ষ্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন থাকে। কোনো শেয়ারের দর বাড়ে, আবার কমে। তবে কখনও কোনো শেয়ারের দর অস্বাভাবিক বাড়লে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নড়েচড়ে বসে। শুরু হয় চিঠি চালাচালি ও তদন্ত কমিটি। কিন্তু কোনো শেয়ারের দর তলানিতে চলে এলেও ফিরে তাকায় না ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। চলমান দরপতনে অনেক শেয়ারের দর অভিহিত মূল্যের (ফেইস ভ্যালু) কাছে চলে এসেছে। কোনো কোনো শেয়ারের দর কমেছে ৫০ শতাংশ। কিন্তু এসব কোম্পানির শেয়ারদর কমার বিষয়ে কোনো খবর নেয়নি ডিএসই। শুধু দর বাড়লে তদন্ত কমিটির বিষয় নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে বিনিয়োগকারীদের।

রও পড়ুন…

পুঁজিবাজারে এখন বিনিয়োগের সঠিক সময়, লেনদেনে চমক আসছে: বিএসইসি চেয়ারম্যান 

কিন্তু পৃথিবীর একমাত্র পুঁজিবাজার যেখানে শেয়ারের দর বাড়লেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অথচ যুক্তরাষ্ট, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান দেশের পুঁজিবাজারে একদিনে একটি শেয়ারের দর ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ারের দর বাড়ে। কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম বাড়াটা অপরাধ। শেয়ারের দাম বাড়বে কমবে এইটা একটি স্বাভাবিক ঘটনা।

রও পড়ুন…

আইপিও পর্যালোচনা স্টক এক্সচেঞ্জকে বিএসইসির হুমকি 

এছাড়া কেবল মাত্র বাংলাদেশেই এটি অস্বাভাবিক। এখানে দাম বাড়লে তদন্ত হয়, কিন্তু দর কমলে পুঁজিবাজারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নিরব থাকে। গত ১০ বছর ধরে এটি এখানে নিয়মে পরিনত হয়েছে। ২০১০ সালের পর থেকে বাজার যখন একটু স্বাভাবিক হতে শুরু করে তখনই তদন্ত খেলা শুরু হয় কেন শেয়ারের দর বাড়ল। আর তার পরই বাজার বড় ধরনের দরপতন হয়। সার্ভিলেন্স টিম রয়েছে বিএসইসি, এমনকি দুই স্টক এক্সচেঞ্জের। তারা মনিটরিং করবে কে কারসাজি করছে, কিংবা সিরয়িাল ট্রেডিং করছে। যারা অপরাধ করে তাদেরকে শাস্তি দিবে। কিন্তু তদন্ত কমিটি গঠনের নামে আতঙ্ক কেন করতে হবে।

২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে আইপিও প্লেসমেন্ট নিয়ে হাজারো কারসাজি হয়েছে, কিন্তু তার কোন তদন্ত হয়নি। অভিযোগ আছে, যারা কারসাজির সাথে জড়িত ছিল, তারাই এখন বিএসইসিকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে যখন কোন শেয়ারের দাম বেড়েছে, তার পরই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে জরিমানা। কিন্তু আশ্চার্যজনক বিষয় হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার নামে তদন্ত কমিটির কথা বলা হলেও এসব কমিটি গঠনের পর পুঁজিবাজার মুখ থুবড়ে পড়ছে। যেমনটি পড়ল আজ।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, যখন কোনো কোম্পানির দর বাড়ে তখন ডিএসই এবং সিএসই থেকে নোটিস দেওয়া হয়। জবাব পাওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা সচেতন হয়। কিন্তু দর কমার সময় তলানিতে নেমে গেলেও ওই কোম্পানি সম্পর্কে কোনো সংস্থার উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না। তাতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়োগকৃত টিম বাজারে ঘুরে বেড়ায়। তারা কোনো কোম্পানির দর কেন বাড়ছে, কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আছে কিনা, তাছাড়া ইনসাইডার ট্রেডিং হচ্ছে কিনা এসব বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখে। কিন্তু তারা তাদের পরিচয় গোপন রাখে। কোনো অনিয়ম পেলেই তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়। এমন কোনো টিম আমাদের দেশে গঠন করতে পারলে বাজারে আরও বেশি স্বচ্ছতা ফিরে পেত। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের স্বার্থে এমন কোন কাজ করা উচিত নয় যাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেছেন, অর্থনীতির অন্যতম খাত পুঁজিবাজারও করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সংকটে পড়েছে। এমন অবস্থায় যদি শেয়ারের দাম বাড়াটা অপরাধ হয় তাহলে পুঁজিবাজারে কেউ আসবে না।