দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা:বাংলাদেশে আজ করোনা সংক্রমণের নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। একদিন ৩ হাজার ৮৬২ জন আক্রান্ত হয়েছে। একইসাথে মৃত্যু ও আ ক্রান্তের নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে করোনার যে মহামারি, সেই মহামারি নতুন মাত্রায় উপনিত হয়েছে। খুব সহসা করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হবে এমন ধারণার পেছনে কোন বাস্তব যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে। যদিও গত ৩১শে মে থেকে সরকার সীমিত আকারে সবকিছু চালু করেছে।

রোববার আরেকটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই চালু অব্যহত রাখা হয়েছে ৩০শে জুন পর্যন্ত। শুধু বলা হয়েছে যে, যে সমস্ত এলাকাগুলো রেড জোনে থাকবে, সেই সমস্ত এলাকাগুলোতে সাধারণ ছুটি করবে। কিন্তু ঐ প্রজ্ঞাপনের ২৪ ঘন্টা পরেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংক্রমণ আইন অনুযায়ী নতুন কোন প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারেনি। ফলে মানুষের মধ্যে এক ধরণের অস্বস্তি, আতঙ্ক, অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তবে এসবকিছু ছাপিয়ে করোনাই সবকিছু অচল করে দিচ্ছে।

আরও পড়ুন…….  

এমপি-মন্ত্রীরা করোনা আক্রান্ত: করোনা এমনভাবে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের মাঝে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তাতে এইরকমভাবে চলতে থাকলে ছুটি দিতে হবেনা, এমনিই দেশ অচল হয়ে যাবে। কারণ এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন একাধিক এমপি এবং মন্ত্রী। একজন সাবেক ও একজন বর্তমান মন্ত্রী ইতিমধ্যে মারা গেছেন, একজন সংসদ সদস্যও মৃত্যুবরণ করেছেন। ফলে সংসদ সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই আইসোলেশনে আছেন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে অনেকে নিজেদেরকে নিরাপদ দুরত্বে রেখেছেন। ফলে এমপিরা করোনা সঙ্কটের শুরুতে যে ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছিল বা মানবিক পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করছিলেন, সেই পদক্ষেপগুলোতে ভাটার টান তৈরি হচ্ছে, হবে এবং আরো যদি আক্রান্ত হতে থাকে তাহলে প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণের কাছে ত্রাণ সরবরাহ করা যেমন অসম্ভব হবে, তেমনি আইন প্রণয়ণ কার্যক্রমও ব্যহত হতে পারে।

সরকারের প্রশাসনে সঙ্কট: করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন প্রশাসনের অনেকে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদেরও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রতিদিনই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। আর এর ফলে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালায়ে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। লোকজন সচিবালায়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন এবং যাদের না পারলেই নয় শুধুমাত্র তারাই সচিবালয়ে যাচ্ছেন এবং সচিবলায়ে কোন কাজ হচ্ছেনা। সচিবালায়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন যে, এরকম পরিস্থিতি যদি আরো কিছুদিন থাকে তাহলে আর সচিবালায়ে কাজ করার লোক খুঁজে পাওয়া যাবেনা। কারণ প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ের কেউ না কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা : আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ৭ হাজারের উপর লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও তাঁদের মনোবল অত্যন্ত চাঙ্গা। কিন্তু একাধিক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণও করেছেন। ফলে এই করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকলে স্বাভাবিকভাবে অনেক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য আক্রান্ত হবেন। তখন যারা আমাদের নিরাপত্তা বিধান করেন, আমাদের জানমালের হেফাজত করেন তাঁদেরকেও কাজে পাওয়াটাও কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

গণমাধ্যম কর্মীরা: ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একাধিক গণমাধ্যম কর্মী এবং অনেক গণমাধ্যম কর্মী এখন আক্রান্ত। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে এবং আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে গণমাধ্যম চালিয়ে নেওয়াটাই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন অনেক সম্পাদক
এবং গণমাধ্যম মালিকরা। এর ফলেও একটি অচলাবস্থা তৈরির শঙ্কা করা হচ্ছে।

চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী: করোনায় সবথেকে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর একটি আঘাত আসবে এবং করোনা চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্কট দেখা দিতে পারে।

ফলে করোনা এমনভাবে ডালপালা বিস্তার করছে যে, আমরা যদি চাইও যে করোনার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখবো, সবকিছুকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করবো, কিন্তু করোনা এমনভাবে থাবা দিচ্ছে যে, আমরা চাইলেও সবকিছু সচল করতে পারছি না, বরং করোনাই সবকিছুকে অচল করে দিচ্ছে।