ডা. মারুফ রায়হান: আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ যেন হয়ে গেছে করোনাভাইরাস শব্দটি। যখন রোগের মহামারী বা প্যান্ডেমিক দেখা দেয়, তখন এর সাথে আরেকটি মহামারী দেখা দেয়। তার নাম তথ্যের মহামারী বা ইনফোডেমিক। তাই সঠিক উৎস যাচাই করে তথ্য গ্রহণ করাটা জরুরি। আসুন সচরাচর মনে জেগে ওঠা ১০টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর জেনে নিই।

১. সচরাচর কী কী লক্ষণ থাকে করোনাভাইরাস রোগে?

উত্তর : জ্বর, কাশি এবং ক্লান্তি–এই ৩টি লক্ষণ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

২. আর কী কী লক্ষণ থাকতে পারে?

উত্তর : শরীর ব্যথা, নাক বন্ধ থাকা, গলা ব্যথা, ডায়রিয়া, চোখে প্রদাহ (চোখ ওঠা), মাথা ব্যথা, খাবারের স্বাদ না পাওয়া, নাকে গন্ধ না পাওয়া, চামড়ায় র্যা শ ওঠা ইত্যাদি।

৩. এসব লক্ষণ দেখা দিলেই কি হাসপাতালে চলে আসতে হবে?

উত্তর : যাদের শুধু সাধারণ লক্ষণ আছে কিন্তু অন্য কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই তাদের হাসপাতালে আসার প্রয়োজন নেই। বেশিরভাগ মানুষ, প্রায় ৮০ ভাগেরই হাসপাতালে
চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বাসায়ই তারা চিকিৎসা নেবেন৷ তবে যদি গুরুতর লক্ষণ দেখা যায় তাহলে যতো দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।

রও পড়ুন…

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঘুষ নিয়ে করোনা পরীক্ষা! 

৪. গুরুতর লক্ষণগুলো কী কী?

উত্তর : শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস ছোট হয়ে আসা, বুকে ব্যথা/চাপ অনুভব করা, কথা বলা বা নড়াচড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি।

৫. গুরুতর লক্ষণ দেখা দেওয়া মানুষের সংখ্যা কেমন?

উত্তর : প্রায় প্রতি ৫ জনে একজন।

৬. কাদের গুরুতর লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে? কারা বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে?

যাদের নিচের যেকোনোটি রয়েছে :

– ক্যান্সার
– বয়স ৭০ বা তার বেশি
– ফুসফুসের রোগ, যেমন : হাঁপানি, সিওপিডি ইত্যাদি
– হার্টের রোগ, যেমন : হার্ট ফেইলিওর
– ডায়াবেটিস
– দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ, ডায়ালাইসিস লাগে
– লিভারের রোগ
– উচ্চ রক্তচাপ
– কিছু মস্তিষ্ক বা স্নায়ুর অসুখ, যেমন : পারকিনসন’স ডিজিজ, মটর নিউরন ডিজিজ, মাল্টিপল স্কেলেরোসিস, সেরেব্রাল পালসি ইত্যাদি
– যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম
– যেসব ওষুধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় সেগুলো গ্রহণ করা (যেমন : স্টেরয়েড)
– অতিরিক্ত স্থূলতা বো মোটা স্বাস্থ্যের অধিকারী

এসব রোগ যাদের আছে তারা উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন।

৭. বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি, তাহলে তরুণরা কি খুব একটা আক্রান্ত হয় না?

উত্তর : গবেষণা বলছে, যেকোনো বয়সীদের মতো একই সম্ভাবনা তরুণদের আক্রান্ত হবারও। তারা এটি ছড়াতেও পারে অন্যদের সমানই। তাদের রোগটা গুরুতর হবার
সম্ভাবনা কিছুটা কম কিন্তু অনেক তরুণদেরই গুরুতর অবস্থায় দেখা গেছে এবং অনেকে মারাও গেছেন। তাই অন্যান্য বয়সীদের সমান সতর্কতা নিতে হবে তরুণদেরও।

৮. যিনি কোভিডে আক্রান্ত তার যদি কোনো লক্ষণ না থাকে, সে কি করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে?

উত্তর : হ্যাঁ, পারে। তবে যার লক্ষণ আছে, তার ছড়ানোর ক্ষমতাও বেশি।

৯. সংক্রমিত হবার কতদিন পর লক্ষণ প্রকাশ পায়?

উত্তর : গড়ে ৫-৬ দিন। তবে কখনও কখনও লক্ষণ প্রকাশ পেতে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় নিতে পারে।

১০. আমরা তো বুঝতে পারছি না আমাদের আশেপাশে কে বা কারা আক্রান্ত। কীভাবে নিজেকে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে পারি?

– নিয়মিত ভালোভাবে হাত ধোয়া।
– অন্যদের সঙ্গে অন্তত ২ মিটার বা ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা।
– যেখানেই মানুষের ভিড়, সেখানে না যাওয়া।
– চোখ, নাক এবং মুখ স্পর্শ না করা।
– আমরা এবং আশেপাশের মানুষ হাঁচি-কাশি দেবার সময় যেন টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করি৷ না পারলে অন্তত কনুই দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে সবাই যেন হাঁচি দেয় তা
নিশ্চিত করা। তারপর টিস্যু/রুমাল নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা এবং হাত ধুয়ে ফেলা।
– কোভিডের কোনো সাধারণ লক্ষণও যদি কারও মাঝে দেখা দেয়, তাকে বাসায়ই অবস্থান করতে হবে এবং নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।

লেখক: ডা. মারুফ রায়হান খান, বিসিএস (স্বাস্থ্য), রাজধানীর একটি কভিড -১৯ স্পেশালাইজড হাসপাতালে কর্মরত