দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের বিরুদ্ধে ১ হাজার কোটি টাকা লোকসানের তথ্য গোপন করার প্রমাণ পেয়েছে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)। সংস্থাটির প্রাথমিক অনুসন্ধানে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে লোকসানের তথ্য গোপন করে মুনাফা দেখানোর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এমনকি তদন্তের স্বার্থে কেয়া কসমেটিকস ও এর নিরীক্ষকের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েও পায়নি এফআরসি।

রও পড়ুন…

ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ-সিডিবিএলের যোগসাজসেই বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ! 

এফআরসির অনুসন্ধানে কেয়া কসমেটিকসের ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে ১ হাজার কোটি টাকা লোকসানের তথ্য গোপন করার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। যদিও আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটি ১২১ কোটি টাকা মুনাফা দেখিয়েছে। লোকসানের তথ্য গোপন করার পাশাপাশি ইউরোপ ও আমেরিকায় কার্যক্রম থাকা কেয়ার দুটি কোম্পানির মাধ্যমে দেশের বাইরে অর্থ পাচার করা হয়েছে বলেও সন্দেহ করছে এফআরসি।

রও পড়ুন…

তদন্তের স্বার্থে আরো বিস্তারিত তথ্যের জন্য চলতি বছরের ২ জানুয়ারি কেয়া কসমেটিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল খালেক পাঠানের কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে তথ্য তলব করেছিল এফআরসি। কিন্তু এ বিষয়ে কোম্পানির কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি চিঠি পাঠিয়ে সাতদিনের মধ্যে তথ্য দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেয়া কসমেটিকস এফআরসির কাছে কোনো তথ্য পাঠায়নি।

জানতে চাইলে এফআরসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাঈদ আহমেদ বলেন, আমাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে কেয়া কসমেটিকসের বিরুদ্ধে ১ হাজার কোটি টাকা লোকসানের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তাছাড়া কোম্পানিটি বিদেশে অর্থ পাচার করেছে বলেও আমরা সন্দেহ করছি। আরো অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য আমরা কোম্পানিটির কাছে তথ্য চেয়েছিলাম, কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কোনো তথ্য দেয়নি। কোম্পানিটির নিরীক্ষক আর্টিসানের কাছে আমরা নিরীক্ষা নথি তলব করেছিলাম। তারা আমাদের কোনো তথ্য দেয়নি। ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন অনুসারে এফআরসিকে তথ্য না দিলে মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।

রও পড়ুন…

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুসারে, ২০১৭-১৮ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলেও সংশ্লিষ্ট হিসাব বছরের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করেনি কেয়া কসমেটিকস। পরবর্তী ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও আলোচ্য হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি চলতি ২০১৯-২০ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেনি কেয়া কসমেটিকস। ফলে কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা এর আর্থিক ও ব্যবসায়িক তথ্য সম্পর্কে পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছেন।

জানতে চাইলে কেয়া কসমেটিকসের কোম্পানি সচিব মো. নূর হোসেন জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে ২০১৮ সালের নির্ধারিত তারিখে এজিএম করা সম্ভব হয়নি। পরে এজিএমের নতুন তারিখ নির্ধারণের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আদালতের আদেশ পাওয়া যায়নি। ফলে আগের বছরের এজিএম অসম্পন্ন থাকায় এর পরের বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও এজিএম করা সম্ভব হয়নি। একই কারণে অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের জন্য কেয়া কসমেটিকসের নিরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে আর্টিসান চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে কেয়া কসমেটিকসের আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি নিরীক্ষক তার মতামতে তুলে ধরেনি বলে অভিযোগ এফআরসির। সম্প্রতি বিধিবহির্ভূতভাবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় থাকা আল ফারুক ব্যাগস লিমিটেডের করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড পরিপালনসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেয়ার কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আর্টিসানকে জরিমানা করেছে।

এ বিষয় জানতে চাইলে আর্টিসানের চিফ এক্সিকিউটিভ পার্টনার এএফএম আলমগীর বলেন, কভিড-১৯-এর কারণে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির দু-একদিন আগে এফআরসির কাছ থেকে চিঠি পেয়েছি। পরবর্তী সময়ে সাধারণ ছুটির কারণে আমাদের অফিস বন্ধ থাকায় এফআরসিকে নিরীক্ষা নথি দেয়া সম্ভব হয়নি। কিছুদিনের মধ্যে অফিসের কার্যক্রম শুরু হলে তখন এফআরসিকে তথ্য দেয়া হবে। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের জন্য নিরীক্ষক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও কেয়া কসমেটিকসের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি। এমনকি এ বিষয়ে কেয়ার কাছে তথ্য চেয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। সূত্র:বণিক বার্তা।