দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ২০১৯ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতায় ধাবিত হয়। চলতি বছরের মার্চ থেকে মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে ওঠে। এদিকে গত দুই বছর যাবত পুঁজিবাজারে নিট বিদেশী বিনিয়োগও ছিল ঋণাত্মক। এ সময়ে বিদেশীরা শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করেছেন বেশি।

রও পড়ুন…

সপ্তাহজুড়ে বীমা খাতে ঝড়, দরপতনের শীর্ষে ৪ কোম্পানি 

আবার কভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ৬৬ দিন পুঁজিবাজার বন্ধ থাকায় বেশকিছু বিদেশী বিনিয়োগকারী বাজার চালু হলে শেয়ার বিক্রি করে দেবেন, এমন ইচ্ছার কথাও জানিয়েছিলেন। তবে এর পরও বিদেশী বিনিয়োগ বিবেচনায় শীর্ষ তালিকাভুক্ত ১০ কোম্পানিতে বিদেশীদের শেয়ার ধারণের হারে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ বছরের জুলাই শেষে ব্র্যাক ব্যাংকে সবচেয়ে বেশি ৪২ দশমিক ১৭ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগ ছিল। জুনে ব্র্যাক ব্যাংকে বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ৪২ দশমিক ৪২ শতাংশ। করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকটিতে ৪৩ দশমিক ২ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগ ছিল।

রও পড়ুন…

পুঁজিবাজারে হঠাৎ বিদেশী বিনিয়োগের হিড়িক 

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিংয়ে (ডিবিএইচ) চলতি বছরের জুলাই শেষে বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ৪০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আগের মাসেও ব্যাংকটিতে বিনিয়োগ ছিল সমান। আর ফেব্রুয়ারিতে ডিবিএইচে বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ৪১ দশমিক ২ শতাংশ।

খাদ্য খাতের শীর্ষ কোম্পানি অলিম্পিকে এ বছরের জুলাই শেষে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এর আগের মাসে যা ছিল ৪০ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর করোনার আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানিটিতে বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ৪০ শতাংশ।

ওষুধ খাতের অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসে জুলাই শেষে ৩৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগ ছিল। এর আগের মাসে কোম্পানিটিতে বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ৩৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আর এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকে এ বছরের জুলাই শেষে ২৩ দশমিক ২৩ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগ ছিল। এর আগের মাসে যা ছিল ২৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর এ বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংকটিতে বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণে কোনো পরিবর্তন হয়নি ওষুধ খাতের কোম্পানি রেনাটায়ও। এ বছরের ফেব্রুয়ারি, জুন ও জুলাইয়ে কোম্পানিটিতে বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ২২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। বস্ত্র খাতের কোম্পানি এমএল ডায়িংয়ে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণও অপরিবর্তিত ছিল। কোম্পানিটিতে এ বছরের ফেব্রুয়ারি, জুন ও জুলাই শেষে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

বস্ত্র খাতের আরেক কোম্পানি শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজে করোনার আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ। জুনে এসে তা কিছুটা কমে ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশে দাঁড়ায়। সর্বশেষ জুলাই শেষেও কোম্পানিটিতে বিদেশী বিনিয়োগ একই ছিল।

ওষুধ খাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগ ছিল। জুনে তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৬ শতাংশে। আর সর্বশেষ জুলাই শেষে কোম্পানিটিতে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

বস্ত্র খাতের কোম্পানি ভিএফএস থ্রেড ডায়িংয়ে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ অপরিবর্তিত ছিল। এ বছরের ফেব্রুয়ারি, জুন ও জুলাইয়ে কোম্পানিটিতে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগ ছিল।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা মূলত দীর্ঘমেয়াদের জন্য বিনিয়োগ করে থাকেন। আবার কিছু বিদেশী বিনিয়োগকারী রয়েছেন যারা স্বল্পমেয়াদে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা বেশি নয়।

বিদেশীরা আমাদের পুঁজিবাজারে সম্ভাবনার দিকটি বিবেচনা করেই শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিনিয়োগ ধরে রেখেছেন। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর জুমের মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা দীর্ঘমেয়াদে আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছেন।

এদিকে দেশের পুঁজিবাজারে সার্বিক বিদেশী বিনিয়োগের চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ বছরের জুন শেষে নিট বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক ৭৬৬ কোটি টাকা। জুনে বিদেশীরা ২ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকার শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেছেন ৩ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। আর এ সময়ে বিদেশীরা পুঁজিবাজারে মোট ৬ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন। যা পুঁজিবাজারের মোট লেনদেনের ১৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট ও ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, শীর্ষ কোম্পানিতে গত কয়েক মাসে বিদেশী বিনিয়োগ খুব একটা কমেনি। প্রকৃতপক্ষে বিদেশীদের শেয়ার বিক্রির বড় অংশই হয়েছে গত বছরে। তাছাড়া তারা সব ধরনের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন না। শুধু বাছাই করা ভালো কিছু কোম্পানিতেই বিদেশীদের বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ।

আর এ ধরনের কোম্পানিগুলোর ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকে। সম্ভাবনা রয়েছে বলেই বিদেশীরা এখনো এসব কোম্পানির শেয়ার ধরে রেখেছেন। তাছাড়া কভিডের কারণে পুঁজিবাজারের যে প্রভাব সেটি কিন্তু কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে পুঁজিবাজার আরো ভালো হবে। সে সঙ্গে বিদেশী বিনিয়োগও বাড়বে বলে আমি মনে করি। সূত্র: বণিকবার্তা।