দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আজ মঙ্গলবার (২৩ জুন) অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৭২৯তম কমিশন সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিএসইসি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওতে কোম্পানিটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩টি শেয়ার ইস্যু করবে। এর মধ্যে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৬৭টি শেয়ার নিলামে সফল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করা হবে। বাকি ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৬টি শেয়ার বিক্রি করা হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।

রও পড়ুন…

এমআই সিমেন্টের প্রত্যেক পরিচালককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা 

নিলামে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে ওয়ালটনের শেয়ারের প্রান্তসীমা নির্ধারিত হয়েছে ৩১৫ টাকা। বিদ্যমান আইন অনুসারে, এই প্রান্তসীমা থেকে কমপক্ষে ১০ শতাংশ কমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে হয়। তবে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ২০ শতাংশ ছাড়ে এই শেয়ার ইস্যু করবে। তাতে আর ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতি শেয়ারের জন্য প্রস্তাবিত দর দর দাঁড়াচ্ছে ২৫২ টাকা।

অর্থাৎ শুরুতেই আইপিওতে বিনিয়োগকারীরা প্রতিটি শেয়ারে ৬৩ টাকা লাভবান হবেন। এছাড়া হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের কারনে ওয়ালটনে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সুরক্ষা নিশ্চিত। কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। আর এই অর্থ কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ ও আইপিওর ব্যয় মেটাতে কাজে লাগানো হবে।

রও পড়ুন…

গ্রামীণফোনের ওপর বিটিআরসি’র নতুন দুটি নিষেধাজ্ঞা 

গত ৩০ জুন, ২০১৯ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছর শেষে পুনঃমূল্যায়নজনিত সঞ্চিতিসহ কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য বা এনএভিপিএস ছিল ২৪৩ টাকা ১৬ পয়সা। আর পুনর্মুল্যায়ন সঞ্চিতি ছাড়া শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ছিল ১৩৮ টাকা ৫৩ পয়সা। সর্বশেষ ৫ অর্থবছরে কোম্পানিটির ভারিত গড় হিসাবে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ২৮ টাকা ৪২ পয়সা। কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্বে আছে এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ইপিএস নিয়ে তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে ওয়ালটন। এছাড়া কোম্পানিটির ইপিএস তালিকাভুক্ত প্রথম সারির কোম্পানিগুলোর তালিকায়। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ অর্থবছরের ইপিএসের বিবেচনায় ওয়ালটন ৮ম স্থানে রয়েছে। এমনকি বহুজাতিক বার্জার পেইন্টস ও গ্রামীণফোনের থেকে ওয়ালটনের ইপিএস বেশি।

রও পড়ুন…

শেয়ারবাজারে শীর্ষে থাকা সর্বশেষ অর্থবছরে রেকিট বেনকিজারের ইপিএস হয়েছে ১৩১.০৬ ইপিএস টাকা। এরপরে ম্যারিকো বাংলাদেশের ৮৪.০১ টাকা, গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের ৮১.৮৩, লিন্ডে বিডির ৮০.৯৩ টাকা, বাটা সুর ৭২.৭৯ টাকা, বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ৫১.৩৭ টাকা ও রেনেটার ৪৬.৬৩ টাকা। এরপরেই রয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পথে থাকা ওয়ালটন। এ কোম্পানির ইপিএস ৪৫.৮৭ টাকা।

ইপিএস বিবেচনায় তালিকাভুক্তির শুরুতে ওয়ালটনের শেয়ার দর অনেক কমে পাওয়া যাবে। যে বাজারে ওয়ালটনের সমান ও বেশি ইপিএস থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন ৬৯৩.২০ টাকা শেয়ার দর অবস্থান করছে বাটা সু। আর ওয়ালটন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে ৩১৫ টাকায়। তবে লেনদেন শুরু হওয়ার পরে প্রতিনিয়ত উঠা-নামার সুযোগ থাকবে।

প্লেসমেন্ট বিতর্ক থেকেও দূরে রয়েছে ওয়ালটন। ২০০৯-১০ সালে প্রাইভেট প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রি আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধসের অন্যতম কারন বলেও মনে করা হয় ওই সময়ের অনিয়ন্ত্রিত প্লেসমেন্ট বাণিজ্যকে। এছাড়া ২০১০ সালের ধসের কারন অনুসন্ধানে ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বাধীন তদন্ত প্রতিবেদনেও প্লেসমেন্টের বিষয়টি উঠে আসে। ঠিক ৮ বছর পরে আবারও ২০১৯ সালে আলোচনায় উঠে আসে প্লেসমেন্ট। তবে এই বিতর্কিত প্লেসমেন্টের পথে হাটেনি দেশের বৃহৎ রেফ্রিজারেটর উৎপাদনকারী কোম্পানি ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ।

ওয়ালটনের বর্তমানে ৩০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। যার পুরোটাই উদ্যোক্তা/পরিচালকদের দখলে। এরফলে ৩০০ কোটি টাকার শেয়ারের পুরোটাই ৩ বছর লক ইন (বিক্রয় নিষেধাজ্ঞা) থাকবে। তাই ১-২ বছরের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া নিয়ে যে শঙ্কা থাকে, তার সুযোগ ওয়ালটনে নেই।

ওয়ালটনে ৫ হাজার ৪৮৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার স্থায়ী সম্পদ রয়েছে। তবে ওয়ালটনের সমস্ত দায় দেনা শেষে অস্থায়ীসহ নিট ৭ হাজার ২৯৭ কোটি ৮০ লাখ ৬৭ হাজার ৩৬৮ টাকার সম্পদ রয়েছে। এ হিসাবে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ (এনএভিপিএস) রয়েছে ২৪৩.১৬ টাকার।

কোম্পানিটির বসুন্ধরা ও গাজীপুরে ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ১৭৩ স্কয়ার ফিটের ভবন রয়েছে। এরমধ্যে গাজীপুরের কারখানায় ১৯টি ভবন ও শেডে ৪৭ লাখ ৪০ হাজার ৬৩৪ স্কয়ার ফিট জায়গা রয়েছে। যেখানে বাৎসরিক সাড়ে ১৭ লাখ রেফ্রিজারেটর, ৫০ হাজার এসি, ৩ লাখ টিভি ও ১০ লাখ কম্প্রেসার তৈরীর সক্ষমতা রয়েছে। এ কোম্পানিটির দখলে রয়েছে দেশীয় রেফ্রিজারেটর বাজারের ৭০ শতাংশ। আর বসুন্ধরায় অফিসের জন্য নির্মিত আধুনিক ভবনে রয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৩৯ স্কয়ার ফিট জায়গা।

উল্লেখ্য, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ২০০৬ সালের ১৭ এপ্রিল প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে গঠিত। ২০০৮ সালে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৮ সালের ১৪ মে পাবলিক কোম্পানিতে রুপান্তর হয়। রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ার কন্ডিশনার এবং কম্প্রেশার উৎপাদন দিয়ে যাত্রা শুরু করা ওয়ালটন এখন টেলিভিশনসহ ইলেকট্রিকাল জিনিসপত্র তৈরী করে। এ কোম্পানি মূলত ওয়ালটন এবং মার্সেল ব্র্যান্ডে পণ্য বাজারজাত করে।