দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: করোনার কারণে ব্যাংক থেকে মানুষের নগদ টাকা উত্তোলনের চাপ বেড়েছে। আবার ঋণ আদায়ও প্রায় বন্ধ। তাই ব্যাংকে তারল্যসংকট দেখা দিতে পারে, এটাই ভেবেছিল সবাই। কিন্তু ঘটেছে উল্টোটি। করোনার মধ্যেও ব্যাংকগুলোতে তারল্য বেড়েছে। ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাকালে ঋণ বিতরণ বন্ধ থাকার কারণেই মূলত তারল্য বেড়েছে।

আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি ছাড়ের কারণেও ব্যাংকগুলোতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত তারল্য যুক্ত হয়েছে। ফলে গত তিন মাসে তারল্য নিয়ে ব্যাংকগুলোতে কোনো টানাটানি ছিল না। যদিও আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় ও মানুষের সঞ্চয় তুলে নেওয়ার প্রবণতার কারণে করোনাকালে তারল্যসংকটের আশঙ্কা করেছিলেন ব্যাংকাররা।

বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে তারল্য পরিস্থিতি ভালো থাকলেও এটি বেশি দিন থাকবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান ব্যাংকাররা। তাঁরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অর্থনীতিতে গতি ফিরবে না। আর মানুষের হাতে টাকা না থাকলে তাঁরা নতুন করে সঞ্চয়ের পরিবর্তে জমানো টাকা তুলে নেবে। আবার প্রণোদনার ঋণ বিতরণ পুরো মাত্রায় শুরু হলে তখন ব্যাংকের এ তারল্য আর থাকে না।

রও পড়ুন…

এ বিষয় জানতে চাইলে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদ মাকসুদ বলেন, বর্তমানে তারল্য নিয়ে কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তারল্যসংকট তৈরিহতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর হাতে অতিরিক্ত তারল্য (বিল-বন্ডসহ) ছিল প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। এপ্রিল শেষে অতিরিক্ত তারল্য (বিল-বন্ডসহ) বেড়ে হয় ১ লাখ ১৩ হাজার ছিল ৮০৭ কোটি টাকা। করোনাকালেও তারল্য বেড়েছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত এ তারল্যের বেশির ভাগই সোনালী, পূবালী ও উত্তরা ব্যাংকের।

রও পড়ুন…

গ্রামীণফোনের ওপর বিটিআরসি’র নতুন দুটি নিষেধাজ্ঞা 

এ ছাড়া কয়েকটি প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংকেও ভালো তারল্য রয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ জমার হার (সিআরআর) ১ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এতে ব্যাংকগুলোর হাতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা যায়। আবার ঋণ আমানত অনুপাত সীমা (এডিআর) ২ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে অনেক ব্যাংক সীমার ভেতর চলে আসে।

এ বিষয় জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হালিম চৌধুরী বলেন, ‘করোনার মধ্যেও আমাদের ব্যাংকে ভালো প্রবাসী আয় এসেছে। আবার চাল, ডাল, তেল বিক্রিও ছিল ভালো। ঘুরেফিরে এসব টাকা ব্যাংকেই এসেছে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি ছাড় দিয়েছে। সব মিলিয়ে তারল্য বেড়েছে।’

রও পড়ুন…

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ব পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ দ্রুত শেষ হবে না। তাই সামনের দিনে ব্যাংকগুলোর তারল্য নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে। কারণ, মানুষ জমা টাকা ভেঙে খাচ্ছে, এটা অব্যাহত থাকবে। আর ব্যাংকের বাইরে টাকা চলে গেলে, তা ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে। এ কারণে ব্যাংকগুলোতে পর্যাপ্ত তারল্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নতুন কৌশল নিতে হবে।

করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় সরকার প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে বড় শিল্প ও সেবা খাতের জন্য চলতি মূলধন বাবদ ৩০ ‍হাজার কোটি টাকা ও এসএমই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণের সুদের অর্ধেক পরিশোধ করবে সরকার, বাকি অর্ধেক গ্রাহক। তাই ব্যাংকগুলোতে আবেদনের হিড়িক পড়েছে। ব্যাংকগুলোতে যাতে তারল্যসংকট না হয়, সে জন্য বড় অঙ্কের পুনঃ অর্থায়ন তহবিলও গঠন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।