দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে আসছে চট্টগ্রামের অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন লিমিটেড। অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন এক কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ১৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৫০ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ড ১০ শতাংশ, প্রবাসী বিনিয়োগীকারী ১০ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩০ শতাংশ শেয়ার বরাদ্দ থাকবে। সংগৃহীত অর্থ থেকে নতুন প্লান্ট ও শেড স্থাপনে ব্যয় হবে ছয় কোটি ৮১ লাখ টাকা, নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় ও স্থাপনে ব্যয় হবে চার কোটি ২৪ লাখ টাকা, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা হবে দুই কোটি টাকা এবং বাকি টাকা আইপিও প্রক্রিয়ায় খরচ হবে বলে কোম্পানি সুত্রে জানা গেছে।

রও পড়ুন…

ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ-সিডিবিএলের যোগসাজসেই বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ! 

জানা যায়, ক্রমবর্ধমান শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখতে বাড়ছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সিজেন ও অর্গানের মতো গ্যাসের ব্যবহার। পাশাপাশি মানুষের জীবন রক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাড়ছে মেডিকেল অক্সিজেনের ব্যবহার। এ দুই খাতে অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সিজেন, অর্গানসহ বিভিন্ন ধরনের তরল ও বায়বীয় গ্যাসের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১৫-২০ শতাংশেরও কাছাকাছি। দেশে হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এগুলোর জোগান দিচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন লিমিটেড। চট্টগ্রামভিত্তিক অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহে উদ্যোগী হচ্ছে।

রও পড়ুন…

জানা যায়, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা করে। বর্তমানে তারা শিল্প গ্রেডের অক্সিজেন, হিলিয়াম গ্যাস, হাইড্রোজেন গ্যাস, নাইটোজেন গ্যাস, আর্গন গ্যাস (মিশ্র গ্যাস), মেডিকেল গ্রেডের অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সসাইড এবং ওয়েল্ডিং গ্যাস উৎপাদন করে। এছাড়া ওয়েল্ডিং যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ পাবলিক লিমিটেড হিসেবে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি ঘণ্টায় অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন উৎপাদন সক্ষমতা আড়াই হাজার ঘনমিটার। আর বর্তমানে বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ৯৯ লাখ ২৯ হাজার ২৯০ ঘনমিটার। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বছরে ৯০ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৮ ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদন করে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক হাইড্রোকার্বন গ্যাস উৎপাদন সক্ষমতা দুই লাখ মেট্রিক টন।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেনের মোট বিক্রি ছিল ৪০ কোটি ১০ লাখ টাকা, আগের অর্থবছর যা ছিল ৩১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর শেষে প্রতিষ্ঠানটির মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেনের নিট মুনাফা ছিল ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরের ছিল ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল এক টাকা ৩৭ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়ায় ১৭ টাকা ৩৭ পয়সা।

রও পড়ুন…

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমত জাহান বলেন, প্রতিবছর ম্যানুফ্যাকচারিং, জাহাজ ভাঙা, লাইভস্টক হাসপাতাল, ফ্যাব্রিকেশন, স্টিল, ফুড প্যাকেজিং এবং বেভারেজ খাতে ব্যাপক দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। ফলে শিল্পজাত অক্সিজেন, তরল নাইট্রোজেন, তরল আর্গন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও মোড়কজাত গ্যাস সল্যুশনের চাহিদা বাড়ছে। এসব খাতে গড় প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশেরও বেশি। ফলে আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ থাকায় অর্থ সংগ্রহে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী।

দেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও মেডিকেল গ্যাসের বাজার প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মার্কেট শেয়ার পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি লিন্ডে বাংলাদেশের। অক্সিজেন সরবরাহকারী অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন লিমিটেড, কেআরওএল অক্সিজেন লিমিটেড, স্পেক্ট্রা অক্সিজেন, মেডিএন অক্সিজেন প্লান্ট, অক্সিকন, সীমা অক্সিজেন এবং এসএল অক্সিজেনসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

এসব কোম্পানির উৎপাদিত বাল্ক গ্যাসের মধ্যে রয়েছে শিল্পজাত অক্সিজেন, তরল নাইট্রোজেন, তরল আর্গন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড। মোড়কজাত গ্যাস সল্যুশনের মধ্যে রয়েছে মাইল্ড স্টিল ইলেকট্রোড, কম্প্রেসড ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস ও চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত গ্যাস, চিকিৎসা সরঞ্জামাদি, চিকিৎসা পাইপলাইন ইত্যাদি। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে বাল্ক গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধির হার ছিল ২৬ শতাংশ। এ চাহিদাকে কেন্দ্র করে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে চায় অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন। এ লক্ষ্যে তারা পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করবে।

প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত মূলধন ১১০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৮০ কোটি টাকা। কোম্পাটির চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন ভাটিয়ারির শিল্পপতি নিজাম উদ্দিন চৌধুরী। প্রতিষ্ঠানটির করপোরেট গ্রাহকের তালিকায় রয়েছে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, কনফিডেন্স সিমেন্ট, ডায়মন্ড সিমেন্ট, বেঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিজ, মাস্টার স্টিল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

ইস্যু ম্যানেজার ও আন্ডার রাইটার প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন এক কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ১৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৫০ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ড ১০ শতাংশ, প্রবাসী বিনিয়োগীকারী ১০ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩০ শতাংশ শেয়ার বরাদ্দ থাকবে।

সংগৃহীত অর্থ থেকে নতুন প্লান্ট ও শেড স্থাপনে ব্যয় হবে ছয় কোটি ৮১ লাখ টাকা, নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় ও স্থাপনে ব্যয় হবে চার কোটি ২৪ লাখ টাকা, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা হবে দুই কোটি টাকা এবং বাকি টাকা আইপিও প্রক্রিয়ায় খরচ হবে। ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে আছে বিডি ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল হোল্ডিংস লিমিটেড এবং আন্ডার রাইটার প্রতিষ্ঠান এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।