন যে বরাদ্দ হচ্ছে, সেই বরাদ্দেরই একটি বড় অংশ জনগণের কোন কাজে লাগে না। বরং দুর্নীতির কারণে নষ্ট হয়। আর এ কারণেই স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দের থেকে দুর্নীতি কমানোটাই একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে তিনি মনে করেন।

ডা. আবদুল্লাহ বলেন যে, এখন স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ হচ্ছে, সেই বরাদ্দগুলোতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, তদারকি দরকার এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত দরকার যাতে যে টাকাটা বরাদ্দ হচ্ছে সেই টাকাটা যেন ঠিকভাবে ব্যয় হয়, দুর্নীতি না হয়। যদি এই দুর্নীতির ছিদ্র থাকে তাহলে যত বরাদ্দই হোক না কেন, তাতে কোন লাভ হবে না।

রও পড়ুন…….

সিএসইর করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা এক লাখ টাকা করার দাবি 

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ ইস্যুতে হার্ডলাইনে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি

এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মনে করেন যে, স্বাস্থ্য খাতে যে ব্যয়গুলো হয়, সেই ব্যয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন ওঠে। আমরা পর্দা কেলেঙ্কারির কথা শুনেছি, বালিশ কেলেঙ্কারির কথা শুনেছি। আমরা এমনও শুনি যে, অনেক মেশিন কেনা হয় যা ব্যবহৃত হয় না। কিংবা অচল মেশিন কিনে ফেলে রাখা হয়। এই কাজগুলো যদি বন্ধ না করা হয় তাহলে স্বাস্থ্য খাত জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না।

তিনি বলেন, এখন স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দে শুধু মেশিন কেনার দিকে নজর দিলে হবে না; সাথে সাথে যারা স্বাস্থ্যকর্মী আছেন, তারা যেন গ্রামে থাকতে পারেন সেজন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা, তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা, তাদের ভালো থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং বাজেট থেকে সেই ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে।

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ বলে, বেসরকারি হাসপাতালে মেশিনগুলো যে দামে কেনা হয়, তার থেকে দ্বিগুণ-তিনগুন দামে সরকারি হাসপাতালে এগুলো কেনা হয় কেন? এই দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে এবং চিকিৎসকদের সুরক্ষা, তাদের বেতন-ভাতা, থাকা-খাওয়া যেভাবে সুনিশ্চিত করতে হবে, তেমনই তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তাদের প্রশিক্ষণ, উন্নত শিক্ষা ইত্যাদির জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।

মনে রাখতে হবে যে, জনগণকে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়াটাই স্বাস্থ্য খাতের প্রধান কাজ, মেশিন কেনাকাটা নয়। আর তাই স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ অবশ্যই বাড়াতে হবে, তবে এই বরাদ্দ সুষ্ঠভাবে পৌঁছেছে কিনা, এই বরাদ্দ জনগণ পাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য তদারকি দরকার, দরকার স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা।