দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: গ্রাহকের আস্থা হলো একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বড় পুঁজি। একবার কোনো ব্যাংকের ওপর থেকে গ্রাহক আস্থা চলে গেলে ওই প্রতিষ্ঠান হাজারো চেষ্টার পরও তা টেনে তুলতে পারে না। এমনকি নাম বদল করেও এর তেমন কোনো ফল পাওয়া যায় না। এমন নজির ব্যাংকিং খাতে বর্তমানেও রয়েছে, অতীতেও ছিল। কিন্তু অনেকটা অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করা হলো দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবি ব্যাংকের ক্ষেত্রে।

মাত্র এক বছরের ব্যবধানে অনেকটা খাদের কিনারায় চলে যাওয়া এবি ব্যাংককে টেনে তুলে আনা হলো। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ দুই বছর পর ব্যাংকটি প্রথম মুনাফায় ফিরে লভ্যাংশ ঘোষণা করলো। আর্থিক বাজারের মতো পুঁজিবাজারেও তলানিতে নেমে যাওয়া ব্যাংকটি এখন জেড ক্যাটাগরি থেকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়েছে। এ অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন ব্যাংকটির প্রেসিডেন্ট এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল। তিনি ব্যাংকটিকে টেনে তুলে আনার নানা গল্প শোনালেন দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে।

রও পড়ুন…

পুঁজিবাজারে হঠাৎ লেনদেন বৃদ্ধির নেপথ্যে আইসিবি 

তারিক আফজাল বলেন, এবি ব্যাংকের ওপর গ্রাহকের আস্থা প্রায় তলানিতে নেমে গিয়েছিল। এবি ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের আস্থা ফেরানোই ছিল আমার প্রধান চ্যালেঞ্জ। আর এ জন্য শুরু থেকেই আর্থিক সূচক উন্নতি করতে সারা বছরই দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছি। একই সাথে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছি। অনেক রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিকেও ছাড় দেয়া হয়নি। অনেককেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

বাধ্য হয়ে অনেকেই ঋণ ফেরত দিয়েছেন। তাদের দেখে অন্যরাও ভয়ে ঋণ পরিশোধ করেছেন। এতে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পেরেছি। ফলে এক দিকে ব্যাংকাররা যেমন উজ্জীবিত হয়েছেন, তেমনি গ্রাহকও ব্যাংকের প্রতি আস্থা ফিরে পেয়েছেন। এ কারণে এ দুর্দিনেও এবি ব্যাংকের আমানত প্রায় ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

রও পড়ুন…

আফজাল বলেন, তিনি সামনে থেকে পরিচালনা করেছেন, আর পেছন থেকে তাকে সবধরনের সহযোগিতা ও সাহস জুগিয়েছেন এবি ব্যাংকের বর্তমান সুযোগ্য চেয়ারম্যান মুহাম্মদ এ (রুমী) আলী ও তার পর্ষদ। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও অনেক সহযোগিতা পেয়েছেন। সবমিলে সবার প্রচেষ্টাতেই ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

গত এক বছরের ব্যাংকটির বিভিন্ন আর্থিক সূচক তুলে ধরে এবি ব্যাংকের এমডি তারিক আফজাল বলেন, এবি ব্যাংক ২০১৯ সালে লক্ষণীয় ব্যবসায়িক উন্নতি করেছে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগ্য নেতৃত্বে ২০১৮ সালের ৩৩ দশমিক ০৭ শতাংশ খেলাপি ঋণ ২০১৯ শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ২৮ শতাংশে। বছর শেষে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৬৪৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের (৩০৮ কোটি টাকা) তুলনায় শত ভাগেরও বেশি।

