দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তিন বছর বিনিয়োগ রাখার যে শর্ত প্রস্তাব করা হয়েছে, তার প্রত্যাহার চেয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মোঃ রকিবুর রহমান। আজ এক বিবৃতিতে তিনি পুঁজিবাজারের বৃহত্তর স্বার্থে ওই শর্ত তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন…….  

উল্লেখ, গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। তাতে তিনি করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন খাতে ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বিনিয়োগ করার প্রস্তাব করেছেন। খাতগুলোর মধ্যে আছে- ব্যাংকে সঞ্চয়, সঞ্চয়পত্র কেনা, প্লট ও ফ্ল্যাট কেনা, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ইত্যাদি। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে নিঃশর্তে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হলেও পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে তা তিন বছর বিনিয়োগে রাখার শর্তের কথা বলা হয়েছে। এই শর্তের কারণে বাজারে কাঙ্খিত তারল্য আসবে না বলে মনে করছেন রকিবুর রহমান।

বিবৃতিতে রকিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত কালো টাকা সাদা করে বিনিয়োগের যে শর্ত দিয়েছে তার ফলে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে দৃঢ় বিশ্বাস যে এখানে এই শর্তের অধীনে কেউ বিনিয়োগ করবেনা। যেখানে অন্যান্য সেক্টরগুলোতে অপ্রদর্শিত কালো টাকা সাদা করার অত্যন্ত সহজ শর্তে সুবিধা দিয়েছে তাতে করে পুঁজিবাজারে এই টাকা আসার কোনো সম্ভাবনা নেই যেমন: ফিক্সড ডিপোজিট, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংকে টাকা থাকলে অথবা বন্ড,

মিউচুয়াল ফান্ড যেখানেই অপ্রদর্শিত কালো টাকা যা ট্যাক্স ফাইলে দেখানো হয়নি সেখানে মাত্র ১০% ট্যাক্স দিয়ে পুরো টাকাটা সাদা করার সুযোগ দিয়েছেন। সেখানে পুঁজিবাজারের মতো একটি নির্দিষ্ট বিনিয়োগ ধরে রাখতে হবে এই ধরণের কোনো শর্ত নেই।

আরও পড়ুন…….  

অপরদিকে, বাজেটে মাননীয় অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারে কালোটাকা সাদা করার জন্য, ৩ বছরের বিনিয়োগ ধরে রাখার শর্ত দিয়েছেন। ইতিপূর্বে, ১৯৯৭-৯৮ এবং ২০১০-১১, পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত কালোটাকা বিনিয়োগে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, সেখানে দুই বছর বিনিয়োগে থাকতে হবে এই ধরণের বাধ্যবাদকতা ছিলো । সেটা সফল হয়নি এবং কেউ সেই বিনিয়োগে আসেনি, কোথাও কোনো শর্ত দিয়ে কাউকে বিনিয়োগে আনা যাবে না । অতএব আমাদেরকে বাস্তবতার সাথে থাকতে হবে।

তিনি অর্থমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ রাখেন, এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময়ে, করোনা ভাইরাসের কারণে অপ্রদর্শিত কালো টাকা সাদা করে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসার যে সহজশর্তে আপনি কালোটাকার মালিকদেরকে যে সুযোগ করে দিয়েছেন সেটা একটা সময়োপোযোগী এবং যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি ।

আরও পড়ুন…….  

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যাদের কাছে অপ্রদর্শিত কালো টাকা বছরের পর বছর আছে , যারা ট্যাক্স ফাইলে দেখাবার সুযোগ পাননি , আমি মনে করি এই সহজশর্তে তারা তাদের ট্যাক্স ফাইলে তাদের অপ্রদর্শিত টাকাকে সাদা করার যে সুযোগ পেয়েছেন এবং অর্থনীতির মূল ধারাতে আসার যে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে , সবাই এই সুযোগটা নিবেন।

আমি মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে বিনীত অনুরোধ করবো পুঁজিবাজারে যে তারল্য সংকট চলছে তার একমাত্র সমাধান হলো অপ্রদর্শিত কালো টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া, যাতে কোনো শর্ত থাকবেনা , তাতে করে যারা অপ্রদর্শিত এ কালো টাকা সাদা করবেন, তারা তাদের প্ল্যানিং মতো তারা বিনিয়োগ করবেন । এই সুযোগ যখন থাকবে তখন দেখবেন এই অপ্রদর্শিত কালোটাকা যা সহজভাবে সাদা হয়েছে তা অর্থনীতির মূলধারায় এবং পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দূর করে শক্তিশালী করতে একটি ভালো ভূমিকা রাখবে । অতএব, আমি আশাকরি সামগ্রিক বিবেচনায় এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে আমরা যেন কাজটা করি।