ষ্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: তারল্য সংকটের পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে প্রায় পাঁচ মাস আগে সহজ শর্তে তহবিল গঠনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আওতায় কিছু ব্যাংক তহবিল গঠন করলেও তা বিনিয়োগে আনেনি। যদিও ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়াই পুঁজিবাজার সচল হতে শুরু করেছে। ব্যক্তিশ্রেণির কয়েকজন বড় বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণে পুঁজিবাজারে লেনদেনের খরা কাটতে শুরু করেছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন ৬৮ কোটি থেকে ৩৮০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

রও পড়ুন…

ডিএসই শীর্ষ ৬ প্রভাবশালী বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগের অভিযোগ! 

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা করে তহবিল গঠন করার সুযোগ থাকলেও অধিকাংশ ব্যাংকই এখনো তা গড়ে তোলেনি। চলতি জুন মাস পর্যন্ত ১৪টি ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে।

রও পড়ুন…

তবে তহবিল গঠন করলেও উল্লেখযোগ্য কোনো বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে আসেনি। ওই তহবিল থেকে মাত্র ১৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ব্যাংকগুলোর কাছে গত সপ্তাহে তহবিল গঠন ও বিনিয়োগ স্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও তা মনিটরিং করছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত ফল মেলেনি।

এদিকে গত ২৮ জুনের পর থেকে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে পুঁজিবাজারে হঠাৎ করেই চাঙ্গাভাব দেখা যাচ্ছে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে দীর্ঘদিনের লেনদেন খরা কাটিয়ে শেয়ার কেনাবেচায় গতি আসতে শুরু করেছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেনে সচল সিকিউরিটিজের সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা শেয়ারগুলো যৌক্তিক মূল্য ফিরে পেতে শুরু করেছে।

জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ খাতের শীর্ষস্থানীয় একটি গ্রুপের চেয়ারম্যান পুঁজিবাজারে বড় ধরনের বিনিয়োগ করছেন। একই সময়ে আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট একটি কোম্পানির উদ্যোক্তারাও নিজেদের মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয় করছেন। এছাড়া বীমা খাতসহ তালিকাভুক্ত ২২ কোম্পানির পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা আরোপে এসইসির কঠোর হুঁশিয়ারির পর ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে সংশ্লিষ্ট শেয়ারও চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। এসবের প্রভাব পুরো বাজারে পড়েছে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২৫ জুন ডিএসইর লেনদেন ছিল ৬৮ কোটি টাকা, যা পরবর্তী ১১ কার্যদিবসে ৩৮০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জুলাই থেকে টানা পাঁচ কার্যদিবস সূচকের উত্থান দেখা গেছে। যদিও গতকাল মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতায় সূচক সামান্য কমেছে। তবে লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। গতকাল লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ শেয়ারের দর কমায় ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের কার্যদিবসের চেয়ে ৯ দশমিক ৯১ পয়েন্ট কমে ৪০৮৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর আগে টানা পাঁচ কার্যদিবসের উত্থানে ডিএসইর প্রধান সূচকটি ১১৮ পয়েন্ট বাড়ে।

মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) পতনে শেষ হয়েছে শেয়ারবাজারের লেনদেন। এদিন উভয় শেয়ারবাজারের প্রধান প্রধান সূচক কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে টাকার পরিমাণে লেনদেন। আর লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেশিরভাগেরই শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭.৩৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮২.১৪ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ২.০২ পয়েন্ট এবং সিডিএসইটি ২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৩৭৪.০৪ পয়েন্টে এবং ৮০৮.৭৫ পয়েন্টে। তবে শরিয়াহ সূচক ১.২৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫২.১৩ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ ২৮৯ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন থেকে ৮৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা কম। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৭৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকার।

ডিএসইতে আজ ৩৪৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৪৩টির বা ১২.৩৯ শতাংশের, শেয়ার দর কমেছে ১২০টির বা ৩৪.৫৮ শতাংশের এবং ১৮৪টির বা ৫৩.০২ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫.৫৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬০১.১৭ পয়েন্টে। সিএসইতে আজ ১৯০টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪১টির দর বেড়েছে, কমেছে ৬১টির আর ৮৮টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।