ষ্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘদিন থেকেই অস্থিরতা পুঁজিবাজারে। বিনিয়োগকারীদের দাবি ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তনের। তবে অনেক পরে হলেও পরিবর্তন হয়েছে। গত ১৪ মে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর এম খায়রুল হোসেনের মেয়াদ শেষ হয়। আর তার স্থলাভিষিক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডীন প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। করোনা মহামারির মধ্যে যোগদান করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগাকারীদের আস্থা ফেরাতে গতিশীলতা আনতে নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও আগের ধারা পরিবর্তন করতে পারছিলেন না বর্তমান চেয়ারম্যান।

রও পড়ুন…

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা প্রতিষ্ঠা জরুরি 

তবে তার গতিশীল নেতৃত্বে ও নানামুখী পদক্ষেপে ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় পরিণত হচ্ছে পুঁজিবাজার। মহামারি প্রকোপ চললেও আতঙ্ক দূরে ঠেলে স্বাভাবিক হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। দেখা মিলছে বড় উত্থানের। একই সঙ্গে গতি বাড়ছে লেনদেনেও। বাজেটে বিনা শর্তে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ায় পুঁজিবাজার সামনে আরও গতিশীল হবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

রও পড়ুন…

সম্প্রতি বিএসইসি চেয়ারম্যান বাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ঘোষণা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে পুঁজিবাজারে খারাপ আইপিও তালিকাভুক্ত হবে না বলেও বিনিয়োগকারীদের অভয় দিয়েছেন। একই সঙ্গে কোম্পানিগুলো যেন কয়েক ধরনের আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করতে না পারে সে পদক্ষেপ নিয়েছেন। ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) এর মাধ্যমে একটি কমন প্লাটফর্ম তৈরির কথা বলেছেন। এছাড়া শৃঙ্খলা ফেরাতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২২টি কোম্পানির ৬১ পরিচালককে ন্যূনতম শেয়ার ধারণ নিয়ে ৪৫ দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করলে এসব পরিচালককে পদ অপসারণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ আইন অনুযায়ী নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পূর্বের মতো নির্ধারিত সময়ে কোম্পানিগুলোর মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের (পিএসই) সকল কার্যক্রম এবং এজিএম ও ইজিএম করার নির্দেশ দিয়েছে।

রও পড়ুন…

ফ্লোর প্রাইস নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ নেই: অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত 

পৃথিবীর একমাত্র পুঁজিবাজারে শেয়ারের দর বাড়লেই তদন্ত! 

পুঁজিবাজারে এখন বিনিয়োগের সঠিক সময়, লেনদেনে চমক আসছে: বিএসইসি চেয়ারম্যান

বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, করোনার কারণে কিছুটা স্থবিরতা এসেছিল। নতুন কমিশনাররা বিনিয়োগকারীদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে নিয়ম-কানুন মানায় গুরুত্ব দিয়েছেন। করপোরেট গভরন্যান্সে জোর দিয়েছেন। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ এবং অর্থ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাজারের ওপর মানুষের আস্থা ফিরেছে।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে ৮০ ভাগ স্থানীয় বিনিয়োগ। এই ধারা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগিরই বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।আশাকরি শিগরিই ৫শ’ কোটি টাকা ছাড়াবে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এতোদিন যে আস্থার যে ফাটল ছিল, তা ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে বলে উল্লেখ করেন প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত।

এদিকে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার উত্থানে শেষ হয়েছে শেয়ারবাজারের লেনদেন। এদিন উভয় শেয়ারবাজারের সব সূচক বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে টাকার পরিমাণে লেনদেন। তবে লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেশিরভাগেরই শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪.১৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮০.৯৩ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১.০৩ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২.৬৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯৪৬.৪১ পয়েন্টে এবং ১৩৭৪.৫৮ পয়েন্টে। আর সিডিএসইটি ০.৪০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৮০৬.০৯ পয়েন্টে। ডিএসইতে আজ ২৬২ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন থেকে ১৫ কোটি ৪ লাখ টাকা বেশি। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকার।

ডিএসইতে আজ ৩৪৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৯১টির বা ২৬.৪৩ শতাংশের, শেয়ার দর কমেছে ৬৭টির বা ১৯.৫৩ শতাংশের এবং ১৮৫টির বা ৫৩.৯৩ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৪.২৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬২২.২৩ পয়েন্টে। সিএসইতে আজ ২০১টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৪টির দর বেড়েছে, কমেছে ৪৮টির আর ৯৯টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।