ষ্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা:বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে  অগ্রগতি করেছে বাংলাদেশ। মহামারি করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিদেশি বিনিয়োগে। সদ্যসমাপ্ত (২০১৯-২০) অর্থবছরের (জুলাই-মে) ১১ মাসে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। অন্যদিকে দেশের শেয়ারবাজারের বিদেশিরা যে পরিমাণ বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) করেছে তার চেয়ে বেশি তুলে নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর করা হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

রও পড়ুন…

ডিএসই ৩ সিকিউরিটিজ হাউস “রেড জোনে”, দু:চিন্তায় বিনিয়োগকারীরা 

ওয়ালটন হাইটেকের আইপিওতে আবেদন শুরু ৯ আগস্ট

অবশ্য ইতোমধ্যে করোনার সংক্রমণ প্রেক্ষাপটে চলতি বছর বৈশ্বিক প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পতন হতে পারে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। একই সঙ্গে ২০২১ সালে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাড (ইউএনসিটিএডি)। আঙ্কটাড তার বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন ২০২০-এ বলছে, ২০১৯ সালে এফডিআই হয়েছিল ১ দশমিক ৫৪ ট্রিলিয়ন ডলার সমমূল্যের। এর বিপরীতে চলতি বছর এফডিআইয়ের পরিমাণ ২০০৫ সালের পর সর্বপ্রথম ১ ট্রিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসতে পারে। এছাড়া ২০২১ সালে বেসরকারি খাতে আন্তঃসীমান্তীয় বিনিয়োগ হ্রাস পেতে পারে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। ২০২২ সালের আগে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না।

এদিকে বি‌দে‌শি বি‌নি‌য়ো‌গকারী‌দের আকর্ষণে নীতিমালা সহজীকরণসহ বি‌শেষ সু‌বিধা দি‌য়ে‌ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে তা‌দের লভ্যাংশের অর্থ বাইরে না পাঠিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা (এফসি) অ্যাকাউন্ট খু‌লে রাখতে পারবে। ওই অর্থ নিজ দেশে বা অন্য দেশে নিয়ে যেতে পারবে। আবার ইচ্ছে করলে ওই অর্থ বাংলাদেশে নিজের প্রতিষ্ঠানে বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে পুনঃবিনিয়োগও করতে পারবে। মঙ্গলবার (৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে বা‌ণি‌জ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পা‌ঠি‌য়ে‌ছে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে নানা উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই শিথিলতা আনলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সিনহা সিকিউরিটিজসহ তিনটি ব্রোকারেজ হাউজে গ্রাহকের হিসাবে গড়মিল পেয়েছে ডিএসই 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাসের এ সঙ্কট পরবর্তী অর্থনীতির গতি প্রকৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। এ সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষত চীন থেকে বড় ধরনের বিনিয়োগ পাওয়ার আশায় রয়েছে সরকার। এ রকম প্রেক্ষাপটে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ নেওয়াসহ বিভিন্ন নীতিমালা সহজীকরণ করা হচ্ছে।

বর্তমান নিয়মে কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই বিদেশি বিনিয়োগকারীর লভ্যাংশের পুরোটাই নিয়ে যেতে পারেন। আগে এক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ ছিল। অবশ্য অর্থ প্রত্যাবাসনের ৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ বাংলাদেশ ব্যাংকে অবহিত করতে হয়।

‌কেন্দ্রীয় ব্যাং‌কের নতুন নি‌র্দেশনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিদেশি শেয়ারহোল্ডারের প্রদেয় লভ্যাংশ এখন থেকে এফসি হিসেব খুলে সেখানে জমা রাখা যাবে। তবে এই অর্থ যে লভ্যাংশ থেকে পাওয়া ব্যাংক থেকে তা নিশ্চিত হতে হবে। চাইলে তিনি এই অর্থ পুনঃবিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে বিনিয়োগের ১৪ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ এবং পরিসংখ্যান বিভাগকে জানা‌তে হবে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় নীতিমালার সব ধরনের নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর করা হালনাগাদ প্রতিবেদনের ত‌থ্যে দেখা গে‌ছে, মহামরি করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিদেশি বিনিয়োগে। সদ্য সমাপ্ত (২০১৯-২০) অর্থবছরের (জুলাই-মে) ১১ মাসে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। অন্যদিকে দেশের শেয়ার বাজারের বিদেশিরা বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) যে পরিমাণ করেছে তারে চেয়ে বেশি তুলে নিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের ১১ মাসে বিভিন্ন খাতে সবমিলিয়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৩৭২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, এর মধ্যে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ১৯৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যা গত অর্থবছরের চেয়ে এফডিআই কমেছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ ও নিট কমেছে ১৯ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে এফডিআই ছিল ৪৩২ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং যার মধ্যে নিট এফডিআই পেয়েছিল ২৪২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

আলোচিত সময়ে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) যা এসেছিল তার চেয়ে বেশি তুলে নিয়ে গেছেন। গত অর্থবছরেও দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কম ছিল। এবার ধস নেমেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) ছিল ১৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরের এই ১১ মাসে বিদেশিরা যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে তার থেকে ৭০ লাখ ডলার বেশি তুলে নিয়ে গেছে।