দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: উচ্চ খেলাপির বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে ১১টি ব্যাংক। চলতি বছরের (২০২০) মার্চ শেষে এই ঘাটতির পরিমাণ দাড়িয়েছে ৮ হাজার ৬৩২ কোটি টাকায়। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনায় নতুন করে খেলাপি না করার নিয়মে খাতাকলমে কমেছে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ। এরপরও পাহাড়সম খেলাপি ঋণে বিপর্যস্ত ব্যাংক খাত। এই অবস্থায় প্রভিশন ঘাটতি কম দেখালেও প্রকৃত চিত্র পুরোপুরি উল্টো।

রও পড়ুন…

ব্যাংক খাত সামগ্রিকভাবে ঘাটতিতে পড়লেও ঘাটতি রয়েছে মূলত ১১ ব্যাংকের। বাকি ৪৮ ব্যাংকের ঘাটতি নেই; বরং অধিকাংশ ব্যাংকের উদ্বৃত্ত রয়েছে। ১১টি ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রভিশন ঘাটতি বেসিক ব্যাংকের। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ২ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ৩৯৪ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ১ হাজার ১৫৫ কোটি ও রূপালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ৭৯৫ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংকের ৬৮০ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৫৭০ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৪৮৭ কোটি, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ২৮০ কোটি, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২৫৯ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ১৮২ কোটি এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের ঘাটতি ৯৮ কোটি টাকা। এই ১১টি ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ ৮ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ঘাটতি থাকলেও মার্চে কোনো ঘাটতি নেই।

রও পড়ুন…

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, মার্চ পর্যন্ত ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে ৮৭ শতাংশের বেশি আদায় অযোগ্য। অর্থাৎ মন্দমানের খেলাপি ঋণ ৮৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। ঋণ নিয়ম-শৃঙ্খলা সঠিকভাবে না মেনে ঋণ দেওয়ায় ব্যাংক খাতে বিপুল পরিমাণ খেলাপি হয়েছে। খেলাপি ঋণ বাড়লেও জনগণের আমানত নিরাপদ রাখতে প্রভিশন পদ্ধতি চালু আছে। কোনো ঋণ খেলাপি হয়ে গেলে সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংক তার আয় থেকে এনে প্রভিশন সংরক্ষণ করে। কিন্তু প্রভিশন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হলে সমপরিমাণ আমানত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

মার্চ পর্যন্ত হিসাবে খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ৬০ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সংরক্ষণ রয়েছে ৫৬ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। ফলে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা। তবে সামগ্রিক ঘাটতি ডিসেম্বরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ডিসেম্বরে প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৬ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা।

রও পড়ুন…

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঘুষ নিয়ে করোনা পরীক্ষা! 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাত এখন নানামুখী চাপে। করোনার কারণে এ চাপ বাড়ছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পুরনো সংকট তো রয়েছেই। খেলাপি ঋণের বিপরীতে অনেক ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। এতে আমানতকারীদের অর্থ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। ব্যাংকগুলোর উচিত খেলাপি ঋণ যেন না বাড়ে এজন্য নিয়মনীতি মেনে ঋণ বিতরণ করা। কারণ খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হলে ব্যাংকের আয় ও মুনাফা কমে যায়। মূলধন ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, খেলাপি ঋণ বেশি থাকলে তার বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হয়। ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা থেকে অর্থ এনে এটি সংরক্ষণ করে ব্যাংকগুলো। এতে পরিচালন মুনাফা বেশি হলেও নিট মুনাফা কমে যায়। ফলে শেয়ারহোল্ডাররা মুনাফা কম পান। আবার খেলাপি ঋণ বেশি হলে তহবিল ব্যয় (কস্ট অব ফান্ড) বেড়ে যায়। এতে ঋণের বিপরীতে বেশি সুদ এবং আমানতের বিপরীতে কম সুদ দিতে বাধ্য হয় ব্যাংকগুলো।