দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ডিএসই তালিকভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ ক্রেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: শহিদ উল্লাহ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে গা ঠাকা দিলেও এখনো দেশেই অবস্থান করছে। তিনি বিনিয়োগকারীদের টাকা আত্মসাৎ করে আড়ালে চলে গেছেন। যাকে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে রয়েছে। শহিদ উল্লাহ বিনিয়োগকারীদের টাকা আত্মসাৎ করে গত ২৩ জুন থেকে ব্রোকারেজ হাউজে তালা লাগিয়ে আড়ালে রয়েছেন। তাকে খুঁজে না পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ওই হাউজের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীরা। যা পুরো পুঁজিবাজারে আতঙ্ক তৈরী করেছে।

রও পড়ুন…

পুঁজিবাজারে বড় অঙ্কের মূলধন নিয়ে আসছে রবি 

এদিকে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব থেকে বিনা অনুমতিতে শেয়ার বিক্রি ও নগদ অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় এবার ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ ও সিডিবিএল কর্মকর্তাদের যোগসাজসের অভিযোগ উঠেছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদ উল্লাহসহ সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব থেকে বিনা অনুমতিতে শেয়ার বিক্রি ও নগদ অর্থ আত্মসাতের যে ঘটনা ঘটিয়েছে, তাতে সিডিবিএল কর্মকর্তাদের অবশ্যই যোগসাজস রয়েছে।

রও পড়ুন..

বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, যোগসাজস থাকার কারণেই সেন্ট্রাল ডিপোজিটারি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) থেকে এমন কাণ্ডের পর কোন এসএমএস দেয়া হয়নি। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, ব্যাংক থেকে টাকা উঠালেই গ্রাহকরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংক থেকে মোবাইলে বার্তা পেয়ে থাকেন। ঠিক তেমনই বিও হিসাব থেকে শেয়ার বিক্রি করলেই বিনিয়োগকারীদের বার্তা দিয়ে থাকে সিডিবিএল। অথচ ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ কর্তৃপক্ষের শেয়ার আত্মসাতের ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের সিডিবিএল কোন বার্তাই দেয়নি।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, অনুমতি ছাড়াই শেয়ার বিক্রি করল ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ, কিন্তু সিডিবিএল থেকে এসএমএস দেয়া হলো না- এ বিষয়টি অবশ্যই সন্দেহজনক এবং খুবই উদ্বেগজনক। সিডিবিএল থেকে এসএমএস না পাওয়ার কারণেই গ্রাহকরা তাদের শেয়ার হারিয়েছেন। এর দায়ভার কোনভাবেই সিডিবিএল এড়াতে পারে না। তাই শেয়ারবাজারের ইতিহাসে প্রথম ঘটে যাওয়া এ ধরণের অনৈতিক ঘটনা তদন্তে সিডিবিএলের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

রও পড়ুন…

জানা গেছে, হঠাৎ লাপাত্তা হয়ে যাওয়া ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের সকল পরিচালকদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পাশাপাশি ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদ উল্লাহ এবং তার স্ত্রীর নামে থাকা ব্যাংক হিসাবও জব্দ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আর এদিকে শেয়ার ও অর্থ খুঁইয়ে বিপাকে পড়েছেন সিকিউরিটিজ হাউজটির বিনিয়োগকারীরা। এ অবস্থায় পাওনা অর্থ বকেয়া রেখে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা গত ২৫ জুন পল্টন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এছাড়া সিকিউরিটিজ হাউজটির পরিচালকেরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য বিষয়টি ইমিগ্রেশনকে জানিয়েছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্ত ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদ উল্লাহ এবং তার পরিবার গত মঙ্গলবার (২৪ জুন) ভোর ৫টার দিকে বাসা থেকে পালিয়েছেন। অন্যদিকে শেয়ার বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মকর্তারা দফায় আলোচনা চালাচ্ছেন। বিএসইসি ও ডিএসই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শিগগিরই এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের বিও হিসাবধারী বিনিয়োগকারী হাজী মোহাম্মদ নিশাত বলেন, ‘এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত তদন্ত হওয়া জরুরি। তদন্তে সিডিবিএলের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখতে হবে। সিডিবিএলকে তদন্তের বাইরে রাখার কোন সুযোগ নেই। সিডিবিএল থেকে এসএমএস দেয়া হলে এভাবে অর্থ আত্মসাৎ সম্ভব হতো না। প্রয়োজনে সিডিবিএলের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’

জানতে চাইলে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী সানাউল হক বলেন, ‘এ ঘটনা তদন্তে ডিএসই’র পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সিডিবিএল’র বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।’

এ বিষয়ে পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) বলেন, ‘এ বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে। তদন্তের স্বার্থে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করছি অভিযুক্তরা দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে পারেননি। এ বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজি) বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে।’

দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহিদ উল্লাহর ব্যক্তিগত ০১৭১৩০৬৬০৮৬ এই ফোন নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করলে বন্ধ পাওয়া যায়। হাউজটি বন্ধ নিয়ে গত ২৩ জুন থেকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। এর আলোকে ঐক্য পরিষদের বিনিয়োগকারীরা ২৪ জুন সরেজমিনে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ লিঃ এর প্রধান কার্যালয়, পুরানা পল্টনে প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে তালা ঝুলছে দেখতে পায়। ওই সময় বহু বিনিয়োগকারী কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করতে দেখে তারা।

কিছু কিছু বিনিয়োগকারীকে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ থেকে দেওয়া চেকও বাউন্স করেছে। হাউজ থেকে তাদেরকে চেক দেওয়া হয়েছে টাকা তোলার জন্য। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে তারা দেখে একাউন্টে কোন টাকা নেই। এ হাউজটির ৩টি শাখা রয়েছে- নারায়ণগঞ্জ, ঢাকার বারিধারা ও কুমিল্লায়। সবগুলো শাখাই বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা ফোনে কোন কর্মকর্তা, এমডি ও চেয়ারম্যানসহ কারো সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টি সুবিবেচনায় এনে বিনিয়োগকারীদের টাকা ও শেয়ার যাতে সুরক্ষা পায়, তাহা নিশ্চিত করতে বিএসইসিসহ উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে চিঠি দিয়েছে ঐক্য পরিষদ।