দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের বেশিরভাগ কোম্পানি ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়লেও দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় গ্রুপ এসিআই লিমিটেডের বিক্রি বেড়েছে। চলতি হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে এসিআইর সমন্বিত বিক্রি বেড়েছে ১২ শতাংশ। তবে বিক্রিতে ভালো প্রবৃদ্ধি থাকলেও গতবারের মতো এবারও কোম্পানিটি নিট লোকসানে পড়েছে। চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে এসিআই লিমিটেডের নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১১৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এসিআইর নিট লোকসান ছিল ৪০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন কোম্পানি চালু, রিটেইল চেইন শপ ‘স্বপ্ন’সহ কয়েকটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের বড় অঙ্কের লোকসানের কারণে গত দুই বছর ধরে মুনাফায় ঋণাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এসিআইর। ২০১৭-১৮ হিসাব বছর থেকেই কোম্পানির নিট মুনাফা ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করে। আর ২০১৮-১৯ সাল থেকে এসিআই নিট লোকসানে পড়েছে, যা এখন বাড়তে শুরু করেছে। কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে, কয়েকটি সাবসিডিয়ারির লোকসান ছাড়াও বড় অঙ্কের সুদ ব্যয় এসিআইর মুনাফা সংকটের জন্য দায়ী।

আরও পড়ুন…….  

স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদিসহ এসিআইর মোট ব্যাংকঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আর চলতি ২০২০-২১ হিসাব বছরের ৯ মাসে ঋণের সুদবাবদ ৩৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ঋণের সুদবাবদ ব্যয় বেড়েছে ৪৬ শতাংশ।

চলতি হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ সময়ে এসিআইর পণ্য বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ৫ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। বিক্রিবাবদ ব্যয় শেষে চলতি হিসাব বছরের ৯ মাসে কোম্পানির মোট আয় হয় ১ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। প্রশাসনিক, বিক্রি ও বাজারজাতকরণ ব্যয় শেষে ৯ মাসে এসিআইর পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৩১৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৮৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

পরিচালন মুনাফায় থাকলেও সুদবাবদ ব্যয়ের পর চলতি হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে লোকসানে পড়ে এসিআই। এ সময় করপূর্ববর্তী লোকসান দাঁড়ায় ২৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ৪১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা মুনাফায় ছিল। কর পরিশোধের পর চলতি হিসাব বছরের ৯ মাসে এসিআইর নিট লোকসান দাঁড়ায় ১১৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি হিসাব বছরের ৯ মাসে এসিআইর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফার্মাসিউটিক্যালস, অ্যানিম্যাল হেলথ, মোটরস, পিওর ফ্লাওয়ার, রিটেইল চেইন (স্বপ্ন), ফুডস ও প্রিমিয়াফ্ল্যাক্সে বিক্রি বেড়েছে। বিপরীতে কনজ্যুমার ব্র্যান্ড, ক্রপ কেয়ার অ্যান্ড পাবলিক হেলথ, সল্ট ও হেলথকেয়ারে ব্যবসা কমেছে।

এসিআইর সাবসিডিয়ারিগুলো ১০টি খাতে বিভক্ত। এর মধ্যে পাঁচটি খাতে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান এসিআই লজিস্টিকের রিটেইল চেইন শপ ‘স্বপ্ন’ এসিআই লিমিটেডের সবচেয়ে বড় লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল। কিন্তু চলতি হিসাব বছরে লোকসানি কোম্পানি হিসেবে স্বপ্নকে ছাড়িয়ে গেছে অন্য সাবসিডিয়ারি এসিআই হেলথকেয়ার লিমিটেড।

চলতি হিসাব বছরের ৯ মাসে এ সাবসিডিয়ারি করপূর্ববর্তী লোকসান দিয়েছে ১৪৫ কোটি টাকা। এ সময়ে রিটেইল চেইন শপ স্বপ্নর বিক্রিতে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হলেও সুদবাবদ ব্যয়ের কারণে করপূর্ববর্তী লোকসান দাঁড়িয়েছে ১১৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এছাড়া কনজ্যুমার ব্র্যান্ডে ৭৫ কোটি টাকার করপূর্ববর্তী লোকসান হয়েছে। এর বাইরে ফুডস ও প্রিমিয়াফ্ল্যাক্সও লোকসানে রয়েছে। সব মিলিয়ে পাঁচ খাতের ব্যবসায় এসিআইর সাবসিডিয়ারিগুলো চলতি হিসাব বছরের ৯ মাসে ৪৩০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।

এসিআইর প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফায় রয়েছে ফার্মাসিউটিক্যালস ও মোটরস। চলতি হিসাব বছরের ৯ মাসে এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালস ১৬৮ কোটি ও এসিআই মোটরস ৯৮ কোটি টাকা করপূর্ববর্তী মুনাফা করেছে।