২০১৯ সালে সাময়িক বিরূপ পরিস্থিতিতেও আমানতকারীরা তাদের আস্থা রেখেছেন ব্যাংকটির ওপর। যার কারণে ২০১৮ সালের ২৩ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকার আমানত বেড়ে ২০১৯ এর শেষে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকায়। ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ঋণ আমানত হার যথাযথভাবে পরিপালন করেছে (৮৫ শতাংশের নিচে)। এ ছাড়াও অন্যান্য তারল্য পরিমাপ- লিকুইডিটি কভারেজ রেশিও এবং নেট স্টাবল ফান্ডিং রেশিও সংরক্ষণেও ব্যাংক সফল হয়েছে। ২০১৯ সালের হিসাববিবরণী পর্যালোচনায় নিয়ে পাঁচ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, যা ব্যাংকের ভিত্তিকে মজবুত করতে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, এবি ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায়ও বদ্ধপরিকর। সামাজিক দায়বদ্ধতার দিক থেকেও ব্যাংকটি পিছিয়ে নেই, সব সময় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে। সরকারঘোষিত আর্থিক নীতির ধারাবাহিকতায় ব্যাংক তার কর্মকাণ্ড আরো বেগবান করেছে। এই করোনা দুর্যোগেও ব্যাংকের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রাহকদের নিয়মিত সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত নানা অনিয়মে ডুবতে বসেছিল দেশের বেসরকারি খাতের দ্বিতীয় প্রজন্মের এবি ব্যাংক। অর্থপাচার, ঋণ অনিয়ম, পর্ষদে অস্থিরতাসহ নানা কারণে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে এবি ব্যাংকের প্রায় সব সূচক নিন্মমুখী ছিল। বিপুল অঙ্কের অনাদায়ী মন্দমানের খেলাপি ঋণে হাবুডুবু খাচ্ছিল ব্যাংকটি। একের পর এক লোকসানে উল্লিখিত দুই বছর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশও দিতে পারেনি।

এরপর বর্তমান পর্ষদ-ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গত বছরের শুরুতে দায়িত্ব নেয়ার পর অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপালনকারী বর্তমান চেয়ারম্যান মুহাম্মদ এ (রুমী) আলী ও এমডি তারিক আফজালের নেতৃত্বে এবি ব্যাংক আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সবারই প্রত্যাশা বর্তমান ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ব্যাংকটি খুব শিগগিরই পুঁজিবাজারে ‘এ’ ক্যাটাগরির ব্যাংক হিসেবে উন্নীত হবে।

বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক এবি ব্যাংক ২০১৯ সালে লক্ষণীয় ব্যবসায়িক উন্নতি করেছে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগ্য নেতৃত্বে ২০১৮ সালের ৩৩.০৭ শতাংশ শ্রেণীকৃত ঋণ ২০১৯ শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ১৮.২৮ শতাংশে। বছর শেষে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৬৪৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের (৩০৮ কোটি টাকা) তুলনায় শতভাগেরও বেশি।

২০১৯ এর সাময়িক বিরূপ পরিস্থিতিতেও আমানতকারীরা তাদের আস্থা রেখেছেন ব্যাংকটির ওপর। যার দরুন ২০১৮ সালের ২৩,৫৪৪ কোটি টাকার আমানত বেড়ে ২০১৯ শেষে দাঁড়ায় ২৭,৯৪৬ কোটি টাকায়। ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ঋণ আমানত হার যথাযথভাবে পরিপালন করেছে (৮৫ শতাংশের নিচে)। এ ছাড়াও, অন্যান্য তারল্য পরিমাপ- লিকুইডিটি কভারেজ রেশিও এবং নেট স্টাবল ফান্ডিং রেশিও সংরক্ষণেও ব্যাংক সফল হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, ২০১৯ সালের হিসাববিবরণী পর্যালোচনায় নিয়ে পাঁচ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে ঘোষণা করেছেন যা ব্যাংকের ভিত্তিকে মজবুত করতে সহায়তা করবে।

এবি ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায়ও বদ্ধপরিকর। সামাজিক দায়বদ্ধতার দিক থেকেও ব্যাংকটি পিছিয়ে নেই, সর্বদাই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে। সরকারঘোষিত আর্থিক নীতির ধারাবাহিকতায় ব্যাংক তার কর্মকাণ্ড আরো বেগবান করেছে। এই করোনা দুর্যোগেও ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রাহকদের নিয়মিত সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।