দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের সিগারেটের বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি ব্যাটবিসি বাংলাদেশের হাতে। সিগারেট ব্যবসায় কোম্পানিটির ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি রয়েছে। তবে করোনা সংকটের কারণে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিএটির উৎপাদিত সিগারেট বিক্রি ১২ শতাংশের বেশি কমে গেছে। এতে করে কোম্পানির রেভিনিউ কিছুটা কমেছে। তবে অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে গোঁজামিল দিয়ে নিট মুনাফা বাড়িয়ে দেখিয়েছে কোম্পানিটি। চলতি প্রথমার্ধের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।

রও পড়ুন…

বিএটি বাংলাদেশের চলতি প্রথমার্ধের (জানুয়ারি-জুন) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেওয়া বিভিন্ন তথ্যে অসামঞ্জস্যতা দেখা গেছে। চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) কোম্পানির বিক্রীত পণ্যের বিপরীতে উৎপাদন ব্যয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ কমিয়ে দেখানো হয়েছে। আর পরিচালন ব্যয় কমিয়ে দেখিয়েছে ৮৪ শতাংশ, যা অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) যে পরিচালন ব্যয় দেখানো হয়েছে, প্রথম ছয় মাসের হিসাবে তা আরও কমিয়ে দেখিয়েছে।

রও পড়ুন…

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা প্রতিষ্ঠা জরুরি

চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাটবিসি বাংলাদেশের সিগারেট বিক্রি থেকে নিট আয় হয়েছে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৭ শতাংশ কম। এ সময়ে বিক্রীত পণ্যের বিপরীতে উৎপাদন খরচ ব্যাপক হারে কমিয়ে আনার তথ্য দিয়েছে তারা। চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে উৎপাদন ব্যয় হয় ৫২৭ কোটি টাকা, যা বিক্রির ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৯ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিক্রির বিপরীতে উৎপাদন ব্যয় ছিল ৫৫ শতাংশ। এ হিসাবে কোম্পানির উৎপাদন ব্যয় কমেছে ২৪ শতাংশ। একইভাবে পরিচালন ব্যয় ৮৪ শতাংশ কমিয়ে দেখানো হয়েছে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে।

রও পড়ুন…

টিকটক লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীর তথ্য চুরি করেছে ! 

বিএটির পরিচালন ব্যয়ে উল্লেখযোগ্য খরচ হয় বেতনভাতা, পণ্যের বাজারজাত, বিপণন, কারিগরি ও পরামর্শক ফি, বাজার গবেষণা ও পরিচালন, অবচয়, মেরামত ইত্যাদিতে। ২০১৯ সালের হিসাবে এ খাতে প্রতি প্রান্তিকে ন্যূনতম ২০০ কোটি টাকা ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে পরিচালন ব্যয় দেখানো হয়েছে মাত্র ৩৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২২৬ কোটি টাকা।

উৎপাদন ও পরিচালন ব্যয় অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ার কারণে চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিএটি বাংলাদেশের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৬৯৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৯৪ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে সুদবাবদ ব্যয়ও কমেছে। মুনাফায় শ্রমিকের হিস্যা ও সুদ ব্যয়ের পর কর-পূর্ববর্তী মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৬৫৭ কোটি টাকা। আয়কর পরিশোধের পর চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিএটি বাংলাদেশের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২৯৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ শতাংশ বেশি।

এদিকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যয় কমিয়ে দেখানোর প্রভাব বিএটির প্রথমার্ধের প্রতিবেদনেও পড়েছে। চলতি প্রথমার্ধে কোম্পানির বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৭০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কোম্পানি উৎপাদন ব্যয়ও কমিয়ে এনেছে। চলতি প্রথমার্ধে বিক্রির বিপরীতে উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রথমার্ধের পরিচালন ব্যয়ের তথ্যেও অসামঞ্জস্যতা দেখা গেছে।

চলতি প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির পরিচালন ব্যয় হয় ২৭৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আর দ্বিতীয় প্রান্তিকে পরিচালন ব্যয় দেখানো হয় ৩৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে দুই প্রান্তিকে পরিচালন ব্যয় হওয়ার কথা ৩১৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অথচ বিএটি তাদের প্রতিবেদনে প্রথমার্ধের পরিচালন ব্যয় দেখিয়েছে ২৬০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৫১ কোটি টাকা। উৎপাদন ও পরিচালন খাতে ব্যয় কমিয়ে দেখানোর কারণে প্রথমার্ধে কোম্পানির মুনাফায় উল্লম্ফন দেখা গেছে। এ সময় নিট মুনাফা হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।

অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে নানা অসংগতির বিষয়ে বিএটি বাংলাদেশের কোম্পানি সচিব আজিজুর রহমান বলেন, কর্মীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চুক্তিভিত্তিক, যারা কভিডের সময় নিয়মিত ছিলেন না। পরিচালন ব্যয়ের খাতে কর্মীদের বেতনের বাইরে আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেগুলোতে করোনার সময়ে ব্যয় সম্ভব হয়নি। এসব ব্যয় পরবর্তী প্রান্তিকে সমন্বয় করা হবে। প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় অর্ধবার্ষিকীতে পরিচালন ব্যয় কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথম প্রান্তিকে উৎপাদন ব্যয়ের ৫৫ কোটি টাকা পরিচালন ব্যয়ের খাতে হিসাব করা হয়েছিল। এটি প্রথমার্ধে সমন্বয় করা হয়েছে।

এদিকে করোনার প্রভাবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাটবিসি সিগারেট শলাকা বিক্রি কমেছে ১২ শতাংশের বেশি। এ সময়ে কোম্পানিটি মোট ১ হাজার ১৮৯ কোটি শলাকা সিগারেট বিক্রি করে, যা আগের বছরের একই সময়ে সিগারেট বিক্রি ছিল ১ হাজার ৩৫৩ কোটি শলাকা। তবে বিক্রি কমলেও সরকারিভাবে তামাক পণ্যে করহার বৃদ্ধির সুবিধা কোম্পানিও পেয়েছে। এ কারণে বিক্রির তুলনায় কোম্পানির নিট রেভিনিউ একই হারে কমেনি।