দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বিশ্বব্যাপী নভেল করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করে বড় ধরনের চাপে পড়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে। থমকে যায় বিশ্ব বাজারে পণ্যের লেনদেন। এতে করে বড় ধরনের ধস নামে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত পোশাক খাতে। একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। ক্রয় আদেশ স্থগিত করে প্রাইমার্কের মত বড় প্রতিষ্ঠানও। ফলে এপ্রিলে প্রায় ৮৫ শতাংশ পোশাক রপ্তানি কমে যায়। সেই ধাক্কা সামলে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে পোশাক খাত।

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চলতি বছরের মার্চে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমে ২০ দশমিক ১৪ শতাংশ। এরপর এপ্রিলে কমে ৮৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর মে মাসে কমে ৬২ শতাংশ। জুনেও রপ্তানি কমার ধারাবাহিকতা বজায় থাকলেও ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হার আগের তুলনায় কম, ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

রও পড়ুন…

পুঁজিবাজারে হঠাৎ লেনদেন বৃদ্ধির নেপথ্যে আইসিবি 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বিজিএমইএ জানিয়েছে, চলতি বছরের জুনে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি (নিট ও ওভেন) হয়েছে ২১২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ২৩৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারের পোশাক।

এদিকে এক অর্থবছর বিবেচনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পোশাক পণ্যের মোট রপ্তানি ছিল ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলারের। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৭৮৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। এ হিসেবে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

চীনের উহানে কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় গত ডিসেম্বরের শেষে। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে তা বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়ে। করোনার প্রভাবে দেশের তৈরি পোশাক খাত প্রথমে কাঁচামালের সরবরাহ সংকটে পড়ে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য আমেরিকা ও ইউরোপের প্রতিটি দেশই কভিড-১৯ এর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করছে। এ অবস্থায় একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করেছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

ক্রয়াদেশ বাতিল-স্থগিত করা ক্রেতাদের মধ্যে প্রাইমার্কের মতো বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানও আছে। তবে এইচঅ্যান্ডএম, ইন্ডিটেক্স, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, কিয়াবি, টার্গেট, পিভিএইচসহ আরো কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ বহাল রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। ফলে সামনের দিনগুলোয় ক্রয়াদেশ বাতিল-স্থগিতের পরিমাণ কমে আসতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে বৈশ্বিক লকডাউন পরিস্থিতিতে পরিবর্তনের কারণে নতুন ক্রয়াদেশও আসতে শুরু করেছে পোশাক কারখানাগুলোতে। কারখানা মালিকরা বলছেন, বাতিল বা স্থগিত হওয়া ক্রয়াদেশগুলোর কিছু ফিরে এসেছে। আবার নতুন ক্রয়াদেশও পেতে শুরু করেছে কারখানাগুলো। কিন্তু তা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম।

ক্রয়াদেশ পরিস্থিতি নিয়ে পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, আজ পর্যন্ত পোশাকের বৈশ্বিক বিক্রির পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে পুনরুদ্ধারের কোনো ইঙ্গিত নেই। বিশ্বব্যাপী দেশগুলো অবরুদ্ধ বা লকডাউন পরিস্থিতি থেকে পুনরায় সচল হওয়া নিয়ে লড়াই করছে। এটা আমাদের জন্য খারাপ সতর্কবার্তা। কারণ পোশাক শিল্প পশ্চিমা বাজারের চাহিদার ওপর নির্ভরশীল।

বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, এ বছরের মার্চ থেকে আমাদের পোশাক রপ্তানিরও অবাধ পতন ঘটছে। জুনে অবস্থা তুলনামূলক ভালো হবে বলে আমরা আশা করেছিলাম। বাস্তবেও পতনের হার কমে এসেছে। গত বছরের জুনের তুলনায় প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ কমেছে জুনের রপ্তানি। ক্রয়াদেশ আসছে স্বাভাবিক প্রবাহের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসে পোশাক রপ্তানি ৫০০ কোটি ডলার হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএ। সেই আশঙ্কা প্রায় পুরোটাই বাস্তবে রূপ নিয়েছে।