দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) চিকিৎসায় বিস্ময়কর একটি ওষুধ ফেভিপিরাভির। জাপানের ফুজিফিল্ম গ্রুপের টোইয়াম কেমিক্যালের এ ওষুধটি এভিগান হিসেবে সেখানে বিক্রি হয়। ওষুধটি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধেও কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। জাপান, চীন, ব্রিটেন ও আমেরিকার নামকরা মেডিক্যাল জার্নালে এ-বিষয়ক গবেষণা প্রকাশ পায়। ফেভিপিরাভির বা এভিগান প্রথম ২০১৪ সালে আবিষ্কার করে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ওষুধ হিসেবে।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক প্রণীত গাইডলাইনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মাঝারি ধরনের রোগীদের চিকিৎসার জন্য ফেভিপিরাভিরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া জাপান ছাড়াও বহিঃবিশ্বে রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ফেভিপিরাভিরের কিছুটা মোডিফাই করে অনুমোদন করেছে। সম্প্রতি ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল এ ওষুধটি তৈরি করেছে ‘ফেভিট্যাব’ নামে। ২০০ এমজির ‘ফেভিট্যাব’ দেশের সর্বত্র কোভিড রোগীদের জন্য পাওয়া যাবে বলে ইবনে সিনার সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার, মার্কেটিং ম্যানেজার মো: নুরুল্লাহ জানিয়েছেন।

মেডিক্যাল জার্নালগুলোতে বলা হয়েছে, ফেভিপিরাভির টাইপ ও সাবটাইপের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর। এটা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের স্ট্রেইনের বিরুদ্ধেও কার্যকর। এ ছাড়া অন্যান্য আরএনএ ভাইরাস যেমন অ্যারেনাভাইরাস, বুনিয়াভাইরাস, ফিলোভাইরাসের বিরুদ্ধেও কার্যকর। এ ভাইরাসগুলো হেমোরেজিক জ্বরের জন্য দায়ী। এটা সার্সকভ-২ বা কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধেও বেশ কার্যকর।

আরও পড়ুন…….  

পিরোজপুরে ধর্ষণ করতে গিয়ে ধরা, উলঙ্গ অবস্থায় পালিয়েছে মাসুম খান 

ব্রিটিশ সোসাইটির ‘জার্নাল ফর অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল কেমোথেরাপি’ বলেছে, কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীদের জন্য ফেভিপিরাভির কার্যকর একটি ওষুধ। জার্নালটি গত ১৭ মে সংখ্যায় এ বিষয়টি নিয়ে নিবন্ধটি ছাপে। এ গবেষণাটি করা হয়েছে চীনে। তারা মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৭৫ বছর অথবা এর চেয়ে বেশি বয়সী ৮০ জন রোগীর ওপর ওষুধটি পরীক্ষা করেন।

গবেষকরা ১৬০০ এমজি ফিভিপিরাভির প্রথম দিন এবং দ্বিতীয় দিন থেকে ১৪তম দিন পর্যন্ত ৬০০ এমজি ফেভিপিরাভির দিয়েছিলেন প্রতিটি করোনা আক্রান্ত রোগীকে। আবার লোপিনভির/রিটোনাভির দিয়েও তারা একই পরীক্ষা করেন। গবেষকরা ৪০০ এমজি/১০০ এমজি লোপিনভির/রিটোনাভির ট্যাবলেট এক থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত দিনে দু’বার দিয়েও পরীক্ষা করেছেন। দেখা গেছে, ফেভিপিরাভির, লোপিনভির/ রিটোনাভিরের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর এবং নিরাপদ। এ গবেষণায় দেখা গেছে, রোগীকে ফেভিপিরাভির দিলে ৪ দিনে সুস্থ হতে শুরু করে ৯১ শতাংশ পর্যন্ত। আবার লোপিনভির/রিটোনাভির দিয়ে চিকিৎসা করালে ১১ দিনে সুস্থ হতে শুরু করে ৬২.২ শতাংশ পর্যন্ত।

আরও পড়ুন…….  

গবেষণায় কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য ফেভিপিরাভির (ফেভিট্যাব) একটি চমৎকার ওষুধ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে আরো কিছু গবেষণায়। ‘জার্নাল অব অ্যান্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড মেটাবোলজিমে’ বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর ওষুধ হিসেবে ফেভিপিরাভির কার্যকর ওষুধ। ১২০ জন বয়স্ক মৃদু, মাঝারি ও কোভিডে মারাত্মক রোগীর ওপর এ গবেষণাটি করা হয়। গবেষণায় বলা হয়েছে, ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃদু, ৮৫ শতাংশ মাঝারি এবং ৬১ শতাংশ মারাত্মকভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্তরা ১৪ দিনে সুস্থ হয়ে গেছেন। ওষুধটি করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য নিরাপদ ও সহনীয়।

আরও পড়ুন…….  

এ ছাড়া ফেভিপিরাভির নিয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব প্রোগ্রেসিভ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিস’ (আইজেপিএসএটি) দেখিয়েছে ফেভিপিরাভির মাঝারি ধরনের কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের জন্য একটি ‘উৎকৃষ্ট’ ওষুধ। এ গবেষণাটি করা হয়েছে চীনের উহানে, যেখানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এতে ১৮ অথবা এর বেশি বয়সী ১১৬ জন অংশ নেয়। এদের সবাইকে প্রথম দিন ১৬০০ এমজির ফেভিপিরাভির দুইবার (৮ ট্যাবলেট সকালে ও ৮টি রাতে) এবং এরপর ৭ দিন থেকে ১০ দিন পর্যন্ত ৬০০ এমজি দিনে দুইবার (৩ ট্যাবলেট দিনে ও ৩টি রাতে) প্রয়োগ করা হলে ৭১.৪ শতাংশ পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করে।