দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে সবচেয়ে বড় অঙ্কের মূলধন নিয়ে অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড। আগামী মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ-বিএসইসি এর চূড়ান্ত অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সেটি হলে অক্টোবরের মধ্যেই দেশের উভয় স্টক মার্কেটে এটি লেনদেন হতে পারে।

২০০৯ সালে গ্রামীণফোনের পর শেয়ার বাজারে এখনো পর্যন্ত এত বড় পোর্টফলিও নিয়ে কেউ অন্তর্ভুক্ত হয়নি। রবির পেইড আপ ক্যাপিটাল হবে ৫,২৩৮ কোটি টাকা যা গ্রামীণফোনের চারগুণেরও বেশি। রবির প্রতিটি শেয়ার অভিহিত মূল্য হবে ১০ টাকা।  কোনো ধরনের প্রিমিয়াম ছাড়াই মার্কেটে আসতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি, যা বিনিয়োগকারীদের জন্যও বড় ধরনের একটি সুখবরও। রবির মতো প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তি মার্কেটের চলমান নাজুক অবস্থার অবসানে সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রও পড়ুন…

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে মার্কেট ক্যাপিটাল টু জিডিপি ১২.৩%। যেখানে ভারতের ৫৮%, পাকিস্তানের ১৭.৯%, মালেয়েশিয়ার ১০৮.১%, শ্রীলঙ্কার ১৯% এবং সিঙ্গাপুরের ৮২.২২%। রবি ১০ টাকার শেয়ার মূল্য বাজারে এলে মার্কেট ক্যাপিটাল টু জিডিপি ১২.৫% এ পৌঁছে যাবে। আর রবির শেয়ার মূল্য ৫০ টাকা হলে মার্কেট ক্যাপিটাল টু জিডিপি বেড়ে ১৩.৩% এ পৌঁছাতে পারে।

রও পড়ুন…

এ বছরের মধ্যেই রবি শেয়ার বাজার এ তালিকাভুক্ত হয়ে ২০২১ সালের পুরো বছর (২৪০ দিন) যদি শেয়ার বেচাকেনা হয় (প্রতিদিন গড়ে ৫% শেয়ার বেচাকেনা হলে ডিএসইতে গড় লেনদেন ৫০০ কোটি) তাহলে সরকার ৬৬ কোটি টাকা টার্নওভার ট্যাক্স পাবে। এ ছাড়া রবির শেয়ার ৫০ টাকা মূল্যে বিক্রি হলে সরকার প্রায় ৯০ কোটি টাকার মতো ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স পাবে।

বিএসইসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে আসতে গত ২ মার্চ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন জমা দেয় রবি। মাঝে ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের সাথে কিছুু ভুল ধারণার অবসান হয়ে বর্তমানে সেটি চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। যা আগামী মাসের মাঝামাঝিনাগাদ অনুমোদন হতে পারে।

রও পড়ুন…

জানা গেছে, রবি আজিয়াটা প্রাক আইপিও এবং আইপিও মিলিয়ে মোট ১০ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছাড়তে আগ্রহী। যার মাধ্যমে কোম্পানিটি মোট ৫২৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এর মধ্যে ২ শতাংশ শেয়ার কোম্পানিটির কর্মীদের কাছে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে বিক্রি করে রবি আজিয়াটা এরই মধ্যে ১৩৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। বাকি ৮ শতাংশ শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে বাজারে ছাড়া হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের পর।

সব মিলিয়ে আইপিওর মাধ্যমে রবি আজিয়াটা প্রায় ৫২ কোটি ৪০ লাখ শেয়ার ইস্যু করবে। গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত আর্থিক বছরের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই আইপিও আবেদন জমা দিয়েছে রবি। কোম্পানিটি শেয়ার বিক্রির টাকার বড় অংশ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে ব্যয় করবে বলে আবেদনে জানিয়েছে। আইপিওতে শেয়ারবাজারে আসার পর কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৫ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। তাতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের হিসাবে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫২৪ কোটিতে।

বাংলাদেশে রবি আজিয়াটা নামে কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত এই কোম্পানির প্রায় ৬৯ শতাংশ মালিকানা রয়েছে মালয়েশিয়ার আজিয়াটা বারহাদের হাতে। বাকি মালিকানার মধ্যে ২৫ শতাংশ রয়েছে ভারতীয় এয়ারটেল ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুর) ও প্রায় ৬ শতাংশ জাপানের এনটিটি ডকোমো ইনকরপোরেশনের হাতে। এখন আইপিওর অনুমোদন পেলে এটির শেয়ারের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত হবে বাংলাদেশীরাও।

জানা গেছে, বর্তমান নতুন কমিশনের সময়কালে রবিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শেয়ারবাজারে আসার অনুমোদন দিতে চায় বিএসইসি। এ জন্য কোম্পানিটির আইপিও সংশ্লিষ্ট সব আনুষ্ঠানিকতা দ্রুত করা হচ্ছে। সরকারও কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে আনার বিষয়ে আন্তরিক।

এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, কোম্পানিটির মালয়েশিয়াভিত্তিক মূল পরিচালনা পর্ষদ শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরুর অনুমতি দিয়েছে। তবে শেয়ারবাজারে আসার জন্য সরকারের কাছে দুটি দাবি জানিয়েছে রবি। তার একটি হচ্ছে ন্যূনতম করহার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের মতো দশমিক ৭৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। অন্যটি করপোরেট করহার ৪৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশে নিয়ে আসা। তাহলে দুটি শর্ত কি পূরণ হয়ে গেছে?

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রবির হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম বলেন, ‘আমরা আশা করি আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সরকার সেই দুটি বিষয়কে সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সব আনুষ্ঠাানিকতা প্রায় শেষ। আশা করি দ্রুত সময়ে অনুমোদনের পর আগামী অক্টোবর নাগাদ হয়তো মার্কেটে আসতে পারব।’

শেয়ারবাজারের বর্তমান এই নাজুক পরিস্থিতিতে রবির মতো এত বৃহৎ মূলধনী কোম্পানি মার্কেটে এসে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পারবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সরকার শেয়ার মার্কেটের উন্নয়নে বেশ আন্তরিক। সেজন্য সম্প্রতি ওয়ালটনের মতো একটি স্বনামধন্য বড় প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বর্তমানে রবির ২২ থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে এবং সেটি দৃশ্যমান।

আর বাজার ভবিষ্যতে এ রকম থাকবে না। বর্তমান কমিশন ভালো কোম্পানি মার্কেটে আনার ব্যাপারে বেশ আন্তরিক। আমরা আশা করি রবি আজিয়াটা তালিকাভুক্তির পর বাজারে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আরো বাড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীরা ভালো প্রফিট পাবে।