দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে পুঁজিবাজার। ব্যাপক সম্ভাবনাময় এ খাতটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। করোনা কালে সূচকের অবস্থা স্থবির হয়ে পড়ছে। লেনদেন যেমন বাড়ছে না তেমনি বাড়ছে না সূচক। সূচকের উঠানামা থমছে আছে এক থেকে দুই পয়েন্টের মধ্যে। বুধবার দিনশেষে ডিএসই সূচক বেড়েছে ১ পয়েন্ট। হঠাৎ করে সূচকের এ স্থবির গতির জন্য দায়ী বর্তমান বাজার পরিস্থিতি।

রও পড়ুন…

করোনার মধ্যেও ব্যাংক খাতে তারল্য বেড়েছে 

বাজারে বর্তমানে বিনিয়োগকারী শুন্য। লেনদেনে নেই তেমন সাড়া। ফলে মোট লেনদেন ঘুরপাক খাচ্ছে ৬০-৭০ কোটির ঘরে। ফলে এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে এ প্রশ্ন এখন বিনিয়োগকারীদের মুখে মুখে। বিশ্বের অধিকাংশে দেশে পুঁজিবাজার চাঙ্গা থাকলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে সম্পুর্ন ব্যক্তিক্রম। দিন দিন বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে বিনিয়োগকারীরা।

পুঁজিবাজারের প্রাণ বিনিয়োগকারী। কিন্তু বাজারের মন্দাবস্থার কারণে ক্রমাগত কমছে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বেশি হলেও তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ খুবই কম। ছোট ছোট জমানো অর্থ বাড়তি মুনাফার আশায় তারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কম হলেও বিনিয়োগ অনেক বেশি।

রও পড়ুন…

পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ইপিএস নিয়ে ওয়ালটনের আইপিও অনুমোদন

কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাতে মূলধনের বড় জোগান থাকলেও বাজারে তারা নিষ্ক্রিয়। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ও প্রণোদনার ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা পেলেও তাদের এই নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।

প্রাতিষ্ঠানিকরা প্রশ্নের জবাবে বলছে, বড় কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক থেকে মূলধন ধার নিয়ে ব্যবসা করে তারা। কারো ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও আছে। বর্তমানে ব্যাংক খাতে খেলাপি বেড়ে যাওয়ায় তারল্য সংকটে তাদের বিনিয়োগের সুযোগ সংকুচিত হয়েছে। ‘ফান্ড ক্রাইসিস’ চলছে, ‘ফ্রেশ’ ফান্ড বাজারে আসছে না। আবার পুঁজিবাজারের মন্দাবস্থায় শেয়ারের দাম তলানিতে নামায় কারো কারো মূলধনও আটকে গেছে।

রও পড়ুন…

এদিকে পুঁজিবাজার সাপোর্টে রাষ্ট্রায়ত্ত ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ভূমিকা নিয়েও নানামুখী প্রশ্ন ঘুরছে সবখানেই। বাজার গতিশীল রাখতে সরকার থেকে আইসিবি কোটি কোটি টাকার ফান্ড পেলেও তাদের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে স্টেকহোল্ডাররা। ডিএসইতে সর্বশেষে ১০০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয় ৮ জুন। সেদিন লেনদেন ছিল ১০৬ কোটি টাকা। এরপর সর্বোচ্চ লেনদেন হতে দেখা গেছে ৮৮ কোটি টাকা। এ লেনদেন হয় ১৭ জুন। তারপর আর একদিনও লেনদেন ৮০ কোটি টাকার ঘরে আসতে পারিনি। লেনদেন হ্রাস পাওয়ার এ ধারাবাহিকতায় থাকার প্রধান কারণ ফ্লোর প্রাইস।

ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা লেনদেনে অনিহা প্রকাশ করছেন। তবে এর বিশেষ কোনো যুক্তি নেই। তারা চাইলে সামান্য দর বাড়িয়েও শেয়ার ক্রয় করতে পারেন। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী তা করছেন না। সেজন্য এ পরিস্থিতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরই দায়ী করা যায়। কারণ পুঁজিবাজারের চেহারা কখনও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাল্টে দিতে পারেন না। এটি করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসা দরকার। কিন্তু বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিমাতাসুলভ আচরণ দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, পুঁজিবাজার কিছু লোকের হাতে জিম্মি। এ কারণে পুঁজিবাজারে কোনো ভালো কিছু আশা করা যাচ্ছে না। পুঁজিবাজার নিম্নগতি থেকে উপরে ওঠার কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের আস্থা নেই। তাছাড়া বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য তেমন কোন আশার আলো নেই।

এছাড়া  ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কিছু ব্যক্তি ও পুঁজিবাজারের শীর্ষ কয়েকজন বাজারকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। পুঁজিবাজারের গতি ফেরাতে সরকার যতই উদ্যোগ নেক, ঐ সিন্ডিকেট চক্রটি বাজারকে অস্থিতিশীল করতে উঠেপড়ে লাগে। এখন নতুন করে ফ্লোর প্রাইস নিয়ে তারা গুজব ছড়াচ্ছে।