দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে প্রচন্ড রকমের হতাশাজনক অবস্থায় রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। ভয়াবহ ক্রেতাসংকটে পুঁজিবাজারের লেনদেন পরিস্থিতি ফিরে গেছে ১৩ বছর আগের অবস্থানে। টানা আড়াই বছরের দরপতনে অধিকাংশ শেয়ারের দর অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে। তবে ক্রেতাসংকটময় এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ১৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রও পড়ুন…

গ্রামীণফোনের ওপর বিটিআরসি’র নতুন দুটি নিষেধাজ্ঞা 

টানা দরপতনে ক্রেতাসংকট পরিস্থিতি তৈরি হলে গত ১০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক ও মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠন করে। ওই তহবিল থেকে তফসিলি ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ড রেপোর মাধ্যমে ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে। এর ফলে পুঁজিবাজারে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সহজ শর্তে তহবিল গঠনে ঋণ দেওয়ার সুযোগ দিলেও অধিকাংশ ব্যাংক নিজস্ব উৎস থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। এর মধ্যে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, ওয়ান, ইউসিবি, এনসিসিবিএল ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক প্রতিটি ২০০ কোটি টাকা করে বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। সিটি ও পূবালী ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ৫০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। এ ছাড়া এক্সিম ব্যাংক ৮০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। এর বাইরে একই উদ্দেশ্যে আরও চারটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ইতিমধ্যে প্রায় ১২০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে।

রও পড়ুন…

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক তহবিল গঠনের পর এখন পর্যন্ত ১৪টি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গঠিত তহবিল থেকে দুটি ব্যাংক ১৩০ কোটি নিয়ে বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। অন্যরা নিজস্ব উৎস থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের তহবিল গঠন করেছে।

এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে বাজারে ভূমিকা রাখার। আমরা বেসরকারি ব্যাংকের মতো শুধু মুনাফার চিন্তা করি না। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও সিকিউরিটিজের দর যে অবস্থানে রয়েছে তাতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের এখন উত্তম সময়। আমি মনে করি আমাদের ‘রোল প্লে’ করার এখনই সবচেয়ে ভালো সময়। এখন বিনিয়োগ করে কিছুদিন ধরে রাখলে এখান থেকে ভালো মুনাফাও আসবে। আবার চাঙ্গা করতেও ভূমিকা রাখা যাবে।

রও পড়ুন…

শামস আরও বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এখন বাজার কিছুটা ধীরগতিতে চলছে। বাজার পরিস্থিতি চাঙ্গা হতে কিছুটা সময় লাগবে। এ সময়ে আমরাও সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করছি। ধীরে ধীরে বিনিয়োগের পরিমাণও বাড়াচ্ছি। এ সময়ে কমিশনেও পরিবর্তন এসেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নতুন নেতৃত্ব পুঁজিবাজারকে সঠিকভাবে পরিচালনা করবে এবং বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসাইন বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বিএবি জানিয়েছিল, তারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে। এখন অনেক ব্যাংক তহবিল গঠন করেছে। তারা যদি আগের অঙ্গীকার অনুযায়ী বিনিয়োগে এগিয়ে আসে তাহলে বাজার পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং অন্যরাও বিনিয়োগে আসবে। তিনি জানান, পুঁজিবাজারে বিনিয়াগের জন্য আমরাও ব্যাংকঋণের আবেদন করব।

এদিকে তহবিল গঠন করলেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সতর্কতা অবলম্বন করছে। ১৮ জুন পর্যন্ত বিশেষ তহবিল থেকে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন সিকিউরিটিজে ব্যাংকগুলো মাত্র ১৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।

২০১৮ সাল থেকে টানা দরপতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক প্রায় ৩৬ শতাংশ পয়েন্ট হারিয়েছে। আর গত মার্চ থেকে করোনাভাইরাসের প্রভাবে পুঁজিবাজারে আবারও দরপতন হওয়ায় টানা ৬৬ দিন বন্ধ রাখা হয়। বড় দরপতন ঠেকাতে গত ১৯ মার্চ তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দিয়ে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে এসইসি। এরপর ৩১ মে পুনরায় বাজার চালু হলে ক্রেতাসংকটের কারণে লেনদেনে স্থবিরতা নেমে আসে।

এক-তৃতীয়াংশ সিকিউরিটিজের কোনো লেনদেনই হয় না। আবার লেনদেন হওয়া ৯০ শতাংশের দর ফ্লোর প্রাইসের কারণে অপরিবর্তিত থাকতে দেখা যাচ্ছে। প্রতিটি সিকিউরিটিজের বিপরীতে লাখ লাখ বিক্রয়াদেশ থাকলেও ক্রেতা নেই। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো বিশেষ তহবিল গঠন করছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বাজার মধ্যস্থতাকারীদের তারল্য সহায়তার অংশ হিসেবে তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তহবিল থেকে তফসিলি ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ড রেপোর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নিতে পারবে, যা ২০২৫ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। তহবিলের অর্থ শুধু পুঁজিবাজারের বিভিন্ন সিকিউরিটিজে শর্তসাপেক্ষে বিনিয়োগ করা যাবে, যা পুঁজিবাজারে ব্যাংক কোম্পানি আইনের বর্ণিত বিনিয়োগ গণনার বাইরে থাকবে।

কোনো তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক গঠন করা ওই বিশেষ তহবিলের সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নিজস্ব পোর্টফোলিওতে ব্যবহার করতে পারবে। আর ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির নিজস্ব নতুন পোর্টফোলিও গঠনের জন্য ঋণ হিসেবে তহবিলের ২০ শতাংশ দেওয়া যাবে। অন্য ব্যাংকের বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউজের নিজস্ব নতুন পোর্টফোলিওর জন্য ৩০ শতাংশ ও অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের নিজস্ব নতুন পোর্টফোলিও গঠনের জন্য তহবিলের ১০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দেওয়া যাবে।

ব্যাংকগুলো নিজস্ব বিবেচনা ও সুবিধা অনুসারে তহবিল ব্যবহার করতে পারবে। তবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও পুঁজিবাজারের সার্বিক স্বার্থে ওই তহবিলের ন্যূনতম ১০ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ডে ও ১০ শতাংশ স্পেশাল পার্পাস ফান্ডের মাধ্যমে স্বীকৃত কোনো সম্পদের বিপরীতে ইস্যুকৃত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে। এই তহবিল দিয়ে তালিকাভুক্ত ২১৭টি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে।