দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার কমানোর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ বর্তমানে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ১০ শতাংশ ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে চায় না। তাই তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ২০ শতাংশ করার দাবি করেছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। আজ রবিবার অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামালের কাছে ২০২০-২১ অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেটে এই দাবি করে চিঠি দিয়েছে বিএমবিএ।

আরও পড়ুন…….  

বাজেট পরবর্তী পুঁজিবাজার নিয়ে আশাহত বিনিয়োগকারীরা 

চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ২.৫% কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। যার ফলে এখন তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের পার্থক্য হবে ৭.৫%। ফলে ভাল ও বড় প্রতিষ্ঠানসমূহ আরও বেশী নিরুৎসাহিত হবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে। অথচ ১০ শতাংশ পার্থক্যের মধ্যেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভালো কোম্পানি আনতে পারছে না বলে প্রচুর অভিযোগ প্রচলিত আছে। সত্যিকার অর্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছুই করার নাই। যারা প্রচলিত আইন মেনে শেয়ারবাজারে আসতে চায়, নিয়ন্ত্রকসংস্থা তাদেরকে অনুমোদন দেয়।

এই পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের গভীরতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধিতে ভাল ও বড় কোম্পানিসমূহকে তালিকাভুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করের হারের পার্থক্য বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তাই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির হার ২৫% এর পরিবর্তে ২০% করার অনুরোধ করছি। তাতে বৃহৎ ও লাভজনক প্রতিষ্ঠানসমূহ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হতে পারে। এর মাধ্যমে সরকারের মোট কর আয় কমবে না, বরং বাড়তে পারে। কারণ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অনেক বেশী তদারকি হয়, যার ফলে কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ কম।

আরও পড়ুন…….  

বিএমবিএ জানিয়েছে, অন্যান্য খাতের ন্যায় শেয়ারবাজারের অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোন শর্ত না। তাই অপ্রদর্শিত আয় ১০ শতাংশ কর প্রদানের মাধ্যমে নিয়মিত করার সুযোগ রাখা হয়েছে ফ্ল্যাট ক্রয়, নগদ জমা, ব্যাংক জমা, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও শেয়ারবাজারে ৩ বছরের লক-ইন শর্তে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে অন্যান্য খাতের ন্যায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্যও কোন শর্ত থাকা উচিত না। অন্যথায় শেয়ারবাজারের চেয়ে ব্যাংকে আমানত রাখা বা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার বিষয়ে মানুষ আগ্রহী বেশী হবে। এতে করে শেয়ারবাজার উপকৃত হবে না।

চিঠিতে আরও দাবি করা হয়েছে, শেয়ারবাজারের গভীরতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধিতে বন্ড সহায়ক হতে পারে এবং এ বিষয়ে অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীগণ ইক্যুইটি মার্কেটে বিনিয়োগ করে ক্যাপিটাল গেইনে বেশী আগ্রহী। বন্ডকে আকর্ষনীয় ও জনপ্রিয় করতে হলে বন্ডের আয়ের উপর কর হার কমাতে হবে। অন্যথায় বিনিয়োগকারীগণ বন্ডে বিনিয়োগ আগ্রহী হবে না। জিরো কূপন বন্ডকে আকর্ষনীয় বিনিয়োগ হিসাবে গন্য করার জন্য কর প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন…….  

বিএমবিএ জানায়, বাংলাদেশে মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবসার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। আর্থিক সক্ষমতার অভাব, নিজস্ব মূলধন ব্যতিত অন্য কোন উৎস থেকে অর্থ যোগানের সুযোগ নেই। দীর্ঘ দিনযাবত শেয়ারবাজার মন্দা অবস্থায় আছে। তার উপর মার্চেন্ট ব্যাংকের কর হার ৩৭.৫%। যা মার্চেন্ট ব্যাংকের জন্য বাড়তি চাপ। তাছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়। তাই মার্চেন্ট ব্যাংকের কর হার অন্যান্য অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানীর মতো ৩২.৫% নির্ধারন করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়েছে।

শেয়ারবাজারের দৈনন্দিন লেনদেনের উপর ০.০৫% কর কর্তন করা হয় এবং এটি ফেরত বা সমন্বয় যোগ্য নয়। যার ফলে একদিকে ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে কর প্রদান করে যাচ্ছে। বেশ কয়েক বছর আগে এ কর হার ছিল ০.০১৫%। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই কর হার কমিয়ে পূর্বের ন্যায় ০.০১৫% করার বিনীত অনুরোধ করা হয়েছে।