দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) বাংলাদেশ লিমিটেডের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার কিনে নিতে শুরু করেছে ইউনিলিভার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে জিএসকের শেয়ার কেনা শুরু করেছে বহুজাতিক কোম্পানিটি। জিএসকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বাংলাদেশের মূল কোম্পানি যুক্তরাজ্যের সেটফার্স্ট লিমিটেড শেয়ার বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে।

রও পড়ুন…

ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ-সিডিবিএলের যোগসাজসেই বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ! 

এর অংশ হিসেবে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের হাতে থাকা ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৪৪টি শেয়ার ইউনিলিভারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওভারসিজ হোল্ডিংস বিভির কাছে হস্তান্তর করবে। অবশ্য প্রথমে সেটফার্স্টের কাছে থাকা জিএসকে বাংলাদেশের সব শেয়ার ইউনিলিভারের মূল কোম্পানি ইউনিলিভার এনভির কাছে বিক্রির কথা ছিল। কিন্তু চলতি বছরের ২২ মার্চ এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ইউনিলিভারের মূল কোম্পানির পরিবর্তে এর সাবসিডিয়ারি ইউনিলিভার ওভারসিজ হোল্ডিংস বিভির কাছে সেটফার্স্টের সব শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

রও পড়ুন…

ওই সিদ্ধান্ত অনুসারে এখন ব্লক মার্কেট থেকে জিএসকে শেয়ার ইউনিলিভারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওভারসিজ হোল্ডিংস বিভির অনুকূলে কেনা হচ্ছে। ব্লক মার্কেটের মাধ্যমে এ শেয়ার কিনে নেয়ার পর গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বাংলাদেশের মালিকানা পুরোপুরিভাবে ইউনিলিভারের হাতে চলে যাবে।

রও পড়ুন…

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, নিয়মানুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জে ঘোষণা দিতে হয়। এক্ষেত্রে বিএসইসির অনুমোদন নেয়ার কিছু নাই।

১৯৭৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বাংলাদেশে কনজিউমার হেলথকেয়ার ও ফার্মাসিটিক্যালস দুই ইউনিটের মাধ্যমে বেশ দাপটের সঙ্গে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করে। কিন্তু ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনিটের লোকসান দেখিয়ে ওষুধ উৎপাদন কারখানা এবং ফার্মাসিউটিক্যাল বিজনেস ইউনিটের সব কার্যক্রম একপর্যায়ে বন্ধ করে দেয়।

রও পড়ুন…

তবে হরলিকস, মালটোভার মতো জনপ্রিয় হেলথ ড্রিংক, গ্ল্যাক্সোজ-ডি, সেনসোডাইনসহ কনজিউমার হেলথকেয়ার ইউনিটের কার্যক্রম সচল রাখে। ইউনিলিভার এখন প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কিনে নেয়ায় হরলিকস, মালটোভার মতো জনপ্রিয় হেলথ ড্রিংক, গ্ল্যাক্সোজ-ডি, সেনসোডাইনের মতো জনপ্রিয় পণ্যগুলো ইউনিলিভারের মালিকানায় চলে যাবে।

ইউনিলিভারের এ শেয়ার কেনা সংক্রান্ত প্রথম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর। সে সময় ইউনিলিভার ও জিএসকের পক্ষ থেকে দুটি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারত, বাংলাদেশ ও এশিয়ার অন্য ২০টি দেশের বাজারে জিএসকের চলমান কনজিউমার হেলথ ড্রিংকস ব্যবসা কিনে নিচ্ছে অ্যাংলো-ডাচ জায়ান্ট ইউনিলিভার।

এজন্য ইউনিলিভারের ব্যয় হবে ৩৩০ কোটি ইউরোর সমপরিমাণ অর্থ, যা নগদ অর্থ ও শেয়ারের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে। চুক্তি অনুসারে ইউনিলিভার ও জিএসকের এ অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া তিন ধাপে সম্পন্ন হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ভারতে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার লিমিটেডের (এইচইউএল) সঙ্গে জিএসকে কনজিউমার হেলথকেয়ার ইন্ডিয়ার শতভাগ একীভূতকরণ হবে।

দ্বিতীয় ধাপে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জিএসকে বাংলাদেশ লিমিটেডের ৮২ শতাংশ শেয়ার (সেটফার্স্টের মালিকানাধীন) কিনে নেবে ইউনিলিভার, যার ইকুইটি ভ্যালু দাঁড়ায় প্রায় ১৭ কোটি ইউরো। তৃতীয় ভাগে নগদ ৪৭ কোটি ডলার ব্যয়ে এশিয়ার অন্য ২০ দেশে জিএসকের হেলথ কেয়ার নিউট্রিশন ব্যবসা ও ব্র্যান্ডস্বত্ব কিনে নেবে ইউনিলিভার।

এরই মধ্যে প্রথম ধাপে ভারতে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার ও জিএসকের অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনালের (এনসিএলটি) চন্ডিগড় বেঞ্চ জিএসকে ও হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের একীভূতকরণ স্কিম অনুমোদন করে। স্কিম অনুসারে জিএসকের একটি শেয়ারের বিপরীতে শেয়ারহোল্ডারদের হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের ৪ দশমিক ৩৯টি শেয়ার দেয়া হবে।

এখন বাংলাদেশের পুঁজিবাজার থেকে জিএসকের শেয়ার ইউনিলিভারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওভারসিজ হোল্ডিংস বিভির অনুকূলে কেনার মাধ্যমে দ্বিতীয় ধাপ সম্পন্ন হচ্ছে। জিএসকের ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৪৪টি বা ৮১ দশমিক ৯৮ শতাংশ শেয়ার কিনতে ইউনিলিভারের ব্যয় ধরা হয় ১৬০ কোটি টাকা।

ভালো ব্যবসার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের নিয়মিত মোটা অংকের লভ্যাংশ দেয়ায় জিএসকে শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের বরাবরই আকর্ষণ ছিল। যে কারণে দামের দিক থেকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৬ টাকা।

তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা খুবই সীমিত। মাত্র ২ দশমিক ১২ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে। বাকি শেয়ারর মধ্যে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ১৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীর কাছে আছে দশমিক ৩৭ শতাংশ শেয়ার।